বাস এসে থামবে। দু’পাশে আবর্জনার স্তুপ রেখে, ডাস্টবিন, বাতাসভর্তি বিশ্রি গন্ধ ছড়িয়ে; যে গেটটা পাহারাদার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কলোনীর সামনে, সেখানে অপেক্ষায় চরিত্র।
বিজ্ঞাপনচিত্র থেকে উঠিয়ে যদি চরিত্রটিকে বাস্তবে দাঁড় করানো হয়, তবে তার নাম হবে পূজা চেরি। সকালবেলা পূজারও স্কুল থাকে। ওভাবে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে, স্কুল ড্রেসে মুড়ে তাকেও খুব সকাল সকাল বেরিয়ে পড়তে হয় রাস্তায়। বিজ্ঞাপনচিত্রের চরিত্রটির মতোই। তবে খানিকটা তফাৎ আছে। পূজাকে ওভাবে রাস্তায়, একা একা, বাসের জন্য দাঁড়াতে হয় না। সঙ্গে মা থাকে। বাস লাগে না, রিকসা হলেই চলে। মাঝে মধ্যে গাড়ি। তার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক গার্লস স্কুল থেকে মানিকদির বাড়ি- বেশিক্ষণের পথ নয়।
আমরা এ অল্পক্ষণ পূজার গাড়িতে চড়ে বসি। তার সঙ্গী হই। ক্লাস সেভেনে পড়–য়া এ মাধ্যমিকের মেয়েটাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই প্রাথমিকে। ক্লাস থ্রি-ফোর; ওই বয়সে। ‘ভালোবাসার রঙ’ নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে তখন। নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আসছে। সঙ্গে নতুন জুটি। যোগ হয়েছে পর্দায় ঝকঝকে-তকতকে প্রিন্ট দেখানোর প্রতিশ্রুতিও। যুক্ত হলো পূজাও। ওটাই তার প্রথম অভিনয়, প্রথম সিনেমা হলে নিজেকে দেখতে যাওয়া।
কি করে, কিভাবে; ওসব ঘটনাক্রম পূজার ছোট্ট মন এখন তুলে আনতে পারে না ঠিকঠাক। মায়ের দিকে তাকায়। মা, ঝর্ণা রায়, বলে দেন সবটা, ‘পাশের বাড়ির একজনের বুটিক ছিলো। তিনি খুব চাইছিলেন, পূজা যেন ওদের কয়েকটা ড্রেস পরে ফটোশুটের মতো করে দেয়। আমিও রাজি হলাম। ওই ছবি দেখেই পূজাকে পছন্দ করেছিলেন সিনেমার জন্য। তখন তো আরও ছোটো ছিলো। অনেক কিউট ছিলো। ’ পাশ থেকে একজন বলেন, ‘এখনও অনেক কিউট। ’ শুনে পূজা খুব লজ্জা পায়। মুখ লুকায় দু’হাতে।
‘ভালোবাসার রঙ’ ডিঙিয়ে এরপর পূজা ‘ছোট সংসার’, ‘ডন নাম্বার ওয়ান’, ‘সন্তানের মতো সন্তান’, ‘জান তুমি প্রাণ তুমি’, ‘তবুও ভালোবাসি’, ‘ভালোবাসতে মন লাগে’, ‘মোস্ট ওয়েলকাম’, ‘অগ্নি’- অভিনয় করেছে কুড়িখানেক ছবিতে। বিজ্ঞাপনচিত্রও জমা হয়েছে অনেকগুলো। চুইনগাম চিবোতে চিবোতে, থেমে থেমে তালিকাগুলো দিয়ে, পূজা বাইরে তাকায়।
ওখানে, রাস্তার পাশে, পূজার বিরাট বিলবোর্ড ছিলো ক’দিন আগেও। বিজ্ঞাপনচিত্রের পূজা, সাদা স্কুলড্রেসের পূজা। পুরো ঢাকা শহর ছেয়ে গিয়েছিলো তার বিলবোর্ডে, বলতে গেলে। ছবি তুলে ফেসবুকে একবার লিখেছিলোও, ‘ঢাকা শহর এখন আমার!’ আর সমানে টিভিপর্দায় তার মুখ তো ছিলোই, আছে এখনও। অবস্থাটা এমন, কেউ পূজা চেরি নামটা না জানলেও ‘আসি না, আমি এখানেই থাকি’ সংলাপটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই ধরে ফেলতে পারে। চিনে ফেলতে পারে। এসব বিষয়ে যখন আলোচনা চলছিলো, পূজার মুখ থেকে সত্যিই বেরিয়ে আসে, ‘আমি এখানেই থাকি। ’
গাড়ি থেমেছে মানিকদি। ওখানে পূজার বাড়ি। তবে শুধু এ মাসটার জন্য। সামনের মাস থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটায় শিফট হচ্ছে পুরো পরিবার মিলে। স্কুল থেকে তখন তার বাড়ির দূরত্ব হবে মেরেকেটে দু’মিনিট। আলাপ শেষ করার আগের জানা গেলো, আজ (২০ আগস্ট) পূজার জন্মদিন!
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৫
কেবিএন/