স্ক্রিপ্ট হাউজ বাড়িটার সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে সাজঘরে উঁকি দিতেই মনে হলো- ভুল হয়ে গেলো নাতো? এখানে পূর্ণিমা থাকবেন জানা ছিলো। মাহফুজ আহমেদও থাকবেন, এটাও জানাজানি হয়েছে আগে।
বিভিন্ন প্রজন্মের চার তারকাকে নিয়ে তৈরি হচ্ছে টেলিছবি ‘আমার বেলা যে যায়’। এর মাধ্যমে তিন বছর পর অভিনয়ে ফিরলেন পূর্ণিমা। এখানে তার নায়ক মাহফুজ। তাদের দেখা যাবে স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায়। তবে মাহফুজ বললেন, ‘আমরা এখানে নায়ক-নায়িকা নই, আবার নায়ক-নায়িকাও!’
কৌতূহল জাগানোর মতোই ব্যাপার। এই কৌতূহল মিটবে আগামী কোরবানির ঈদে এনটিভিতে টেলিছবিটা দেখলে। এটা একটা বাড়ির গল্প, পারিবারিক গল্প। ভাইবোন (আফজাল-পূর্ণিমা) ও বোনের স্বামী (মাহফুজ) বিভিন্ন আনন্দ-মজা করতে করতে সমস্যায় পড়েন। তাদের ওপরের তলায় থাকেন সুবর্ণা। এখানে জীবন ও ভালোবাসাকে বোঝার অনুভূতি পাওয়া যাবে বলে মনে হলো চিত্রনাট্য পড়ে।
আরিফ খান এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নাটক-টেলিছবি তৈরি করেছেন। সবটাতেই টিভি কিংবা চলচ্চিত্রাঙ্গনের প্রথম সারির তারকারা। একটা দৃশ্যধারণের পর তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হচ্ছিলো। তিনি বললেন, ‘আমি সাধারণত ঈদের নাটক বানাই। আর এসব নাটকের ক্ষেত্রে ‘বিশেষ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এই শব্দটিকে আমি খুব প্রাধান্য দেই। নাটকটা যেন বিশেষই হয় সেদিকে সচেতন থাকি। প্রথমে অভিনয়শিল্পী নিয়ে ভাবি। কোন শিল্পীকে নিয়ে কাজ করলে দর্শকরা পছন্দ করবে, কার দর্শকপ্রিয়তা আছে, কে কতোদিন ধরে কাজ করছে না কিংবা কার সঙ্গে কার কাজ হয়নি এসব মাথায় রাখি। সব মিলিয়ে নতুন একটা রসায়ন মাথায় নিই। এরপর চিত্রনাট্য লেখাই। কারণ আমি মনে করি, কোনো অভিনয়শিল্পীর ১৫-২০টা নাটক যদি ঈদে যায় তাহলে সেটা বিশেষ হয় না। ’
বোঝা যাচ্ছে, অভিনয়শিল্পী চূড়ান্ত করার পর আরিফ খানের নাটক-টেলিছবির চিত্রনাট্য তৈরি হয়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। ‘আমার বেলা যে যায়’ লিখেছেন বদরুল আনাম সৌদ। তার ওপর সবার আস্থা আছে। কিন্তু এমনও হতে পারে, নির্দিষ্ট দুইজনকে ভেবে চিত্রনাট্য তৈরির পর অভিনয়শিল্পীকে পাঠানোর পর পছন্দ হলো না! আরিফ খানের উত্তর, ‘আজ পর্যন্ত এমনটি হয়নি। আমি দশ বছর ধরে কাজ করছি। এই দীর্ঘ সময়ে যখন যাকে নিয়ে পরিকল্পনা করেছি তাকেই পেয়েছি। এখনও ব্যর্থ হইনি। এজন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবানই বলবো।
এ প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে আফজাল হোসেনকে টেনে আনলেন আরিফ, ‘বিশেষ করে দেখেন আফজাল ভাই খুব একটা কাজ করেন না। সেখানে কিন্তু গত দুই-তিন ঈদে তিনি আমার কাজগুলো করেছেন। তার অনেক ব্যস্ততা থাকে- অফিস, ব্যবসা, বিজ্ঞাপন নির্মাণ। এর মধ্য থেকেই ফাঁক বের করে আমাকে তিনি সময়-সুযোগ দিচ্ছেন। ’
এর মধ্যে হাতে পাঞ্জাবী নিয়ে সাজঘর থেকে বেরিয়ে আরেকটা ঘরে ঢুকলেন আফজাল। ওটার উল্টো দিকের ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়লো দেয়ালে টাঙানো তার দুটি ছবি, মাঝে পূর্ণিমার একটি। এই ঘরে বইয়ের তাকে রাখা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, ফালগুনী ভট্টাচার্যের মতো চেনা সাহিত্যিকদের বেশ কিছু বই। পরিচালকের সহকারীরা চিৎকার করে বললেন- ‘কোয়াইট!’ শুটিংবাড়িতে এসে জোরে নীরব হতে বললেই বুঝতে হয় দৃশ্যধারণ হবে।
দৃশ্যটা এমন- পানির কল ঠিক করা নিয়ে সুবর্ণা এসে আফজালকে শাসিয়ে যাচ্ছেন। আফজালের পাশে মাহফুজ-পূর্ণিমাও আছেন। যেদিকে তারা তিনজন থাকবেন অর্থাৎ ঘরের ভেতরে ক্যামেরা। বাইরে সুবর্ণা। ক্যামেরা যখন বাইরে যাবে তখন আফজাল-মাহফুজ-পূর্ণিমা জড়ো হবেন দরজার সামনে। সুবর্ণার দৃশ্যের কাজ হতে হতে সাজগোজ ঠিক করে নিচ্ছেন বাকি তিনজন। এই ফাঁকে মাহফুজকে ফাঁকা পাওয়া গেলো। তিনি বললেন, ‘আমার এ টেলিছবিতে কাজ করার একটাই কারণ- আফজাল ভাই। তার সঙ্গে তিন-চার বছর ধরে অভিনয় ছাড়াও দেখাই হয়নি! এখানে কাজ করলে তার সান্নিধ্য পাওয়া যাবে বলেই রাজি হয়েছি। না হলে আমি এখন অভিনয় করিই না বলা চলে। যখন আমি অভিনেতা ছিলাম না, তখনও আফজাল ভাইয়ের পাশে গিয়ে বসে থাকতাম। তার কথাবার্তা আমার খুব ভালো লাগে। ’
এদিকে সুবর্ণা কাজটা শেষ করে সোফায় বসলেন আফজালের পাশে। মাহফুজ বসলেন আরেকদিকে। পূর্ণিমাও এলেন একটু পর। সুবর্ণা এখন বেরোবেন। আবার আসবেন রাতে। যাওয়ার আগে বললেন, ‘মাহফুজ ও পূর্ণিমা দু’জনকেই আমার ভালো লাগে। আর আফজালের সঙ্গে আমার ৪০ বছরের বন্ধুত্ব। আমরা একসঙ্গে কাজ করার সময় মনে হচ্ছে, পরিবারের মতোই একটা ব্যাপার। ’ তার সঙ্গে সুর মেলালেন আফজালও, ‘আমরা এখানে একটা পরিবার হয়ে কাজ করছি। আমি আর সুবর্ণা আরিফের কাজ আগেও করেছি। ’ আর পূর্ণিমা? তার উত্তর, ‘প্রস্তাবটি পাওয়ার পর সহশিল্পী তালিকা দেখেই কাজটি করতে রাজি হয়েছি। আফজাল হোসেন আর সুবর্ণা মুস্তাফার সঙ্গে কাজের সুযোগ কেইবা হাতছাড়া করতে চায়!’
বাতচিৎ আপাতত শেষ। সুবর্ণা চলে গেলেন। ক্যামেরা রেডি। দরজার সামনে দাঁড়ালেন আফজাল। কয়েক মুহূর্ত পর ড্রইংরুম থেকে এলেন পূর্ণিমা। তারপর মাহফুজ। সুবর্ণা শাসিয়ে যাওয়ার পর মাহফুজ বলে ওঠেন, ‘ডেঞ্জিরাস মুহিলা!’ আফজাল তখন ঘুরে বলেন, ‘ডেঞ্জিরাস না, ডেঞ্জারাস। আর মুহিলা না, মহিলা। ’ মাহফুজের মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, ‘আমি তো সেটাই বললাম, ডেঞ্জিরাস মুহিলা!’ পাশ থেকে পূর্ণিমা ইশারায় চুপ করতে বলছেন মাহফুজকে। বিরক্ত হয়ে আফজাল ভেতরে চলে গেলেন। ওদিকে সূর্য ডুবছে, বেলাও চলে যাচ্ছে...
বাংলাদেশ সময় : ১৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৫
জেএইচ