শুধু বাংলাদেশ নয়, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদের উগ্র অনলে পুড়ছে পুরো বিশ্ব। এমন সময়ে মৌলবাদ বিরোধী অসাম্প্রদায়িক চেতনার গল্প নিয়ে নির্মাণাধীন পূর্ণদৈর্ঘ্য মুক্ত চলচ্চিত্র ‘নৃ’র সম্পাদনার কাজ শুরু হয়েছে।
আগামী এপ্রিল-মে মাসের মধ্যে ‘নৃ’র কাজ শেষ করার ব্যাপারে আশাবাদী এর রচয়িতা ও পরিচালক রাসেল। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে শুরু হয়েছে সম্পাদনা। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেশ-বিদেশে বিপুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে ছবিটিকে ঘিরে। এজন্য চলচ্চিত্র সম্পাদক সামিরও বেশ উৎসাহী। এর আগে তিনি ‘গেরিলা’ সম্পাদনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
দু’বছর আগে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ হয় ‘নৃ’র চিত্রায়ন। তারও আগে ২০১২ সালের আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছিলো প্রস্তুতি। এরপর চার দফায় ৭০ দিন দৃশ্যধারণের কাজ করেছেন কলাকুশলীরা। এসব তথ্য জানিয়ে রাসেল বলেন, ‘মা, মাটি ও মানুষের গল্প নিয়ে রচিত এ ছবির কাক্সিক্ষত দর্শক মূলত মাটির কাছাকাছি থাকা বাংলার আপামর মানুষ। এ অঞ্চলের রঙ, রূপ, রস আর গন্ধে নির্মাণাধীন ছবিটি পূর্ণাঙ্গ শিল্পমান নিয়েও ব্যবসাসফল হবে, এমনই আমাদের প্রত্যাশা আমাদের। পরিবারের সবাকে নিয়ে উপভোগ করার মতো ছবি হবে এটি। ’
প্রথমাবস্থায় নির্মাতার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রির টাকায় সংগঠিত হয়েছিলো ‘নৃ’ পরিবার। এরপর আর্থিক সংকটে দফায় দফায় কাজ বন্ধ হলেও এই পরিবার কখনও ভেঙে পড়েনি। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় কাজটিকে তারা শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ইউটিউব ও ফেসবুক-সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শ্রেণীর ছবিপ্রেমী মানুষও তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আর্থিক সঙ্কটে দৃশ্যধারণ বন্ধ থাকাবস্থায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ‘নৃ’র অফিসিয়াল টিজার আগ্রহী করেছে বিদেশি দর্শকদেরকেও। ইউটিউবে এটি বিশ্বের ৮৫টি দেশ থেকে দেখা হয়েছে। দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। ‘নৃ’র ফেসবুক পেজেও অর্ধশতাধিক দেশের অনুসারি রয়েছে।
সম্পূর্ণ বরিশালে চিত্রায়িত এ ছবির ব্যাপ্তি প্রায় ১৫০ মিনিট। চণ্ডাল জুটি দিলীপ-রাঁধার জীবনদর্শন ও ভাবনা নিয়ে প্রায় ১০ বছর আগে শুরু হওয়া গবেষণায় প্রসূত এ ছবিতে বরিশালের মাধবপাশার ঐতিহাসিক জলাধার দূর্গাসাগরের প্রচলিত মিথ আর বাংলার সহজিয়া, দরদিয়া এবং মরমিয়া বোধ তুলে ধরা হয়েছে। এর মূখ্য চরিত্র বিশুর ভ‚মিকায় অভিনয় করছেন বরিশাল জিলা স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ইয়াসিন। বরিশাল কাউনিয়া এলাকার মহাশ্মশানের দুই চণ্ডাল দিলীপ কুমার পাল ও রাঁধাবল্লভ শীল ছাড়াও আছেন তাসনুভা তামান্না, সিরাজুম মুনীর টিটু, হীরা মুক্তাদির, এসএম তুষার, দুখু সুমন, হ্যাভেন খান, সুকান্ত মুখার্জি বাবু, মিন্টু কর, নজরুল ইসলাম চুন্নু,ওয়াহিদা রহমান আভাসহ প্রায় শতাধিক অভিনয়শিল্পী।
ডিজিটাল ফরম্যাটে ডিএসএলআর প্রযুক্তিতে নির্মিত ছবিটি চিত্রায়নে ব্যবহার করা হয়েছে তিনটি ক্যামেরা। মূল চিত্রগ্রাহক ড্যানিয়েল ড্যানি। সঙ্গে ছিলেন ক্যামেরা সঞ্চালক ঈয়ন ও দঈত আন্নাহাল। শিল্প নির্দেশনায় থিওফিলাস স্কট মিল্টন। শব্দগ্রহণ করছেন এমআই সাইফ ও নাজমুল হুদা। পোশাক-পরিচ্ছদ দেখেছেন শাহরিয়ার শাওন।
বাংলাদেশ সময় : ১৯২২ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৫