ছেঁড়া তার জোড়া দেওয়া যায়। রণবীর কাপুর ও দীপিকা পাড়ুকোন সেটাই দেখালেন।
বর্তমান প্রেমিক রণবীর সিংয়ের সঙ্গেও দীপিকা অভিনয় করেছেন, সামনে মুক্তি পাবে এ জুটির ‘বাজিরাও মাস্তানি’। তবে কাপুর-পাড়ুকোন একফ্রেমে এলেই তোলপাড় হয়ে যায় চারপাশ! এই রসায়নের কারণ ওই একটাই- পুরনো প্রেম। প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকা হওয়া সত্ত্বেও কী করে এতো অনায়াসে পরস্পরের সঙ্গে মিলেমিলে কাজ করলেন রণবীর-দীপিকা, তা ভাবলে অবাকই হতে হয়। তার ওপর আছে গভীর চুম্বন দৃশ্য! বলিউডে এটা সত্যিই বিরল।
যদিও দীপিকার কথায়, ‘এ আর এমন কী! আমি সকালে উঠি, রণবীরও ওঠে। সেটে আসে, আমিও সেটে যাই। তারপর কাজ করি। ’
‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র পর এবার ইমতিয়াজ আলির ‘তামাশা’য় অভিনয় করলেন রণবীর-দীপিকা। সাজিদ নাদিয়াড়ওয়ালা পরিচালিত এ ছবির মাধ্যমে দু’বছর পর পর্দায় দেখা যাবে তাদের রসায়ন। তাদের এই সাঁকোর ভিত্তি কোথায়? উত্তরটা পাওয়া যাবে বন্ধুত্বে। তাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা যেন অফুরান। নিজেদের প্রেমটা পরিণতি না পেলেও পরস্পরের প্রতি স্নেহ বা বন্ধুত্বের জায়গাটা ঠিকই ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন দু’জনই।
অতৃপ্ত প্রেম থেকে তিক্ততা জন্ম নেয়নি। অসম্পূর্ণ প্রেম মেনে নিয়েছেন তারা। এই পরিণতি দু’জনই গ্রহণ করেছেন। বাস্তব জীবনের বিচ্ছেদের প্রসঙ্গ পর্দায় কখনও টেনে আনেননি তারা। সম্পর্কচ্ছেদের পরও জুটিবদ্ধ হন ২০১৩ সালের ব্লকবাস্টার ছবি ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’তে।
ওটাই রণবীরের সর্বশেষ ব্যবসাসফল ছবি। এরপর ‘বেশরম’ (২০১৩), ‘রয়’ (২০১৫) এবং ‘বোম্বে ভেলভেট’ (২০১৫)- তিনটিই ফ্লপ। তাই আবার দীপিকার সঙ্গে জুটি বাঁধায় তার ভাগ্য ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভিনয়ের বেলায় ২৯ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীকে ভয় লাগে রণবীরের! ৩৩ বছর বয়সী এই তারকা ভাষ্য, ‘অভিনয়শিল্পী হিসেবে দীপিকার উন্নতি চোখে পড়ার মতো। ওর সঙ্গে কাজ করলেই ভালো লাগে। সৃজনশীল সন্তুষ্টিও আসে। ওর দিকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে নজর রাখি। ও সত্যিই ভয় ধরিয়ে দেয় অভিনয়ে!’
দীপিকার মতো ইমতিয়াজ আলিও রণবীরের জন্য সৌভাগ্যের। ‘রকস্টার’ই এর প্রমাণ। রণবীর তো বলেনই, ‘ইমতিয়াজ ও দীপিকা সত্যি সত্যি আমার ভালো চায়। ’ রণবীর-দীপিকা দু’জনই চান, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’র সাফল্য ফিরে আসুক। পরিচালক ইমতিয়াজেরও চাওয়া এটা। ছবিটা দুই তারকাকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা তার। একই পরিচালকের সঙ্গে দীপিকা এর আগে কাজ করেছেন ‘লাভ আজকাল’-এ। ওটাও ছিলো হিট।
‘তামাশা’র প্রচারণায় রেলগাড়িতে চড়েছেন রণবীর-দীপিকা। তবে উড়োজাহাজেই চড়ার কথা ছিলো তাদের। দীপিকার খায়েশ হওয়ায় তা বদলে গেলো ট্রেনে! সুবিধা এক্সপ্রেসে চড়ে মুম্বাই থেকে দিল্লি যাওয়ার পথে ট্রেনের ভেতর বসে বসে ডাবও খেয়েছেন। লখনউতে ফুটপাতে খেয়েছেন পানি-পুরি (ফুচকা)। রসিকতা করে রণবীর দিল্লিতে বলে ফেলেন, তিনিই দীপিকার সর্বকালের প্রিয় অভিনেতা!
‘তামাশা’ হলো রোমান্টিক ড্রামাভিত্তিক ছবি। এতে বেদ বর্ধন সাহানি চরিত্রে রণবীর আর তারা মহেশওয়ারির ভূমিকায় দেখা যাবে দীপিকাকে। তারা ফরাসি কমিক সিরিজ অ্যাস্টেরিক্সের ভক্ত। তাই ফ্রান্সের করসিকায় যায় সে। তার মূল্যবোধের ভেতরটা খুব শক্ত। কিন্তু একই সঙ্গে সে আধুনিক।
এদিকে সিমলায় বেড়ে ওঠা বেদ নিজের ও পরিবারের স্থির করা লক্ষ্যের পিছু ছুটতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে নিজেকেই। ঠিক তখনই তার জীবনে আসে তারা। এই মেয়েটার প্রেরণায় নিজের ভেতরের ‘আমি’টাকে নতুনভাবে খুঁজে পায় সে। রণবীর মনে করেন, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের আঁধারে বোনা হয়েছে ‘তামাশা’র গল্প। তিনি বলেছেন, ‘ইমতিয়াজ রাধা-কৃষ্ণের যুগে ফিরে গেছেন। গভীর আবেগের একটা গল্পকে বিনোদনের মোড়ক দেখিয়েছেন তিনি।
‘তামাশা’য় ইমতিয়াজের বাস্তব জীবনের কিছু মুহূর্ত হয়তো আছে, তবে এটাকে আত্মজীবনীমূলক ছবি বলতে নারাজ তিনি। এবারই প্রথম নিজের পরিচালিত ছবির নাম পছন্দ হয়েছে বলে স্বীকার করলেন এই ৪৪ বছর বয়সী। ‘তামাশা’ মানে কোনো ঘটনা যা মানুষ দেখে অথবা দেখে উপভোগ করে। এআর রহমানের গান ‘তামাশা’র আরেক প্রাণ। এর মধ্যে বিচ্ছেদী গান ‘আগার তুম সাথ হো’র দৃশ্যধারণ করতে গিয়ে দু’জনেই খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
ইমতিয়াজের ছবিগুলোতে সাধারণ বিরহ আর যন্ত্রণার কথাই বেশি থাকে। তবে ‘তামাশা’য় ‘রূপকথার গল্পের মতো অতঃপর তাহারা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিলো’ ধরনের সমাপ্তি আছে। একই সঙ্গে সমালোচকদের প্রশংসা ও বাণিজ্যিক সাফল্যের সুবাদে ইমতিয়াজের আলাদা সুনাম আছে বলিউডে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
সরণবীর-দীপিকার জুটি, এআর রহমানের সংগীতের চেয়ে পরিচালকের নাম ইমতিয়াজ আলি বলেই ‘তামাশা’র অপেক্ষায় আছেন বলিউডবাসীও। পরিচালক করণ জোহর টুইটারে লিখেছেন, “ইমতিয়াজের ছবির জন্য তর সইছে না! রণবীর-দীপিকা নয়, ‘তামাশা’ দেখবো শুধুই ইমতিয়াজের জন্য। ”
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ