বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত বসে আছেন মাথা নিচু করে। মাঝে মধ্যে ঝিমুনির মতো করে ঢুলছেন।
ক্লান্তির আরও একটা কারণ রয়েছে। এর আগের রাতেই নিজের নতুন ছবি ‘টোপ’-এর রাফকাট শেষ করেছেন বুদ্ধদেব। সেটার অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছিলেন, “গত এক মাস কলকাতা থেকে বেশ কিছুটা দূরে আমার ছবিটির শুটিং করছিলাম। কখনও কখনও একশ’ কিলোমিটার গিয়ে মাত্র দু’ঘণ্টা শুটিং করে, আবার সেই পথ ধরে ফিরে আসতে হয়েছে। খুবই ক্লান্তিকর!”
খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক, কবি হিসেবেও বেশ নামডাক আছে, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ঢাকায় এসেছেন ১৫ নভেম্বর। শিল্পকলা একাডেমীতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপচারিতা হলো ওইদিন সন্ধ্যায়।
বাংলাদেশ, প্রাণের দেশ
প্রেমেন যখন আমাকে বললো, ‘যেতে হবে’। আমি আর জিজ্ঞেস করিনি কোথায় যেতে হবে। ঢাকা যেতে হবে শুনে আমি লাফিয়ে উঠলাম নিশ্চয়ই। কেননা এখানকার মাটির সঙ্গে আমার নাড়ির যোগ। আসতে ভালো লাগে।
এক ছবির ভাবনায় পনেরো বছর
এখন যে ছবি করছি, ‘টোপ’, সেটা নিয়ে ভাবছি গত পনেরো বছর ধরে। যতোবার শুরু করবো ভেবেছি, পিছিয়েছি তার চেয়ে বেশিবার! আমার মনে হয়েছে, সময় হয়নি। সময় হয়নি এই কারণে, বহুদিন পর অন্য কারও গল্প নিয়ে ছবি করছি। অন্যের গল্প নিয়ে কাজ করার নানান ঝামেলা আছে। মুশকিল আছে। বিপদও আছে। কারণ, গল্পকে আমি সম্পূর্ণ বদলে দিই। এই বদলে দেওয়াটা অনেক সময় লেখক পছন্দ করেন না। লেখক না থাকলে লেখকের স্ত্রী পছন্দ করেন না। লেখকের শ্যালিকা পছন্দ করেন না। মহা মুশকিল। সেজন্য নিজের গল্প নিয়েই করি। তাতে আরেকটা সুবিধা, আমার যে ভাবনা, তা নতুন করে করতে পারি। পনেরো বছর ধরে ভেবে, কোনো কূল কিনারা করতে পারছিলাম না। এবার তিন-চার মাস আগে মনে হলো যে, কাজটা করার সময় এসেছে।
অভিনেতার খোঁজে
প্রাথমিক খসড়ার পর মুশকিল হলো, কাকে নিয়ে কাজটা করবো? অভিনেতা কে হবে? কলকাতার কাউকেই আমার মনে ধরলো না। অনেকেই করতে চেয়ে ফোন করলেন, কিন্তু না করে দিলাম। আমি চাইছিলাম সম্পূর্ণ নতুন। আমি সিনেমা করি পুরোপুরি নিজের শর্তে। বলি, আপনারা আমার সঙ্গে ছবি করতে চাইলে, খুব ভালো। পয়সা কম দিন ঠিক আছে। কিন্তু আমার শর্তগুলো মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নেন, তাহলে আছি। কারণ, আমার খুব বেশি পয়সা লাগে না। লাগে একটা জিনিস, সেটা হলো শর্তপূরণ। মুশকিল হলো, অনেক খুঁজে নতুন একজনকে পেলাম। কিন্তু তাকে নিয়ে ছবি করতে কেউ রাজি নয়। কারণ, প্রত্যেকেরই ধারণা, নতুন মুখ হলে ছবি চলবে না। কিন্তু কলকাতায় অদ্ভুত কতোগুলো ঘটনা ঘটছে। কারও নামেই ছবি চলছে না। যখন প্রসেনজিৎ থাকে, তখনও কেউ ছবি দেখতে আসে না। আর কি যেন নাম...
[নামটা মনে করতে পারছিলেন না। ইদানীং বোধহয় বেশ ভুলোমনা হয়ে পড়েছেন বুদ্ধদেব। এটা-ওটা ভুলে যাচ্ছেন। পাশ থেকে একজন বলে দিলেন, ‘দেব’। নামটা পেয়ে, মাথা ঝুঁকিয়ে, মুখস্ত করার ঢঙে বারকয়েক উচ্চারণ করে নিলেন, ‘দেব, দেব, দেব...’]
দেবের ছবি চলে না। ছবিগুলো সত্যিই চলে না। ছবি চলে ছবির গুণে। অন্য কারও থাকা না থাকা, ছবি চলায় প্রভাব ফেলে না। তো প্রযোজক বললো যে, ‘আপনি যা চাইছেন সেভাবেই করবো। কিন্তু আমার খুব কম টাকা আছে। ’ আমি বললাম, ঠিক আছে। তাই সই। সেই কম টাকা দিয়ে ছবি করতে যা হয় আর কি, নুন আনতে পান্তা ফুরিয়ে যায়! তারপর আবার পান্তা তৈরি করতে সময় লাগে। এসব করে করে ছবি শেষ করতে গলদঘর্ম ছুটে গেলো।
অবশেষে পাওয়া গেলো
আমি চাইছিলাম এমন একটা মুখ, যাকে দেখে কিচ্ছু বলা যাবে না। কি যে করবেন, কি যে করবেন না, তা কিন্তু আমরা ধরতে পারবো না। তাকে পাওয়া গেলো। তিনি নাটক করেন। আমাকে বললেন, আমার নাটকটা দেখতে আসবেন। বললাম, ঠিক আছে যাবো। নাটক দেখতে গিয়ে, সে নাটক অসম্ভব খারাপ! দেখাই যায় না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিলো, আমিই মঞ্চে উঠে যাই! যারা আমার সঙ্গে কাজ করেন, তারা বললেন, ‘দাদা এটা হতে পারে না। একে নিয়ে আপনি কিছুতেই এই সিনেমা করতে পারবেন না। ’ এমন নিরুৎসাহ দিতে শুরু করলেন, আমিও ঘাবড়ে গেলাম।
তারপর যাই হোক, আরও অনেক খোঁজাখুঁজির পর, আমার নায়ককে পেলাম। ভদ্রলোককে দেখতে একেবারেই মিরাকল। ওয়ান্ডারফুল অ্যাক্টর। বহুকাল বিদেশে থেকেছেন। নাটক পড়িয়েছেন। কিন্তু একেবারে আনপ্রেডিক্টেবল যে ব্যাপারটা, সেটা আমি তাকে দিয়ে করাতে পারলাম।
নায়িকার বয়স এগারো বছর
আরেকটা চরিত্র আমার দরকার ছিলো, যে দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। আমার টিম শহর তোলপাড় করে চারটি মেয়েকে নিয়ে এলো আমার কাছে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। বয়স কারও নয়-দশ। একটা মেয়েকে আমার ভীষণ ভালো লাগলো। এরা প্রত্যেকে কিন্তু একটাই কাজ করে- দড়ির ওপর দিয়ে হাঁটে। খেলাগুলো দেখায়। এটাই ওদের কাজ। আর কিছু জানে না। এই মেয়েটি, যাকে আমি পছন্দ করলাম, কথা বলেই না প্রায়। অক্ষর চেনে না। পড়াশোনা কিছুই জানে না। দড়ির ওপর দাঁড়িয়ে নানান কসরত করে। কিন্তু অভিনয়টা করতে হবে তো। সংলাপ বলতে হবে তো। ভয়ংকর ভয় হচ্ছিলো। ওয়ার্কশপ করালাম। মেয়েটি যখন অভিনয় করতে শুরু করলো, ভাবা যায় না। মানে প্রত্যেক দিন উন্নতি করছে। এই বাচ্চা মেয়েটি, এগারো বছর বয়স, ও আমার ছবির নায়িকা।
[আলোচনাটা বুদ্ধদেবের নতুন ছবি ‘টোপ’ থেকে বেরুতে শুরু করলো এরপর। নির্মাতা হিসেবে অনেক নামিদামি পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। সে প্রসঙ্গ ওঠালে ভেতরে ভেতরে চটে গেলেন বলে মনে হলো। তার মতো মানুষ তো আর রেগে গেলে চিৎকার করে যাচ্ছেতাই অবস্থা সৃষ্টি করবেন না, যেটা করবেন, আস্তে ধীরে বুঝিয়ে দেবেন, ‘এ প্রসঙ্গের কোনো অর্থ নেই’। করলেন সেটাই। ]
পুরস্কারে অসন্তুষ্টি
আমি দেখেছি, আমার ছবি নিয়ে যখনই কেউ কিছু বলতে চান, যখন আলাপ করিয়ে দেন, পুরস্কারের কথা বলেন। আমি জানি না কি পুরস্কার পেয়েছি, জানতেও চাই না। সেদিন কাগজে দেখলাম, ভারতবর্ষে আমি নাকি এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পুরস্কার পেয়েছি সত্যজিৎ রায়ের পর। এটা কোনো বিষয়ই না আমার কাছে। কেননা আমি জানি, এসব পুরস্কার আমাকে তৈরি করতে পারে না। অনেক পরিচালককে দেখেছি, এই পুরস্কার নিয়ে গর্ব করতে। তারা মনে করেন, পুরস্কার তাদের পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকবে! তাদের গায়ে আঁচ লাগতে দেবে না। তা কখনও হয় না। পুরস্কার কেউ মনে রাখেন না। না সাহিত্যে মনে রাখেন, না সিনেমায়, না সংগীতে।
[আলাপে বুদ্ধদেব এতোই মগ্ন! শুরুতে যে বলেছিলেন ‘জাগিয়ে দেবেন’, তার আর দরকার পড়লো না। কথার তোড়ে ক্লান্তি-ঘুম পালিয়ে গেছে কোথায়! পুরস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিলো। এতোটুকু বলেই থেমে থাকলেন না। এ বিষয়টি বিভিন্নখানেই বুদ্ধদেবকে বিরক্ত করে। ফলে পুরস্কার পাওয়া-না পাওয়া বিষয়ে তার পর্যবেক্ষণ অনেক। সেগুলোই বলতে থাকলেন। টানলেন জীবনানন্দ দাশের কবিতার কথা। এখনও তিনি কতো আধুনিক! শব্দে-বর্ণনায়-উপমায়। বললেন ঋত্বিক ঘটকের কথাও। পুরস্কার তিনিও পাননি!]
চলচ্চিত্রে বাণিজ্য কতোখানি প্রয়োজন
বাণিজ্য ছাড়া হয় না। দীর্ঘ সময় আমি অর্থনীতি পড়িয়েছি। পড়েছি তারও আগে দীর্ঘ সময়। যেটা বুঝেছি যে, বাণিজ্য ছাড়া কবিতা লেখা যায়। যখন কবিতা লিখি তখন বাণিজ্যের কথা ভাবি না। যখন সিনেমা করি, তখন এটা ভাবতে হয়। কেননা দিনের শেষে এটা একটা পণ্য। এবং আমাকে এটা বিক্রি করতে হবে। তো, কোথায় আমি বিক্রি করবো? জায়গা একটা দরকার। আজকেও একজন বলছিলেন, বহুকাল ধরে, ঢাকায় এলেই, একটা খুব দুঃখের কথা শুনি, ছবি দেখানোর জায়গা নেই। সিনেমা হল নেই। বা হল থাকলেও সব ছবি দেখানো যায় না। এর চেয়ে দুঃখের কথা আর কিছু হতে পারে না। কিন্তু কলকাতায়, ভারতবর্ষে এই অবস্থাটা তৈরি হয়নি এখনও। ছবি করলে দেখানো যায়। হ্যাঁ, কেউ হয়তো তিনশ’টা হলে মুক্তি দেন, কেউ হয়তো ত্রিশটা হলে। কিন্তু ছবি দেখানো সম্ভব। বাণিজ্য করা সম্ভব। কিন্তু তাহলে কি করা যায়? তাহলে কি বাংলাদেশে ছবি হবে না? ছবি কেউ করবেন না? আমার মনে হয় বাজারটা খুঁজে পেতে হবে। বাজার কিন্তু আছে।
আমার প্রথম ছবি ‘দূরত্ব’। চাকরি বাকরি ছেড়ে দিয়ে, তার আগে আমি ডকুমেন্টারি ফিল্ম করেছি। তারপর ‘দূরত’¡ করলাম, তো একটা ঘোর থাকে না? আমিও ওই ঘোরের মধ্যে শুরু করেছিলাম, আজও ওই ঘোরের মধ্যেই আছি। ‘দূরত্ব’ করার জন্য কেউ আমাকে টাকা দেয়নি। দেওয়ার কথাও নয়। আমাকে কেউ চেনেন না তখন। নিজে টাকা যোগাড় করে, ধার নিয়ে, মায়ের গয়না বন্ধক রেখে, ছবিটি করেছিলাম। কিন্তু ‘দূরত্ব’ বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম যে, বাজার একটা আছে। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত, আমার প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু বিদেশের বাজারে বিক্রি হয়েছে।
যেমন ধরুন আরেকটা ছবির কথা বলি ‘উত্তরা’, প্রযোজক এসে টাকা দিয়ে গেলেন। আমি পাঠিয়ে দিলাম শিল্প নির্দেশককে, লোকেশন দেখতে। তারপর একদিন প্রযোজক বললেন, ‘আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে গেছে ব্যবসার। ছবিটা করতে পারছি না। ’ সাংঘাতিক অবস্থা। তখন আমি বললাম, ঠিক আছে। অফিসে বসে কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম, আমিই প্রযোজনা করবো। এর আগেও প্রযোজনা করেছি। তিনটে ছবি। ‘দুরত্ব’ আমার, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘ফেরা’ এবং ‘উত্তরা’ও করলাম। এই ‘উত্তরা’ শুরু করতে করতেই কিন্তু আরেকটা কাজ করলাম। সেটা দিয়ে যে টাকাটা পেলাম, তাতেই খরচ উঠে গেলো। তারপর ভেনিসে সেটা দেখানো হলো। অ্যাওয়ার্ড পেলো, এবং সে ছবি হটকেকের মতো বিক্রি হয়ে গেলো। প্রত্যেকটা ছবি কিন্তু এভাবে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, এখন আমি জানি যে বাজারটা আছে।
সব ছবি বিকোয় না
মুশকিল হচ্ছে যে, এখন কলকাতায় আমাকে অনেকেই বলেন, তাদের ছবি বিক্রি করে দিতে। হয় না। সব জিনিস বিক্রি হয় না। সেজন্য কতোগুলো গুণের দরকার হয়। যেমন মনে আছে, বহুকাল আগে, সে বছর বার্লিনে যাবো আমার ছবি নিয়ে। একজন তামিল পরিচালক, তার একটা ছবি তামিল বা তেলেগু, বললেন, ‘আপনার সঙ্গে যাবো। আপনি খালি একটু সাহায্য করবেন। আপনার পরিবেশকদের যদি একটু আমন্ত্রণ জানান। ’ আমি বললাম, ঠিক আছে চলুন। কিন্তু ছবিটা বিক্রি হবে কি-না আমি জানি না।
ছবিটা আমি দেখেছিলাম। বিষয় হচ্ছে, আপনি জানেন যে, ভারতবর্ষ একটা অদ্ভুত দেশ। ভারতবর্ষের নানান বিষয়। যেমন, কেউ যদি কাউকে ছুঁয়ে দেন, তাহলে তার খাওয়াই বন্ধ হয়ে যায়। স্নান-টান করে আবার খেতে বসেন।
[কাশতে শুরু করলেন বুদ্ধদেব। থেমে থেমে, অনেকক্ষণ ধরে। পানির বোতল এগিয়ে দিলেন একজন। গলায় ঢেলে, একটু বিশ্রাম নিয়ে, ফিরে এলেন প্রসঙ্গে। ]
ছবিটা দেখার পর আর কেউ কিনলেন না। কিনলেন না তো বটেই। আমার পরিবেশকরা এতো বিরক্ত হলেন! ওরা ভাবতেই পারেন না, একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে স্পর্শ করলে, এমন কোনো ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু বিষয়টা তো মিথ্যে না। ভারতবর্ষে তো ঘটনাটা ঘটছে। ফলে পরিচালক বলতেই পারেন যে, আমার দেশে যা ঘটছে, সেটা নিয়েই ছবি করছি। আমার বক্তব্য, এমন অনেক ঘটনাই ঘটে। ভারতবর্ষে ঘটে, বাংলাদেশে ঘটে- সব দেশেই ঘটে। কিন্তু সব ঘটনা নিয়ে ছবি করলেই যে বাজার আসবে, তা কিন্তু নয়।
বাজারটা খুঁজে বের করতে হবে। কেননা, এই বাজার ছাড়া কিন্তু আমাদের দেশের সংস্কৃতির এগিয়ে যাওয়া সম্ভবই নয়। সেজন্য সবাইকে বলি, কলকাতার নতুন পরিচালকদের, কি ছবি করবেন, সেজন্য সময় দিন। অনেক সময় ধরে ভাবুন। কি ছবি করবেন, কেন করবেন, কাদের জন্য করবেন এবং কোন বাজারের জন্য করবেন, ভাবুন। আমি জানি, আমার ছবি কলকাতায় রমরমিয়ে চলবে না। কিন্তু আমার ছবি থেকে ঠিকই টাকা রোজগার করতে হবে। আমার ছবি এমনই হবে যে, সারা পৃথিবীর মানুষকে স্পর্শ করবে। এটা কিন্তু হওয়া দরকার। এটা যদি হয়, বাজারটাও তৈরি হয়ে যায়।
রাইসুল ইসলাম আসাদে মুগ্ধ
সিনেমা করতে গিয়ে দেখেছি- ক্যামেরার সামনে যে মুখ, সেটা কিন্তু আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে, উৎসাহ জোগাবে। আপনি অনেক কথা বলবেন, যা আপনি ভাবেননি। কথাগুলো, মনে হবে, আপনি মুখ দিয়ে বলবেন না, (বুকের কাছে হাত রেখে) এই জায়গা দিয়ে বলবেন। বাংলাদেশে এমন একজন অভিনেতা আছেন যিনি আমার সঙ্গে কাজ করেছেন, আসাদ [রাইসুল ইসলাম আসাদ]। আসাদ আমার দু’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ওকে দেখেও আমার মনে হয়েছিলো, অনেক কাজ ওকে দিয়ে করানো যায়। অসামান্য কাজ করেছিলো।
মোবাইল রেকর্ডারে টাইম বাড়তে বাড়তে মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টার কাছাকাছি। শিল্পকলা একাডেমীর সন্ধ্যায় বসে বুদ্ধদেব স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে চলে গেলেন সেই কতোকাল আগে! সেদিনটাও এমনই বোধহয়। শান্ত সন্ধ্যা। বাইরে থেকে ফিরেছেন। বাড়িতে কেউ নেই। বুদ্ধদেবের ফ্ল্যাটের ডিজাইনটা আবার এমন- দরজা খুলেই বড় ড্রয়িংরুমের মতো জায়গা। ওখানে আড্ডা-গল্প-গবেষণা-খাওয়া দাওয়া চলে। পেরিয়ে, তারপরই রুমগুলো।
দরজা খুলে ঢুকেই বুদ্ধদেব দেখলেন, কেউ নেই, কিচ্ছু নেই। ড্রয়িংরুম ভর্তি আসবাবপত্র-টিভি-বই; কিচ্ছু নেই। পুরোটা ফাঁকা। উল্টো একটা মাঠ এসে হাজির! বিস্তীর্ণ মাঠ। সবুজ। বুদ্ধদেবের সেই ছেলেবেলার মাঠটার মতো। যেখানে তিনি খেলতেন, বিকেলবেলায়। ছোট লাল-লাল পোকাগুলো উড়ছে। ওই পোকাগুলো হাতের তালুতে নিয়ে বুদ্ধদেব খেলতেন ছোটোবেলায়। মাঠের আশপাশে গাছগুলো আছে। আর আছে তার বন্ধুরা। ছেলেবেলার বন্ধু। তারা বুদ্ধদেবকে ডাকছেন হাত নেড়েনেড়ে।
‘পনেরো-বিশ সেকেন্ড,’ বুদ্ধদেব বললেন, ‘এরকমটা আমি দেখলাম। তারপর সব ঠিকঠাক। আগে যা ছিলো, সবই আছে। এই যে আমি দেখলাম, এ ব্যাপারটি কিন্তু আমার সিনেমায় চলে এলো। ’
যে জন্য বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর সিনেমা-কবিতায় আরও বেশি করে আকৃষ্ট হয় মানুষ। মুগ্ধ হয়। এটাই সেই এক্সটেনডেড রিয়েলিটি, ম্যাজিক রিয়েলিজম। বুদ্ধদেব বুঝিয়ে দিলেন মাত্র একটি উদাহরণে, কতো সহজে!
তারপরও যদি আরও প্রশ্ন জাগে, কি করে ভাবেন তিনি এতোসব গল্প? কি করে নির্মাণ করেন এতো দুর্দান্ত চলচ্চিত্র? বুদ্ধদেব বলেন, ‘কিছুটা বাস্তবতা মিশাই, কিছুটা স্বপ্ন, আর কিছুটা ম্যাজিক। মিশিয়ে একটা মিশরি তৈরি করি। সেটাই আমার ছবি। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
কেবিএন/জেএইচ