বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। বিশ্বকাপের এই মাসে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন সানজিদা প্রীতিও! বাইশ গজে নয়, ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি।
প্রীতি অভিনীত ‘প্রজ্ঞা পারমিতা’ ধারাবাহিক নাটকটি একে একে ১৯৯ সংখ্যা পেরিয়ে এসেছে। ৪ মার্চ রাত ৮টায় এটিএন বাংলায় প্রচার হবে এর ২০০তম পর্ব। এতে প্রজ্ঞা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনিই। এ নাটকে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন? তার উত্তর, ‘এক কথায় দারুণ। যে কোনো নাটকে কাজ করার আগে গল্প আর চিত্রনাট্য দেখি। এরপর অভিনয় করার কতটুকু সুযোগ আছে তা পরখ করি। প্রজ্ঞা মেয়েটির মধ্যে স্বভাবজাত শক্তি আছে। এ ব্যাপারটা আমাকে উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রজ্ঞা তার আশপাশের মানুষের বিপদে সবসময় ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর মেয়েটির আশ্চার্য একটা ক্ষমতা আছে। সে তার দিনপঞ্জিতে যা যা লেখে সেগুলো একের পর এক ঘটতে থাকে। ’
নাটকটি লিখেছেন মাতিয়া বানু শুকু। তার সঙ্গে মিলে পরিচালনার কাজটি করছেন যুবরাজ খান। এর শুরুর গল্পটা ছিলো এমন- মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে প্রজ্ঞা। একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষকতা করে সে। তার মা-বাবা কেউ নেই। সে ভালোবাসে পলাশকে। তারা বিয়ে করবে সব কথাবার্তা পাকা। শেষ মুহূর্তে পলাশ জানায় সে প্রজ্ঞাকে বিয়ে করতে পারবে না। ভেঙে পড়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় প্রজ্ঞা। নির্মাণাধীন বাড়ির ছাদের শেষপ্রান্তে দাড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছে মেয়েটি। এমন সময় সেখানে এক পাগল এসে প্রজ্ঞাকে একটি পেন্সিল দেয়। প্রজ্ঞার আত্মহত্যা করা হয় না। ঘরে ফিরে সে মনের সব অভিমান ডায়েরিতে লিখে রাখে। ওই ডায়েরির নাম ‘প্রজ্ঞা পারমিতা’। দু’দিন পরে সে জানতে পারে ডায়েরিতে যাদের নিয়ে যা যা লিখেছিলো তাদের জীবনে তা-ই ঘটেছে। এরপর থেকে প্রজ্ঞা তার সহকর্মীদের নিয়ে ডায়েরি লিখতে থাকে।
‘প্রজ্ঞা পারমিতা’ প্রীতির জনপ্রিয়তাকে বেগবান করেছে বলাই যায়। দর্শকচাহিদা আছে বলেই ২০০ পর্ব পেরিয়ে যাচ্ছে নাটকটি। এর বাইরে এখন এটিএন বাংলায় রাকেশ বসু পরিচালিত ‘সাতটি তারার তিমির’ নাটকে দেখা যাচ্ছে তাকে। তিনি বরাবরই টিভি নাটকে কম কাজ করেন। এর কারণ দীর্ঘ ধারাবাহিকের সংখ্যা বেশি। প্রতি মাসের বেশিরভাগ দিন চলে যায় এগুলোর কাজ করে। সুযোগ পেলে বই পড়ে, ছবি দেখে নির্মাতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন প্রীতি। ধ্রুপদী সাহিত্য পড়েন বেশি। ভাবেন পোশাক নিয়েও।
ছোটপর্দায় সানজিদা প্রীতির পথচলা শুরু ২০০১ সালে। ওই বছর বিটিভিতে প্রচারিত হয় তার প্রথম নাটক পান্না কায়সারের রচনা ও আফজাল হোসেন পরিচালিত ‘পাথর সময়’। এর দুই বছর পর থেকে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের তালিকায় আছে ‘ডলস হাউস’, ‘দৃষ্টিদান’, ‘ভালোবাসি তাই ভালোবেসে যাই’, ‘একা এবং কয়েকজন’।
টেলিভিশনের আগে মঞ্চে কাজ করে সমৃদ্ধ হয়েছেন সানজিদা প্রীতি। ১৯৯৫ সালে মমতাজ উদ্দীন আহমদের রচনা ও সাইফুল ইসলামের নির্দেশনায় ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’ হলো তার প্রথম মঞ্চনাটক। তিনি বলেনও, ‘আমি মনে করি, থিয়েটারই আমার আসল জায়গা। ’ সেজন্য টিভি নাটকে কম কাজ করে মাসের অর্ধেক সময় বরাদ্দ রাখেন প্রাচ্যনাটের জন্য। এখন দলটির ‘সার্কাস সার্কাস’, ‘রাজা এবং অন্যান্য’, ‘পুনর্জন্ম’, ‘এ ম্যান ফর অল সিজন’ ও ‘কইন্যা’র প্রদর্শনী হচ্ছে নিয়মিত।
মঞ্চের প্রতি সানজিদা প্রীতির এই দায়িত্বশীলতা অব্যাহত থাকুক। পাশাপাশি ছোটপর্দার দর্শকরা চাইতেই পারেন, তার অভিনীত নাটকগুলোর ডাবল সেঞ্চুরি আরও হবে। তিনি যে মানের অভিনয় করেন, তাতে এই চাওয়াটুকু বেশি কিছু না! প্রীতির জয় চলবে, তার প্রতি দর্শকের প্রীতিও বাড়বে।
বাংলাদেশ সময় : ১৫০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০১৫