‘এটা আমার জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত’- কথাটা বলার আগের ও পরের মুহূর্তে অদ্ভুত আনন্দ ঠিকরে পড়ছিলো বিপাশা হায়াতের চোখে-মুখে। আজ শনিবার (৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে তার একক চিত্রকর্ম ও অঙ্কন প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়।
বিপাশাকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লী ইউন ইয়াং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু। এ ছাড়াও আসেন অভিনেতা-নির্মাতা-চিত্রশিল্পী আফজাল হোসেন, ফ্যাশন ডিজাইনার বিবি রাসেল, বিপ্লব সাহা, অভিনেতা-নির্মাতা মীর সাব্বির প্রমুখ। হায়াত পরিবার (আবুল হায়াত, শিরিন হায়াত, নাতাশা হায়াত) তো ছিলেনই, আর বিপাশাকে সারাক্ষণ সঙ্গ দিয়েছেন অভিনেতা-নির্মাতা তৌকীর আহমেদ।
প্রদর্শনীতে মূল ৩৬টি চিত্রকর্ম ও অঙ্কনের পাশাপাশি দর্শক চাহিদা থাকায় যোগ করা হয়েছে বাড়তি পাঁচটি ছবি। প্রদর্শনী চলবে আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা।
এটি বিপাশার চতুর্থ একক চিত্রপ্রদর্শনী। তার আগের তিনটি প্রদর্শনী হলো- ‘দ্য জার্নি উইদিন’ (২০১১), ‘জার্নি টু দ্য আনসিন’ (২০১৩) এবং ‘ফেসেস অব অ্যাগোনি’ (২০১৪)। চতুর্থ একক প্রদর্শনী শুরুর আগে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বললেন বিপাশা।
বাংলানিউজ : স্মৃতি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা হলো কীভাবে?
বিপাশা : এটা আসলে ইচ্ছা থেকে যে করা তা না। এটা খুব স্বতস্ফূর্তভাবে আমার ক্যানভাসে এসেছে। বলতে পারবো না কীভাবে এসেছে! স্মৃতি ছাড়া আসলে মানুষ বাঁচে না। প্রতিটি মানুষই কিন্তু স্মৃতিনির্ভর কাজ করেন। আপনি যে লেখালেখি করেন, এ ক্ষেত্রেও কিন্তু স্মৃতিটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন। স্মৃতিটা যে কতো ইন্টারেস্টিং হতে পারে মানুষের, তা একটু ভাবলেই বোঝা যায়। স্মৃতির ভিজ্যুয়াল উপস্থাপন বলতে পারেন আমার এই প্রদর্শনীকে।
বাংলানিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পেইন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছেন। কে না থাকলে আঁকাঅাঁকি করতে পারতেন না?
বিপাশা : বাবা (আবুল হায়াত) প্রথম আমার হাতে রঙতুলি তুলে দিয়েছিলেন। তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। আর আমি যখন আর্ট ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই, তখনও একমাত্র বাবাই আমার পাশে ছিলেন। তার কারণেই আসলে আমি ছবি অাঁকতে পেরেছি।
বাংলানিউজ : আপনার আঁকাআঁকিতে তৌকীর আহমেদ কেমন অনুপ্রেরণার দেন?
বিপাশা : এখন তো আমার সব অনুপ্রেরণাই ও। ও শুধু আমার স্বামী নয়, ভালো বন্ধুও। ওর অনুপ্রেরণা, ভাবনা, সঙ্গ- সবকিছুই আমার জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা।
বাংলানিউজ : আপনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। আমরা আপনাকে সফল অভিনেত্রী, নির্মাতা, লেখক এবং চিত্রশিল্পী হিসেবে পেয়েছি। এর মধ্যে কি চিত্রশিল্পী পরিচয়টাতে বেশি আনন্দ পাচ্ছেন?
বিপাশা : এই মুহূর্তে তো বলবো আমি সবচেয়ে বেশি কাজ করছি ছবি আঁকা নিয়েই। তাই ছবি আঁকায় আমি এখন সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত। এজন্য অন্যান্য জায়গা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি। কারণ ছবি আঁকায় আরও সময় দিতে চাই। এই স্বাধীনতাটা আসলে আমাকে অনেক আনন্দ দিচ্ছে।
বাংলানিউজ : আপনার স্মৃতির রাজ্যে স্থান পাওয়া ২৮টি চিত্রকর্ম এবং ৮টি ড্রয়িং-এর বয়স কতো?
বিপাশা : এই সিরিজটা নিয়ে আমি তিন বছর ধরে কাজ করছি। ২০১৪ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করে এ বছরের আঁকা ছবি আর ড্রইং আছে এখানে। আমার ছবির টুকরো অংশগুলো প্রতিনিধিত্ব করে আমার টুকরো সৃতিগুলোকে।
বাংলানিউজ : আপনার কাছে ক্যানভাসের সংজ্ঞা কী?
বিপাশা : ক্যানভাসটা আসলে অতীত বর্তমান এবং আমার মৌলিক আবেগ ধরে রাখার জায়গা। ক্যানভাসে আমার শিল্পকর্মের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির বিমূর্ত আবেগকে তুলে আনার চেষ্টা করি। এবার ক্যানভাসে রঙ ঢেলে, রঙের আস্তরের ওপর আঁচড় কেটে টেক্সচার তৈরি করে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি তুলে আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছি। সে স্মৃতিরই নির্যাস পাওয়া যাবে আমার এসব শিল্পকর্মে। প্রতিটি ছবিতে রয়েছে আমার মনের প্রতিফলন। আমার প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত।
বাংলাদেশ সময় : ২১২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৫
জেএইচ