২০১৫ সালে এসেও ‘দুঃসময়’ কাটেনি টিভি নাটকের। ভালো গল্পের সংকট, বাজেটে খরা, বিশৃঙ্খল নিয়ম-নীতিসহ ইত্যাদি প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়েও কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক চেষ্টা করেছেন ‘ভালো কাজ’ উপহার দেওয়ার।
আফরান নিশো
তিনি গোঁ ধরে বসে আছেন- কোনোভাবেই চলচ্চিত্র না, নাটকটাই করে যাবেন। কারণ হিসেবে নাটকের প্রতি ভালোবাসা যতোটা, তার চেয়ে বেশি ‘সেফ সাইডে থাকা গেলো’ মনোভাব। চলচ্চিত্রে অনেক ঝক্কি! রিস্কও! তাই নিশোর এই ‘শুধু নাটককেন্দ্রীক’ অবস্থান যেমন পরিকল্পিত, তেমনি বোধহয় এটাও পরিকল্পনায় ছিলো- নিজেকে নিয়ে যতো ধরণের এক্সপেরিমেন্ট করা যায়, করবেন। বছরজুড়ে তার অভিনীত নাটকগুলোতে সেটাই দেখা গেছে। শহুরে কর্পোরেট থেকে শুরু করে প্রেমিক, সংসারী, গ্রাম্য যুবক, ক্ষ্যাপাটে ক্রিয়েটিভ; নিজেকে তিনি ভেঙেছেন বারবার। কোনো বিশেষ ধরণের চরিত্রে আটকে পড়েননি- এটাই নিশোর সবচেয়ে বড় সাফল্য।
তবু বছরজুড়ে তাকে নিয়ে যে সমালোচনা একেবারেই হয়নি, তা নয়। সেটে দেরি করে আসা, গল্পকে নিজের মতো করে বদলে দেওয়া- এমন কিছু আপত্তিকর বিষয় ছিলোই তার নামের পাশে। কিন্তু ‘কাজটা তো ভালো হচ্ছে’ সান্ত্বনা নিয়ে অভিযোগগুলোতে ক্ষমাশীল অবস্থান নিতে দেখা গেছে নির্মাতাদেরকে। সবমিলিয়ে অভিনয়ের বৈচিত্র, গল্প-চরিত্র বাছাইয়ের বুদ্ধিমত্তায় ভর করে এ বছরের নাটকপাড়ায় নিশোই সেরা হিরো।
জিয়াউল ফারুক অপূর্ব
সেই যে কবে-কখন অপূর্বর নামের আগে ‘রোমান্টিক হিরো’ খেতাব বসে গেলো, সেটার বদল ঘটেনি এখনও। আফজাল হোসেনের পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে টিভি নাটকে যে আরেকজন প্রেমিক পুরুষের চাহিদা ছিলো, সেটি অপূর্বকে দিয়ে পূরণ হয়েছে ভালোভাবেই। পুরো বছর অপূর্ব প্রেমে-বিরহে-সংকটে-আনন্দে জমিয়ে রেখেছেন টিভি পর্দা। যদিও মাঝে মধ্যে চেষ্টা করেছেন ঘরানা বদলানোর, হাজির হয়েছেন ডার্কস্টোরিতেও। কিন্তু দিন শেষে দর্শক তাকে ‘রোমান্টিক’ হিসেবেই চাইছে, বোঝেন অপূর্বও।
এ বছরের শেষের দিকে এসে অপূর্বর অভিনয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে গেছে। মুক্তি পেয়েছে প্রথম চলচ্চিত্র ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’। যদিও ওই হারে সাড়া ফেলতে পারেনি, কিন্তু অপূর্ব দমে নেই। পরিকল্পনা করছেন পরবর্তী ছবির। দ্বিতীয় ছবি দিয়ে ‘অ্যাকশন হিরো’র খেতাবটিও গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার পথেই হাঁটছেন তিনি। বছর শেষে এসে অপূর্বর প্রতি সমালোচকদের অনুরোধ- ‘এবার একটু ধীরে, বুঝে শুনে পা ফেলুন মশাই! সব নাটকে আপনাকেই অভিনয় করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ’
আবদুন নূর সজল
প্রায় ছিঁটকে পড়তে পড়তে বেঁচেই গেছেন সজল। তার অবস্থা এখন অনেকটা খড়কুটো আঁকড়ে ভেসে থাকার মতো। অভিনয় যে করছেন না, নাটক যে নেই তার; তা নয়। কিন্তু জনপ্রিয় কাজের দেখা সজল পাচ্ছেন না বহুদিন ধরেই। এ ক্ষেত্রে তার টাইপড অভিনয় এককভাবে দায়ি। পুরো বছরজুড়ে তার ‘সজলীয় ভঙ্গি’ ভেসেছে টিভিপর্দায়। মাঝখানে ফোকাসে এসেছিলেন চলচ্চিত্র ‘রান আউট’ দিয়ে। সজলের প্রথম বাণিজ্যিক সিনেমা। কিন্তু তার ক্যারিয়ারে ইতিবাচক কোনো বাঁক এ ছবি এনে দিতে পারেনি। এখনই নিজেকে নিয়ে আরও গভীরভাবে না ভাবলে, পরিকল্পনা স্থির করতে না পারলে, আসছে বছরটা সজলকে যে মনে রাখবে; এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
* শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) বাংলানিউজের বিনোদনে পড়ুন :
দেশীয় টিভি নাটকের সালতামামি ২০১৫ (পর্ব ৫) : অপর্ণার বাজিমাৎ, মমও আছেন, মৌসুমীর বাঁকবদল
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৫
কেবিএন
** বছরজুড়ে ছোটপর্দা তারুণ্য-বান্ধব, কিন্তু…
** তিশার প্রতিদ্বন্দ্বী নেই!
** সাবধানী মোশাররফ, জাহিদ গতানুগতিক, মাহফুজের দূরদৃষ্টি
তারার ফুল
টিভি নাটকের সালতামামি ২০১৫ (পর্ব ৪)
এগিয়ে নিশো, অপূর্ব রোমান্টিকই, সজল সমান্তরাল
খায়রুল বাসার নির্ঝর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।