টি.ডব্লিউ সৈনিকের নাম এলেই মনে পড়ে যায় সেই গানের কথা। ‘তুমি আমার ঘুম তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি না’।
বিরতি দিয়ে বের করা অ্যালবামকে জড়িয়ে আছে কিছু স্মৃতি। সেগুলোর মধ্যে আলাদাভাবে ‘মা’ শিরোনামের গানটি লেখার কথা উল্লেখ করলেন সৈনিক। ২০০৯-১০ সালের কথা। অস্ট্রেলিয়ায় এস আই টুটুল ও তানিয়া আহমেদ এবং মীর সাব্বির ও ফারজানা চুমকী দম্পতির সঙ্গে একটি নাটকের কাজে গিয়েছিলেন তিনি। ওখানে মীর সাব্বির মাকে নিয়ে দুটি লাইন লিখেছিলেন- ‘বাবা হওয়ার আগে তোমায় বুঝিনি আমি মা’। ‘তখন মীর সাব্বিরের প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম হয়েছে। সেই গানের কথা আমার মাথায় ছিল। মায়ের (মনোয়ারা ওয়াহাব) কথা ভেবে গানটা আমি লিখি গত বছরের শেষে’- বললেন সৈনিক।
‘ঘুমের পরে মেঘ’ অ্যালবামের গানগুলোর মধ্যে সৈনিকের নিজের পছন্দের তালিকায় আরও আছে ‘কেমন করে বৃষ্টি বানাও মেঘ’ ও ‘এই যে দেখো টুকরো আকাশ। শিল্পীরা এখন পছন্দের গানের মিউজিক ভিডিও বানান। তবে তার তেমন ইচ্ছে নেই। ‘নিজের টাকায় কোনো মিউজিক ভিডিও করতে চাই না। এমনিতেই এতো টাকা খরচ করে অ্যালবাম করলাম, এরপর আর মিউজিক ভিডিও করার ইচ্ছে নেই। তবে আমার অ্যালবামটি প্রকাশের জন্য ঈগল মিউজিকের কচি ভাইকে ধন্যবাদ। ’
সৈনিক যে হুট করেই গান গেয়ে অ্যালবাম বের জনপ্রিয় হয়ে গেছেন তা কিন্তু নয়। ছায়ানটে গান শিখেছেন তিনি। পরিবারেও সংগীতচর্চা ছিলো। পরিবারে পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সৈনিক ষষ্ঠ। সৈনিক নামটা নানা আবুল মকসুদ হোসেনের দেওয়া। বোনরা গান করতেন। গ্রামের বাড়িতে খেলাঘর শিশু একাডেমিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিতেন বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব। ছোট ভাই নেয়ামত নিমুও গানের সঙ্গে যুক্ত। সৈনিক বললেন, ‘আমার বেড়ে ওঠা নীলফামারীতে। স্কুল শেষ করেই ঢাকা আসি। ১৯৯৭ সালে ছায়ানটে চার বছরের লোকগীতি কোর্সে ভর্তি হই। এরপর সংগীতচর্চা শুরু করি। পাশাপাশি ঢাকা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করি। ’
’৯০-৯১ সালের কথা। ঢাকায় আসার পর কিছুদিন অ্যাডলাক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে এক্সিকিউটিভ ক্রিয়েটিভ হিসেবে কাজ করেছেন সৈনিক। এরপর ধানমন্ডিতে ইজু অডিও ভিডিও লিমিটেডে কাজ করেন। ইজু অডিও ভিডিও প্রতিষ্ঠানে ইজু, মারুফ, বিটিভির চিত্রগ্রাহক সমীর কুশারী ও প্রয়াত মিশুক মুনীর কাজ করতেন। তাদের সান্নিধ্যে থেকে অনেক কিছু শিখেছেন। করেছেন নাট্যচর্চাও। থিয়েটার আরামবাগের হয়ে ‘জমিদার দর্পণ’, ‘রাক্ষুসী’, ‘কিং লিয়ার’, ‘সাতঘাটের কানাকাড়ি’, ‘খামাখা খামাখা’ নাটকে অভিনয় করতে দেখা গেছে তাকে।
১৯৯২ সালে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্রে ক্যামেরা ক্রু হিসেবে তিন বছর কাজ করার পর চিত্রগ্রাহক হিসেবে ফ্রিল্যান্স প্যাকেজ নাটকে কাজ শুরু করেন সৈনিক। রিঙ্গোর পরিচালনায় দেশের প্রথম টেলিছবি ‘আরিয়ানা’ ও প্রতিদিনের ধারাবাহিক নাটক ‘বন্ধন’-এর ক্যামেরায় ছিলেন তিনি। এ ছাড়া এইডস, সিটিসেলের ‘বড় হলে কিনবো’, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’, এমন কয়েকশ বিজ্ঞাপনে প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। নিজেও কিছু বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন। এর মধ্যে ছিলো নীল সাগর গ্রুপের পণ্য ও আ্যরিস্টোক্রেট রাইস অ্যান্ড পোল্টি-ফ্রেশ ফিল্ডের তিনটি বিজ্ঞাপন।
দুটি নাটকও পরিচালনা করেছেন সৈনিক। এগুলো হলো ‘ডায়েরি’ ও ‘লটারি’। এসব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কাজ করতে গিয়েই অনেক কিছু শিখেছি। সেই চেষ্টা থেকেই নির্দেশনা দেওয়া। ’
প্রথম অ্যালবামেই জনপ্রিয়তা পাওয়া সত্ত্বেও মাঝে অনেকটা সময় সংগীতাঙ্গন থেকে লাপাত্তা ছিলেন টি.ডব্লিউ সৈনিক। নাটক, বিজ্ঞাপন আর চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রহণ ও নির্মাণের কাজে ডুব দিয়েছিলেন। ‘গান থেকে ইচ্ছা করেই বিরতি নেইনি। বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ফাঁকে নতুন অ্যালবামের জন্য ভালো গানের কথা মনে মনে খুঁজছিলাম আর জমাচ্ছিলাম। ’
সৈনিক বর্তমানে হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‘সত্তা’ ছবির চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করছেন। এ ছাড়া সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘এই তো প্রেম’ ছবিতে স্বপন আহমেদের পাশাপাশি তিনিও ক্যামেরা চালিয়েছেন। ব্যক্তিজীবনে সহধর্মিনী মেঘনা ও দুই সন্তান কোলাহল (৪) ও কলরবকে (দেড় বছর) নিয়েই তার সংসার। আড্ডার সবশেষে বললেন, ‘ক্যামেরা নিয়েই থাকতে চাই। গানের পাশাপাশি পরিচালনার কাজ করে যাবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৫