ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

তারার ফুল

কলকাতা থেকে জনি হক

এ আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে : জকি আহাদ

জনি হক, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
এ আয়োজন মাইলফলক হয়ে থাকবে : জকি আহাদ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের আয়োজনে নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে চলছে বাংলাদেশ বিজয় উৎসব।

শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) এর পর্দা নামবে।

পাঁচদিনের এ আয়োজন ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। প্রতিদিনই দর্শক সমাগম বেড়েছে। বাংলাদেশি শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গবাসী বাংলাদেশি পণ্যসামগ্রী কিনছেন। পাশাপাশি খেয়েছেন বাংলাদেশি মুখরোচক খাবার।

এ সফল আয়োজন নিয়ে শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজের মুখোমুখি হলেন কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনার জকি আহাদ।

বাংলানিউজ : উৎসবটি এতো বড় পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা কি আগে থেকেই ছিলো?
জকি আহাদ : আগের দু’বছর আমরা নানা কারণে উৎসবটি করতে পারিনি। তাই এবার সুন্দরভাবে ও বড় পরিসরে উৎসব আয়োজনের কথা ভাবলাম। বড় পরিসরে করছি বলে আমরা নাম দিয়েছি ‘বাংলাদেশ বিজয় উৎসব’। আগে আমরা এ আয়োজনকে বলতাম ‘বাংলাদেশ উৎসব’। বিজয়ের মাস তাই ‘বিজয়’ শব্দটা যুতসই। বলতে দ্বিধা নেই, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার প্রচুর উৎসাহ, অনুপ্রেরণা, সাহায্য, সহযোগিতা দিয়েছেন আমাদের। এটা এককথায় অতুলনীয়। মনে হচ্ছিলো যেন উৎসবটা তার, আমাদের না! তার সঙ্গে আমার দেখা হলেই এমন একটি আয়োজনের জন্য বলতেন। তখন থেকে আমরা ভেন্যু খুঁজছিলাম। এ ক্ষেত্রে তার অত্যন্ত সহযোগিতা আমরা পেয়েছি। নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামের মতো ২৫ হাজার স্কয়ার ফুটের এতো বড় একটি ভেন্যু পাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছিলো। এখানে আমরা একই সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারছি, স্টল দিয়েছি বাংলাদেশি পণ্যের, এগুলো বিক্রিও হচ্ছে দেদার। এর চেয়ে ছোট ভেন্যু হলে আমরা এতোকিছু করতে পারতাম না। এবারই প্রথম আমরা উপ-হাইকমিশনের আঙিনার বাইরে এসে এতো বড় ভেন্যুতে উৎসবটি করলাম, এটা একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।

বাংলানিউজ : প্রতি বছর কি নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে বিজয় উৎসব করবেন?
জকি আহাদ : আমরা চেষ্টা করবো। এমন বড় পরিসরেই করার ইচ্ছা আছে। পারলে আরও বড় পরিসরে করতে চাই। শুধু আমার ইচ্ছা থাকলেই তো হবে না, এটা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছ থেকে একই রকম সাহায্য-সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণা পেলে অবশ্যই আমরা এটা অব্যাহত রাখবো।
 
বাংলানিউজ : উৎসবের বেশিরভাগ দর্শক-শ্রোতাই পশ্চিমবঙ্গের। বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনা উপভোগ কিংবা বাংলাদেশি পণ্যসামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকে কীভাবে দেখছেন?
জকি আহাদ : এটা অভাবনীয় একটি অনুভূতি। আমি দায়িত্বে এসেছি এক বছর হলো। আসার পর থেকে যতো মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে, সবারই কোথাও না কোথাও একটা সূত্র আমাদের বাংলাদেশে রয়ে গেছে। হয় দাদা, ঠাকুরদা বা তারও আগের প্রজন্ম বা নিজের বাবা, অনেকেই বাংলাদেশে জন্মেছেন বা ছিলেন অথবা কর্মজীবন পার করেছেন। পরে হয়তো চলে এসেছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে এ অনুভূতি হয়েছে যে, পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে আমাদের উৎসব এজন্য এতো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। অন্য রাজ্যে করলে হয়তো এতোটা পাবে না। আর আমাদের দুই বাংলার ভাষা, সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, চিন্তাধারা- সবই এক। হতে পারে বাংলাদেশ একা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। আর পশ্চিমবঙ্গ ভারতবর্ষের একটি রাজ্য মাত্র। সে হিসেবে আমাদের মাঝে একটা দৃশ্যমান দেয়াল আছে। কিন্তু অন্তরে সেই দেয়ালের অস্তিত্বই নেই। সেজন্য সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পছন্দ করে এমন মুখরোচক খাবার-দাবার আমরা স্টলে রেখেছি। যেমন ভুনা খিচুড়ি, এটা তারা ভীষণ পছন্দ করছে। বিরিয়ানি ও নানান রকম পিঠা রেখেছি। অবশ্য প্রতিদিনই খাবারের টান পড়ছে। এর একটা কারণও আছে। ইনডোর স্টেডিয়ামের ভেতরে খাবার-দাবারের অনুমতি দেওয়া হয় না। এজন্য আমাদের বাইরে আলাদা একটা জায়গায় নিয়ে আসতে হয়েছে খাবারের স্টলকে। তাই পরিসরটা অতো বড় করা যায়নি। এ কারণে মানুষকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কিনতে হচ্ছে। আমরা বুঝি ব্যাপারটা। তবু যতোটা পারছি চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করছি। আগামীতে খাবারের স্টল আরও বড় করবো আমরা।  

বাংলানিউজ : রুনা লায়লার সঙ্গে মঞ্চে উঠে নেচেছেন, গলাও মিলিয়েছেন। জনসম্মুখে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আগে হয়েছে?
জকি আহাদ : ক’দিন আগে আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনে একটি মেলা করেছিলাম। সেখানে হঠাৎ করেই আমাকে বলা হয়েছে গান গাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। যন্ত্রশিল্পীরা পেশাদার ছিলেন, আর গানে যেহেতু আমার আগ্রহ আছে, তাই গেয়ে ফেললাম। আর রুনা আপা হচ্ছেন জীবন্ত কিংবদন্তি। উনি আমাকে আর আমার স্ত্রীকে মঞ্চে ডেকেছিলেন। তার কয়েকটা গান আছে যেটা শুনে কেউ সোজাভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, এটা আমার বিশ্বাস হয় না। এগুলো আপনার মনে যেমন দোলা দেবে, আপনার শরীরেও দোলা দেবে। এজন্য নেচেছি। একপর্যায়ে তিনি যখন আমার দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিলেন, তখন ভাবলাম ফিরিয়ে দেওয়াটা হয়তো অশোভন দেখাবে। কারণ তিনি উঁচু স্তরের একজন শিল্পী। তাই একটা লাইন দু’বার গেয়েছি। এটা আমার জন্য বিরাট সৌভাগ্য। রুনা লায়লার মতো একজন শিল্পী গানের ফাঁকে আমাকে সুযোগ দিলেন, আমিও অংশ নিলাম, এটা আমার পরম পাওয়া।
 
বাংলানিউজ : আপনার মধ্যে সংস্কৃতির ব্যাপক প্রভাব আছে মনে হচ্ছে...
জকি আহাদ : আমি সংস্কৃতিমনা অবশ্যই। শুধু আমি নই, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ সংস্কৃতিমনা। কেউ চর্চাটা করতে পারে, কেউ করার সুযোগ পেয়ে ওঠেন না। ছোটবেলা থেকেই গান বা সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আমার প্রচণ্ড আগ্রহ। ছোটবেলায় আমি রেডিও, টিভি ও থিয়েটারে নিয়মিত নাটক করতাম। কিন্তু কখনও গান শেখার সুযোগ হয়নি। গান নিজের জন্য গাই, আত্মসন্তুষ্টির জন্য গাই। এটা আমার ভালো লাগা। গান আমি খুব পছন্দ করি। তবে সেটা বাংলা গান হতে হবে। জানি না কেনো, অন্য ভাষার গান আমাকে টানে না, আকৃষ্ট করে না। একটু দেখেন চিন্তা করে- মানুষ তো ধর্মের জন্য না, ধর্মই হচ্ছে মানুষের জন্য। এমন কোনো ধর্ম কিন্তু নেই, যে ধর্মে সুরের অস্তিত্ব নেই। খুঁজে দেখেন প্রতিটি ধর্মে সুর আছে। সেজন্য আমি ভীষণভাবে বিশ্বাস করি, সুর হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগসূত্রের একমাত্র মাধ্যম। সেটা হতে পারে আল্লাহ, ভগবান, ঈশ্বর, যা-ই বলেন। এটা অন্তর থেকেই চলে আসে।

বাংলানিউজ : বাংলাদেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য দিবস আপনারা উদযাপন করেন কীভাবে?
জকি আহাদ : স্বাধীনতা দিবস আমরা অন্যরকমভাবে উদযাপন করি। এদিন অনেক আনুষ্ঠানিকতা থাকে। কারণ বিদেশের মাটিতে এ দিনটিকে সামনে রেখে কাজ করতে গেলে অন্যান্য কূটনীতিকদের রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের সুযোগ নেই। আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমরা কিছুটা সাংস্কৃতিক আবহ রাখি। তবে জাঁকজমক কিছু করি না। ওইদিন শোকের প্রতীক হিসেবে আমরা বুকের পাশে কালো ব্যাচ পরি। কারণ ভাষার জন্য রক্ত দিতে হয়েছে আমাদের।

১৬ ডিসেম্বর যেহেতু চূড়ান্ত বিজয়, আমরা স্বাধীন হয়েছি, নতুন দেশ পেয়েছি, পৃথিবীর মানচিত্রে আমাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে ফেলেছি, সেজন্য বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আমরা উৎসবে মেতে উঠি। পহেলা বৈশাখের কথাও বলতে পারেন। বাংলা নববর্ষকে বরণ করার দিন এটা। আমাদের প্রতিটি বিশেষ দিবস ও উৎসবের আলাদা আবহ আছে। এর মধ্যে বিজয় উৎসবের মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
 
বাংলানিউজ : এক বছর হলো আপনি উপ-হাইকমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এই যে ছুটোছুটি, উপভোগ করছেন কেমন?
জকি আহাদ : অসাধারণ! চমৎকার! প্রায় প্রতিদিনই রাত দুটো-তিনটের দিকে খাটে যাচ্ছি ঘুমাতে। আবার সকাল সাতটায় উঠে যাচ্ছি। তবু আমার কাছে ক্লান্তিটা ক্লান্তিকর মনে হয় না, কারণ পশ্চিমবঙ্গ সাংস্কৃতিক দিক থেকে অনেক ভাইব্রেন্ট। এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি, একেবারে মন খুলে কথা বলছি। এটা অন্য দেশে গেলে কিন্তু আমি পারতাম না। এখানে এক বছর চোখের পলকে কোনদিক দিয়ে যে চলে গেছে, আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না! ১৭ বছর ধরে চাকরি করছি, এর মধ্যে কলকাতার সময়টাই আমার কূটনীতিক হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। সবার সহযোগিতা আর ভালোবাসায় অসাধারণ সময় কাটাচ্ছি।
 
কলকাতা সময় : ০৩০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৫
জেএইচ/আরএ

** মুক্তিযোদ্ধাদের গান গেয়ে শোনাতেন আলমগীর
** রুনা-নচিকেতার দ্বৈত মুহূর্ত
** তোরা যাসনে ও পাগলের কাছে!
** হিন্দি গান গাইলেনই না রুনা লায়লা
** বাংলাদেশ বিজয় উৎসবে বিপুল দর্শক সমাগম
** বাংলাদেশই বাংলা ভাষাটা ধরে বেঁচে আছে
** জমে উঠেছে বাংলাদেশ বিজয় উৎসব
** বিজয় দিবসের কাকভোরে কলকাতার পথে পথে
** নেতাজী ইনডোর স্টেডিয়ামে এক টুকরো বাংলাদেশ
**কলকাতায় শুরু হলো বাংলাদেশ বিজয় উৎসব
** ‘মমতার অন্তরের একদিকে পশ্চিমবঙ্গ অন্যদিকে বাংলাদেশ’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ