চাষী নজরুল ইসলাম আর আমাদের মাঝে নেই। তাকে হারিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া।
চাষী আঙ্কেলের সঙ্গে আমার পরিচয় এফডিসিতে। সেখানে তার পরিচালনায় প্রথম কাজ করেছি ‘মেঘের পরে মেঘ’ ছবিতে। এ কাজটা আমার কাছে ছিলো পুরস্কারের মতোই। এর বিষয়বস্তু ছিলো মুক্তিযুদ্ধ। এজন্য সে সময় গ্রামীণ মেয়ের সাজে আমার একটি সাদাকালো স্থিরচিত্র তোলা হয়। সেটি এতই পছন্দ ছিলো যে, তিনি নিজের মানিব্যাগে কয়েক বছর রেখে দিয়েছিলেন। এরপর এফডিসিতে তার সঙ্গে দেখা হলেই জানতে চাইতাম, আমার ছবিটি কোথায়, রেখেছেন তো? তিনি মানিব্যাগ বের করে দেখিয়ে বলতেন, ‘এই যে তোমার ছবি মানিব্যাগে নিয়ে ঘুরছি!’
‘সুভা’ ছবির পরও তার পরিচালনায় আরও কয়েকটি ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু অন্য কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। কাজ করতে গিয়ে তার সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। আমাদের বাসায় যে কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তিনি চলে আসতেন। আমার বিয়ে এমনকি আমার সন্তান হওয়ার পর তিনি সবার আগে হাসপাতালে গিয়েছিলেন।
চাষী আঙ্কেলের সঙ্গে আমার প্রতিটি কাজই ছিলো উল্লেখযোগ্য। দৃশ্যধারণের আগে তিনি কাজটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিতেন। তার পরামর্শগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করতাম। মনের মতো কিছু না হলে রাগ করতেন তিনি। তবে ওই রাগ বেশিক্ষণ থাকতো না। রাগ শেষ হওয়ার পর যার সঙ্গে রাগ করেছেন তাকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন। এ বিষয়টি আমরা বেশ উপভোগ করতাম।
চাষী আঙ্কেল আমাকে ডাকতেন ডার্লিং নামে। আর আমি তাকে সুইটহার্ট বলে ডাকতাম। তিনি হাসপাতালে ভর্তির পর আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। ফোন করে তাকে বলেছিলাম, ‘আঙ্কেল আমি পূর্ণিমা। কেমন আছেন? তার দরাজ কণ্ঠটা সেদিন আমার শোনা হয়নি। শুধু উত্তরে বলেছিলেন, ‘ও তুই! কেমন আছিস? দোয়া করিস। ভুল হলে মাফ করে দিস। ’
চাষী ভাই আর সেদিন আগের মতো অনেক কথা বলেননি। কেমন যেন চুপচাপ মনে হচ্ছিল তাকে। তখনই আমার মনটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। ১১ জানুয়ারি তার মৃত্যুর খবর শুনে চোখে জল চলে এসেছিলো। মনে হলো, পরিবারের কাছের কাউকে হারালাম।
অনুলিখন : কামরুজ্জামান মিলু
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪,২০১৫