সারাদিন কাজ করার পরও ছেলেটার মুখে হাসি লেগেই থাকে। তার কথা শুনলে মন ভালো হয়ে যায় অনেকের।
তিন ভাই এখন অভিনেতা হলেও ছোটবেলায় এমন কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। সমাপ্তির ভাষায়, ‘কীভাবে যেন তা হয়ে গেছে! তবে আমিও ছোটবেলা থেকেই থিয়েটার করতাম। আর্তনাদ নামে সেই থিয়েটারের গুরু ছিলেন (শহীদুল আলম) সাচ্চু চাচা। এখানে অভিনেতা জগলুল ভাই আর আনিসুর রহমান মিলন ভাইও কাজ করেছেন। ’
বেশিরভাগ অভিনয়শিল্পী প্রথমে মঞ্চ, তারপর টিভিতে ডালপালা ছড়ান। কিন্তু সমাপ্তির বেলায় ঘটেছে উল্টোটা। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালে বিটিভিতে খ. ম. হারুনের প্রযোজনায় ‘সংকিত পদযাত্রা’ নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এটা ১৯৯২-৯৩ সালের কথা। এরপর মঞ্চে ১৩-১৪ বছর টানা কাজ করেছেন। সমাপ্তি বললেন, ‘থিয়েটারে কাজ করতে গিয়ে অনেক কিছু শিখেছি। সাচ্চু চাচার হাত ধরেই আমার শেখা। তবে পরিবারও আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। ’
ভাইদের মধ্যে মেজ সমাপ্তির বাবা ফিরোজ আলম সরকারি চাকরি করতেন। মা আফরোজা নাসরিন গৃহিণী। ঢাকা কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। কিছুদিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন। এরপর অভিনয়ে মনোযোগী হওয়ায় অন্য কোথাও আর চাকরি করেননি তিনি। ২০০৫ সালে রিংগোর পরিচালনায় ‘সুতোরন্তু’ ও ‘নিশিকাব্য’ নাটকে অভিনয় করেন। সমাপ্তি জানালেন, ‘তখন আমাদের পাশাপাশি শামস সুমন, টনি ডায়েস, শ্রাবন্তী অভিনয় করেছিলেন। আমাদের নাটকের দৃশ্যধারণ হয়েছিলো ভারতে। সেদিনগুলো ছিলো বেশ আনন্দদায়ক। ’
এরপর থেকে সমাপ্তির কাজের সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরিচালক ফেরদৌস হাসান রানার প্রতিদিনের ধারাবাহিক ‘মহানগর’, বদরুল আনাম সৌদের টেলিছবি ‘গিনিপিগ’, ‘এলেবেলে’, ‘গহীনে’ ধারাবাহিক নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন তিনি। তার অভিনীত ধারাবাহিক নাটকের তালিকায় আরও আছে মাসুদ সেজানের ‘লং মার্চ’, রুলিন রহমানের ‘নিসর্গ’, শহীদুজ্জামান সেলিমের ধারাবাহিক ‘ডিবি’, জামিল হোসেনের ‘উত্তর পুরুষ’, মনজুরুল হাসান মিলনের ‘সুখপাখি আগুন ডানা‘, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের ‘প্যাভিলিয়ন’, আলভী আহমেদের ‘শূন্য থেকে শুরু’, আরিফ খানের ‘দলছুট প্রজাপতি’ প্রভৃতি। আগামীতে জামাল মল্লিকের ‘স্বপ্ন’, মাসুদ সেজানের ‘চলিতেছে সার্কাস’ এবং সরদার রোকনের ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’ ধারাবাহিক নাটকে দেখা যাবে তাাকে।
ধারাবাহিক নাটকের পাশাপাশি অনেক একক নাটকে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য চয়নিকা চৌধুরীর ‘যদিও সন্ধ্যা’, ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের ‘আমি কিছু বলতে চাই’, মাসুদ সেজানের ‘নিজস্ব সম্পত্তি’, বিপ্লব পালের ‘বাতাসা’, দীপু হাজরার ‘লাভ ম্যারেজ’, আলভির ‘দিক শূন্যপুর’ প্রভৃতি। এ ছাড়া আরও কয়েকটি নতুন নাটকে কাজের কথা চলছে। সমাপ্তির ইচ্ছে, মানসিক প্রতিবন্ধী এবং গ্যাংস্টার চরিত্রে অভিনয় করা।
নাটকের বাইরে অমিতাভ রেজার নির্দেশনায় ‘বাংলালিংক’ এবং রুমেলের নির্দেশনায় ‘গাজী টায়ার’ পণ্যের বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন। বাকি রইলো চলচ্চিত্র। সেটার কী খবর? উত্তরে সমাপ্তির স্বীকারোক্তি, ‘চলচ্চিত্রের জন্য নিজেকে এখন ফিট মনে করি না। যতদূর এসেছি, ভালোই মনে হচ্ছে। আসলে আমি মানুষটা একটু অলস প্রকৃতির। না হলে হয়তো আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। তবে অলস হলেও কাজে ক্লান্তি নেই আমার। ’
নাম সমাপ্তি হলেও কাজের বেলায় তিনি নিজেকে শতভাগ উজাড় করে দিয়ে এসেছেন, আগামীতেও দেবেন। তার এই স্পৃহা অটুট থাকুক।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৫