ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

তারার ফুল

যেসব কারণে আলোচিত ‘শামিতাভ’

বৃষ্টি শেখ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫
যেসব কারণে আলোচিত ‘শামিতাভ’ ‘শামিতাভ’ ছবিতে ধানুষ ও অমিতাভ বচ্চন

অমিতাভ বচ্চনের নামের প্রথম অংশ আর ধানুষের নামের ইংরেজি শেষ দুই অক্ষর মিলিয়ে হয় ‘শামিতাভ’। ছবির জন্য এ নামটা বাছা হলো কেনো? উত্তর দিয়েছেন বিগ বি- ‘ছবিটির গল্পটাই এমন যে, ধানুষ আর আমার চরিত্র দুটি একে অপরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।

সেজন্যই এমন নাম। ’

 

আর. বালকির সঙ্গে এটি অমিতাভের তৃতীয় ছবি। এর আগে ‘চিনি কম’ এবং ‘পা’ ছবিতে তারা একজোট হয়েছিলেন। ‘চিনি কম’-এ অসম প্রেম করতে হয়েছে বিগ বিকে। আর ‘পা’তে নিজের ছেলেরই ছেলে সাজতে হয়েছে তাকে! এবারও অমিতাভকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছেন বালকি। ইলাইয়ারাজার সুর-সংগীতে টয়লেট কমোডে বসে গানও গাইতে হয়েছ তাকে। ‘পা’ নাকি ‘শামিতাভ’ কোন ছবিতে অভিনয় করাটা বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিলো? অমিতাভের উত্তর, ‘দুটি চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং। আমার জন্য সব চরিত্রই আলাদা আলাদা। কোনোটাকেই হালকাভাবে নেই না। কোন চরিত্রকে কীভাবে ফুটিয়ে তুলব, রোজ তা নিয়ে ভাবি। ’

‘শামিতাভ’-এর গল্পে অমিতাভ ও ধানুষের চরিত্র কেউ কাউকে চেনে না। তাদের দু’জনের প্রতিভা একে অপরের পরিপূরক যেটা অক্ষরা হাসানের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে একটা দ্ব›দ্ব তৈরি হয়। অমিতাভের চরিত্রটি ভীষণ হতাশাগ্রস্ত বৃদ্ধের। নিজের জীবন নিয়ে সে নাখোশ। পাশাপাশি লোকটা মদ্যপও। বাস্তবে কিন্তু তিনি মদ্যপান করেন না। কিন্তু তার মদ্যপ দৃশ্যগুলো দেখলে অবাক হতে হয়। এজন্যই চার দশক ধরে সেরা অভিনেতার আসনে তিনি। একুশ শতকের গোড়ার দিকেই নিজেকে নতুন করে ভেঙে গড়েছিলেন অমিতাভ। এজন্য অবশ্য নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন ৭২ বছর বয়সী এই কিংবদন্তি, ‘এখনও চ্যালেঞ্জিং সব চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। আমি সুযোগ পেয়ে ঠিক সময়ে সেগুলোর সদ্ব্যবহার করেছিলাম। আমি কাজ করতেই ভালোবাসি, কমবয়সী অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করতে তো আরও ভালো লাগে! আমার ভাগ্য ভালো লোকে আমার ছবিগুলোকে ভালোবেসেছে। ’ 

ভক্ত আর শুভাকাক্সক্ষীদের ভালোবাসার প্রতিদান দিতে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে নিয়মিত ঘোরেন অমিতাভ। এর স্বীকৃতি হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়া পার্সন অব দ্য ইয়ার ট্রফি পেয়েছেন তিনি। নিজের গন্ডি এবার আরও বাড়াচ্ছেন অমিতাভ। এবারের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ধারাভাষ্যকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছেন তিনি। ১৫ ফেব্রয়ারি অ্যাডিলেডে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে শোনা যাবে তার দরাজ কণ্ঠ। এজন্য বেশ নার্ভাস তিনি। তথ্যটি দিয়েছেন এ ছবির অন্যতম প্রযোজক তারই পুত্র অভিষেক বচ্চন। অবশ্য ধারাভাষ্যের উদ্দেশ্য ‘শামিতাভ’-এর প্রচার করা। বিগ বি’র এই অংশগ্রহণ ছবিটির দর্শক বৃদ্ধি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তির পর এখন পর্যন্ত এটি আয় করেছে ১৬ কোটি রুপিরও বেশি।  

অভিনেতা হলেও ‘কোলাভেরি ডি’ গান গেয়েই সারাদুনিয়ায় সাড়া ফেলেছিলেন ধানুষ। এই গানেই তার পরিচিতি বেড়েছে। তিনি হলেন সুপারস্টার রজনীকান্তের জামাই। ‘শামিতাভ’-এ আরেক সুপারস্টার অমিতাভের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করলেন ৩১ বছর বয়সী এই অভিনেতা। এ যাত্রায় বিগ বিকে তিনি ভালোই টক্কর দিয়েছেন বলে মনে করছেন বোদ্ধারা। ‘রাঞ্ঝানা’র পর বলিউডে এটা ধানুষের দ্বিতীয় ছবি। আগের ছবিটাও অমিতাভ দেখেছেন। ধানুষকে নিয়ে তার মূল্যায়ন, ‘চমৎকার শিল্পী! নিষ্ঠাবান আর পেশাদারও। ’

দৃশ্যধারণের সময় অমিতাভ বা ধানুষ কেউই দেরি করতেন না। যদি সকাল আটটায় কলটাইম থাকতো তাহলে সাড়ে সাতটার মধ্যে দু’জনই চলে আসতেন। রসিকতা করে ধানুষ বলেন, ‘বালকি যে ছবির পরিচালক, সেখানে কেউ দেরি করে সেটে আসতে পারে না!’ আর ৭২ বছর বয়সী অমিতাভের ভাষ্য, ‘এটা আর এমন কি কঠিন কাজ? কল শিটে লেখা থাকে কখন পৌঁছাতে হবে। ’

‘শামিতাভ’-এ অমিতাভ থাকায় ধানুষ স্নায়ুচাপে ভুগবেন, আলাদাভাবে নিজের সেরা কাজটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। ‘না-না। বরং অনেক কিছু শিখলাম। তিনি প্রতিটি ছবিকে ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে নেন। দৃশ্য ছোট হোক বা বড়, খুব মনোযোগ দেন। মনে হয় যেন প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন! এটা দেখে আমিও শিখলাম। অমিতজি সবসময় বাকি অভিনেতাদের কাজ সহজ করে দেন। আমাদের একসঙ্গে কোনো দৃশ্যের আগে বলে নিতেন, ‘আমি যদি দৃশ্যটা এভাবে করি, তাহলে হবে তো!’ একজন কিংবদন্তি এতোটা বিনয়ী হতে পারেন ভাবা যায় না!’

‘রাঞ্ঝনা’ আর ‘শামিতাভ’-এ ধানুষের চরিত্র দুটি পুরোপুরি আলাদা। এটা কিন্তু তিনি সচেতনভাবে করেননি! তাকে মানাবে এমন চরিত্র চাইছিলেন শুধু। চরিত্রটির জন্য প্রথম পছন্দ ছিলেন শাহরুখ খান। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তবে এ নিয়ে ভাবেননি ধানুষ। তার বক্তব্য, ‘আমার কাছে এখানে প্রতিটি দৃশ্যই ছিলো চ্যালেঞ্জ। আমার ক্যারিয়ারের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কঠিন চরিত্র এটা। ’

আনুষ এ পর্যন্ত ২৮টি ছবিতে অভিনয় করেছেন, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মসলাদার ছবিও আছে। তিনি বলিউডের ছবিও দেখেন। সর্বশেষ ‘পিকে’ দেখে খুব ভালো লেগেছে তার। এজন্য একবার দেখে পরে আবার দেখতে গিয়েছিলেন প্রেক্ষাগৃহে। রজনীকান্ত এবং কমল হাসানের মতো দক্ষিণী সুপারস্টারেরা হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু বলিউডে সেভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাননি। ধানুষ পাবেন কি-না তা সময়ই বলে দেবে। আপাতত তিনি বলেছেন, ‘আমি ভাষার ভিত্তিকে ছবি নির্বাচন করি। আমার কাছে চিত্রনাট্যই আসল, সেটা যে ভাষারই হোক না কেনো। আমার কাছে যতি তেলেগু ছবির প্রস্তাব আসে, আর যদি পছন্দ হয় তাহলেই কাজ করি। আমি ভারতীয় অভিনেতা। ভারতীয় সিনেমায় অভিনয় করি। বলিউড আর দক্ষিণী ছবির নায়ক, এই গন্ডিতে নিজেকে বাঁধতে রাজি নই। ‘রাঞ্ঝনা’র গল্প পছন্দ হয়েছিল তাই রাজি হয়েছিলাম। ’

‘শামিতাভ’-এ অমিতাভ আর ধানুষের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছেন অক্ষরা। তিনিও আরেক সুপারস্টার কমল হাসানের মেয়ে। প্রথম ছবিতে অক্ষরা বুঝিয়ে দিয়েছেন অনেকদূর যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তার। অমিতাভ-ধানুষের সঙ্গে তার উপস্থিতি ‘শামিতাভ’কে আলোচনার কেন্দ্রে রেখেছে।  

 

বাংলাদেশ সময় :  ১৮৩২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ