একটা সাদা রঙের গাড়ি মেয়েটিকে নামিয়ে নিরাপদে পার্ক নিলো। শহুরে সন্ধ্যা তখন যানজটে বসে ঝিমোচ্ছে।
ক্লান্ত? ‘নাহ!, নার্ভাস। ’ স্নায়ুজুড়ে তুফান বইছে। নিজের ছবির মহরত। কতো অতিথি আসবে! সাংবাদিক, তাদের প্রশ্ন! কেক কেটে, হাততালি দিয়ে, ঘোষণা হবে সানজিদা তন্ময় নামটি- স্নায়ু তো একটু অস্থির হবেই! বিশেষ করে সিনেমাতে যখন তিনি ‘প্রায় নতুন’, একটা ছবিও মুক্তি পায়নি। ভয় ভয় ভাবটা পুরোপুরি কাটতে সময় লাগবে আরও।
‘শুন্য’ ছবির মহরতের আরও বেশ কিছুদিন পর মুঠোফোনে তন্ময়। প্রশ্ন ছুটে যায়, এই যে সানজিদা তন্ময় নামে নতুন একজন নায়িকা আসছেন সিনেমাপাড়ায়, তাতে চলচ্চিত্রাঙ্গনের কী লাভ-বৃদ্ধি হবে?’ খানিকটা থতমত খেলেন। ঢোকও গিলে নিলেন বোধহয়, ওভারফোন বলে অভিব্যক্তি ধরা পড়লো না, তবে বোঝা গেলো। এমনিতেই ইদানীংকার দেশীয় বাণিজ্যিক সিনেমার যে ধরণ, তাতে নায়িকা নামমাত্র!
আউটডোরে খানিকটা নেচে, নায়কের সঙ্গে প্রেম, ফোনে রোমান্টিক বাতচিৎ, বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে, কান্নাকাটি-ঝগড়াঝাটি করেই গল্প পার। আলাদাভাবে কিছু করার থাকে না। দু’একটাতে যা-ও-বা ‘নায়িকাপ্রধান’ করে তোলার চেষ্টা করা, কিন্তু সেগুলো নিতান্ত চেষ্টার মধ্যেই আটকে থাকে। সুতরাং যেখানে অলিখিত নিয়ম দাঁড়িয়ে গেছে- নায়িকা মানেই ‘গ্ল্যামারের ডিব্বা’; সেখানে নতুন করে সানজিদা তন্ময় এসে কী এমন যোগ করবেন?
থেমে থেমে যে উত্তরটা পাওয়া গেলো, তাতে অনেকখানি চিন্তা-পরিকল্পনার আভাস, ‘নাচ-গান করে, ন্যাকামো করে চলে গেলাম পর্দা থেকে; এটা করার জন্য আমি আসিনি’- সঙ্গে যোগ করে আরও দু’একটা কথা বললেন তন্ময়, ইতস্তত করে, অগোছালোভাবে। পৌঁছাতে চাইছিলেন এ কথায়, ‘ছবি দেখে যখন দর্শক বের হবে, তখন যেন এটা না বলে, নায়িকাটা কী আবেদনময়ী ছিলো! অথবা কী সুন্দরী ছিলো! আমার চাওয়া, দর্শক যেন এটা বলে যে, আমরা একজন ভালো অভিনেত্রীকে পেলাম। ’
সে কারণেই কি ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ দিয়ে শুরু? রিয়াজুল রিজুর এ ছবি কোনো বাণিজ্যিক ফর্মুলা মানে না। আগাগোড়া একটা প্রায়বিচ্ছিন্ন জনপদের গল্প বলে চলে। এ সময়ের গল্প, কিন্তু ভেতরজুড়ে মুক্তিযুদ্ধ জীবন্ত ভীষণভাবে। এ ছবির ‘পানাই’ হয়েছেন তন্ময়। পানাইয়ের সংগ্রামী জীবন। পতিতালয় থেকে শহীদুজ্জামান সেলিমের বউ হয়ে, নৌকায় চেপে আসে সিরাজগঞ্জের চরে।
এরপর আলাপের আরও অনেকক্ষণ জুড়ে মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাড়িতে বসে, স্মৃতির অলিগলি ডিঙিয়ে উড়ে যান সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত চরে, বছরখানেক আগের ‘বাপজানের বায়স্কোপ’-এর দৃশ্যধারণের দিনগুলোয়। সেই অভিজ্ঞতা জানিয়ে বললেন, ‘প্রচুর রোদ। চরজুড়ে বালি। তাতে রোদের তাপ কয়েকগুণ হয়ে বাড়ে। বিচ্ছিন্ন একটা চর। ওখানে প্রায় মাসখানেক ধরে বহুকষ্টে কাজ করেছি আমরা। পানি নেই। গ্রামাঞ্চলে তো টিউবওয়েল থাকে। সেটাও নেই। শুটিংয়ের জন্য নতুন একটা বসানো হয়েছিলো। সেটা দিয়ে প্রচুর বালু উঠতো। কতো কষ্ট করে যে ছবিটা করেছি! তবে বুঝতে পারছিলাম, ভালো একটা কাজ হচ্ছে। ’ তাই দিনের শেষে কষ্টটা আর মনেই থাকতো না। থাকতো অফুরন্ত স্বপ্ন, ভালো কাজের অংশ হয়ে থাকতে পারার ভালো লাগা।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে ছবিটি মুক্তি পাবে। তার আগেই অবশ্য আরও গোটাকয়েক ছবিতে নাম লিখিয়ে নিয়েছেন তন্ময়। হাতে ক’টা ছবি এখন? ‘শেষ চুম্বন’, ক’দিন আগে মহরত হলো ‘শুন্য’র। আর টার্গেট? ‘ওটার কাজ তো বন্ধ আছে আপাতত। ’
চালু আছে অনেক কিছু- আড্ডা, বেরিয়ে পড়া, পুরনো বন্ধু, ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, মোবাইলে টাইপিং, সেলফি, ঘুম...। আর পড়াশোনা? ‘ওটা শেষ। ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছি। ’ অথচ পুরো আড্ডায় একবারও ‘কাঠখোট্টা-স্বভাব’ মনে হয়নি তন্ময়কে। লোকে অযথাই মন্দ বলে!
‘বাপজানের বায়স্কোপ’ ছবির গানের ভিডিও:
বাংলাদেশ সময় : ১৫১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ