‘তাহলে কি করে কথাবার্তা হবে?’ চিন্তা বোঝাতে ট্রাডিশনালি যে ভাঁজটার কথা উল্লেখ করা হয়, নওশীনের কপালে সেটা নেই। কিন্তু কণ্ঠে খানিকটা চিন্তা খেলে যাচ্ছে বৈকি! নওশীন ১০ আগস্ট রওনা হবেন যুক্তরাষ্ট্রের পথে।
হঠাৎ একমাসের জন্য এসবে খানিকটা ভাটা পড়ে যাবে বলে, নওশীনের কণ্ঠে এই উদ্বেগ। চটপট সমাধান চুমকীর কাছে, ‘ভাইবার আছে তো’।
‘তোমার ভাইবার আছে!’ নওশীনের বিস্ময় এবং সমাধান খুঁজে পাওয়ার আনন্দও।
‘কেন? আগেও ভাইবারে কথা হয়েছে তো তোমার সাথে’ চুমকীর কথা শুনে মাথা ঝোঁকান নওশীন।
মনেই নেই তার! আসলে প্রয়োজন হয় না তো। রিয়েল লাইফে তারা এতো কাছাকাছি, ভার্চুয়ালের ওপর ভরসা করার দরকার পড়ে না খুব একটা। ফোন অবশ্য আছে। কিন্তু কলচার্জের হিসেবটা কষতে গেলে দু’জন দু’দেশে বসে, যতোই অমিতব্যয়ী মানসিকতা হোক না কেন, জমিয়ে গল্পটা আর হয় না।
কী আর এমন গল্প? ‘আছে’- মাথা খানিকটা দুলিয়ে, বেশ লম্বা করে বলেন চুমকী। এমনও হয়, দেখা যায় প্রতিদিন রাতে আড্ডায় বসছেন চুমকী, নওশীন, হিল্লোল আর আহমেদ পাশা, চুমকীর স্বামী। কিছুক্ষণ পর চারজনের আড্ডা ভাগ হয়ে যায় দু’দলে। একদলে চুমকী-নওশীন, অন্যদলে অন্য দু’জন। ‘এটা প্রতিদিনই হয়, এবং দেখা যায় রাত বাড়ে, যার যার বাড়িতে ফেরার সময় হয়। কিন্তু আমাদের গল্প আর শেষ হয় না’- চুমকীর কথা ধরে আমরা চোখ রাখি নওশীনের দিকে। তার চেহারায় পূর্ণ সমর্থন।
এমনও নয় যে, তারা দু’জন সমবয়সী। স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি একসঙ্গে কাটিয়েছেন। দিনে দিনে আস্থা গাঢ় হয়েছে। বরং তাদের মাঝখানে বয়সের খানিকটা ব্যবধান আছে। চুমকী বড়, নওশীন ছোটো। পিঠাপিঠি বোনের মতো। মাত্র বছর কয়েক আগে তাদের পরিচয়। সেটি হুট করেই। নাটকে কাজ করতে গিয়ে। কিন্তু যেহেতু ‘বন্ধুত্বের হয় না পদবি’ কিংবা বন্ধুত্বে স্থান-কাল-পাত্র-বয়স এসবের খুব একটা পাত্তা নেই, তাই তারা বন্ধু।
তাদের বন্ধুত্বের গল্প শুনবো বলেই আমরা একদিন আড্ডায় বসেছিলাম চুমকীর বাড়িতে। গেটের ফর্মালিটিজ পেরিয়ে লিফট বেয়ে ওপরে উঠলে, আরও দু’জন কড়া প্রহরী। চুমকীর পোষা কুকুর। মিঁউ ও সুন্দরী ওদের নাম। কলিংবেলের শব্দটা কানে গেলেই হলো, দৌড়ে এসে চিৎকার শুরু করে মিঁউ। চুমকীর কাছে গিয়ে নালিশ জানায় বারবার। সেটা অপরিচিত বলে। নওশীন যখন ঢুকলেন, কোনো চিৎকার, নালিশ কিছুই নেই। যতোই হোক, খালা তো!
ছবি তোলার সময় ঘুরেফিরে এলো নাদিয়ার নামও। তিনিও এদের খুব কাছের। মোবাইলে আলাদা করে কিছু ছবিও তুলে রাখলেন তারা, নাদিয়াকে পাঠাবেন বলে।
একটা ব্যাপার খুব ঘটছে ইদানিং। নওশীন ফেসবুকে বেশ লেখালেখি করছেন। প্রথম প্রথম লেখালেখি শুরু করলে যেটা হয়, ঘুরেফিরে প্রেম-রোমান্টিসিজম এগুলোই সম্বল হয়ে দাঁড়ায়- নওশীনের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। তবে তিনি যে চেষ্টাটা করছেন, সে অনেকটা চুমকীর প্রভাবেই। চুমকী গল্প-কবিতা লেখেন, নাটকও। বলছিলেন নওশীন, ‘সে যে এতো সুন্দর লেখে! আমার তো মনে হয়, যদি তার মতো একটু লিখতে পারতাম, যদি পারতাম! তার মতো ভালো তো আর পারবো না। তবু ওই ‘যদি’ ফিলিংস থেকে আমার চেষ্টাটা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘন্টা, আগস্ট ২, ২০১৫
কেবিএন/