ডুবন্ত কাউকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ক‚লে পৌঁছে দিলো যে ডলফিন, ক‚লে পৌঁছে বিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিটি যদি ওই ডলফিনকেই হত্যা করে, তাহলে কি সেটা মনুষ্যত্ব? হত্যার কারণ, পাছে যদি ডলফিনটি অন্য কোনো ডুবন্ত যাত্রীকে রক্ষা করে। ব্যাপারটি হয়েছেও তা।
মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় প্রযোজিত ‘প্রমিথিউস’ নাটকের গল্প এটি। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করছেন সামিউল জীবন। প্রমিথিউস চরিত্র হয়ে অভিনেতা সামিউল জীবন কখনও মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছেন সভ্যলোকে, কখনও অপেক্ষা করছেন জিউস পুত্র হারকিউলিসের আসার অপেক্ষায়, জিউসের হাত থেকে আইয়োকে রক্ষা করতে কখনওবা শুরু করেছেন প্রাণপণ লড়াই।
একই চরিত্র প্রমিথিউস হয়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপ-রস-অভিব্যক্তি তুলে ধরার সক্ষমতায় সামিউল জীবন সবিশেষ কৃতজ্ঞ নির্দেশক মোস্তাফিজুর নূর ইমরানের কাছে। জীবন বলেন, ‘কাল্পনিক দৃশ্যের বাস্তবায়ন করে কিংবা যোগাযোগের ভাষা হয়ে উঠতে একজনের অভিনেতার কি করণীয় তা নির্দেশকের কাজ থেকে শিখেছি। ’
গ্রিক দর্শন নিয়ে লেখা স্কাইলাসের নাটকের ভিত্তিতে আনন জামানের যে রচনা তা-ও বুঝতে এবং বোঝাতে সামিউল জীবনের পথপরিক্রমা নান্দনিক ও পরিশ্রমী। কখনও সীমিত পরিসরে গ্রিক পূরাণ অধ্যয়ন, ট্রয় প্রভৃতির মতো গ্রিসের জীবনযাত্রা ভিত্তিক চলচ্চিত্র দর্শন, আনন জামানের সঙ্গে বাক্যের অন্তরালের কথার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের সুবাদে বোঝাপড়া প্রভৃতির মধ্যে দিয়ে সামিউল জীবন চরিত্রকে বুঝেছেন এবং বুঝিয়েছেন। তার কথায়, ‘মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের দলপ্রধান মীর জাহিদ নানাভাবে প্রমিথিউসের মতো চরিত্রকে ধারণ এবং বহনের জন্য যে উৎসাহ দিয়েছেন তা ভাবতেই আমার ভালো লাগে। সহশিল্পী পলি বিশ্বাসের সঙ্গে অভিনয়ের সমীকরণ আমাকে উজ্জীবিত করে। ’
কুয়াশার ওপারে কিংবা ধূলির ওপার থেকে চরিত্র অনুসন্ধানে প্রখর চাহনি নিয়ে তাকানোর কৌশল সামিউল জীবনকে অভিনেতা হিসেবে জীবন্ত করে তুলেছে বলেই তার আপাত বিশ্বাস। দলীয় প্রযোজনা ‘প্রমিথিউস’, ‘শিখন্ডী কথা’, ‘নিশিমন বিসর্জন’, ‘জাগো’ প্রভৃতি নাটকে সামিউল জীবন একজন নির্ভরযোগ্য অভিনেতা। মঞ্চ-টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র মাধ্যম যা-ই হোক না কেনো, অভিনয়ের মাধ্যমে জীবনের কথা, প্রাণের কথা প্রাণবন্ত ও মরমীয়ভাবে ফুটিয়ে তুলতে ব্যাকুল অভিনেতা সামিউল জীবন।
বাংলাদেশ সময় : ১৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫