ফুকেট, থাইল্যান্ড থেকে: চারদিকে মোহ জড়ানো এক দ্বীপ। অাশপাশের ছোট পাথরের পাহাড়গুলোর মাঝখানে রহস্যময় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক টুকরা প্রস্তর।
দুনিয়া কাঁপানো গোয়েন্দা চরিত্র জেমস বন্ড। পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা গডফাদারদের কাবু করেন। এম সিক্সটিনের গুপ্তচর জেমস বন্ড সিরিজের তিন নম্বর এবং সাত থেকে নয় নম্বর ছবিগুলো পরিচালনা করেন গাই হ্যামিল্টন। এর মধ্যে নবম কিস্তি ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’-এর তিনি এসেছিলেন থাইল্যান্ডে। জেমস বন্ডের ভূমিকায় এটি ছিলো রজার মুরের দ্বিতীয় ছবি। এর দৃশ্যধারণের পর থেকেই থাইল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের ফান এনজিএ দ্বীপের নাম হয়ে যায় জেমস বন্ড আইল্যান্ড। জেমস বন্ড সিরিজের নবম ছবিতে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে ফান এনজিএ দ্বীপের সৌর্ন্দয। ফলে প্রতিদিন কয়েক হাজার পর্যটক দেখতে আসেন এই দ্বীপ।
ফুকেট শহর থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে গিয়ে নৌকায় চড়তে হয়। সাগরপাড়ে আকাশছোঁয়া পাথরের পাহাড়গুলোর বাঁক ছাড়িয়ে চলতে থাকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের গেওয়া আর গড়ান গাছ মন কাড়ে পর্যটকদের। চোখ দিয়ে যতোটা সৌন্দর্য গেলা যায় আর ক্যামেরাবন্দি করা যায়, সেদিকে ডুবে থাকেন তারা।
প্রায় ২৫ মিনিটের নদীপথ পেরিয়ে যে দ্বীপের দেখা মিললো সেটা স্বপ্নের মতো। দাম্ভিকভাবে দাঁড়িয়ে আছে এক পর্বতচূড়া। ট্যুরিস্ট গাইড মেয়েটি থাই ভাষার টানে ইংরেজিতে বললেন, ‘দিস ইজ জেমস বন্ড আইল্যান্ড। দিস ইজ ফ্রন্ট সাইড। ইউ উইল টেক আওয়ার বোট অ্যাট ব্যাক সাইড। ’ এগুলোর বাংলা করলে দাঁড়ায়- এটা হলো জেমস বন্ড দ্বীপ। এটা সামনের অংশ। আমরা নৌকা নিয়ে পেছনের অংশে যাবো।
সেখানে মানুষ খুব কম। দু’তিনজন পশ্চিমা নারী সাঁতরাচ্ছেন পুরুষ বন্ধুদের নিয়ে। তবে জেমস বন্ড ছবির পরিচিত দৃশ্যের সঙ্গে মিলছে না! পুরো দ্বীপ অাধঘণ্টার মধ্যে হেঁটে আসা যায়। একটা পাহাড়ের চূড়ায় উঠলাম। এখানকার পাথরগুলো পিচ্ছিল। তাই সাবধানে পা চালাতে হবে। সামান্য ভুল হলেই ধারালো পাথরে পা কেটে ঝরতে পারে রক্ত।
কয়েকটি পাথরের খন্ডকে আড়াল করে এই দ্বীপ থেকে জেমস বন্ডকে মুক্ত করে নিয়েছিলেন এম সিক্সটিনের অনুজ সহকর্মী গুডনাইট। এনার্জি এন্ড সোলার ব্যবসায়ী হাই তাইয়ের মাধ্যমে মন্দ মানুষ ফ্রান্সিসকো স্ক্রামানজাকে ধরতে ব্যাংককে এসেছিলেন বন্ড। তবে ক্ষতিকর সোলার ব্যবসায়ী স্ক্রামানজা অাটকে ফেলেন তাকে। এই ভিলেন একটি সোনালি রঙা পিস্তল ব্যবহার করেন। এজন্যই ছবিটির নাম ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’।
একটু চূড়া পেরোলেই বন্ড আর গুডনাইটের সেই দৃশ্যের প্লট চোখে পড়ে। সত্যি আশ্চর্য রহস্যময় সুন্দর। বেলনাকৃতির পাথরের চূড়ার সরু অংশটিই পানিতে। ধীরে ধীরে ওপরে প্রস্থে চড়া হয়েছে। ঠিক যেন পানি থেকে পাহাড়ের ধার ঘেষে উঠে আসছেন রজার মুর! একটুও পরিবর্তন হয়নি দ্বীপটির।
এখানে জেমস বন্ডের রেপ্লিকা পাওয়া যায়। আর আছে ঝিনুক-শামুকের বিভিন্ন শো-পিস। এই দ্বীপের একটি পাহাড় বেশ মসৃন। কয়েক শত ফুট উচুঁ পাহাড় যেন হেলে পড়েছে আরেকটির গায়ে। বড় পর্দায় এই পাহাড়ের সরু পথ ধরেই বেরিয়ে গিয়েছিলেন এম সিক্সটিনের প্রতিনিধিরা।
১৯৭৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গান’ ছবির বাজেট ছিলো ৭০ লাখ ডলার। এটি আয় করে ৯ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৬৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি! এদিকে দ্বীপটি জেমস বন্ড নামকরণের সুবাদে থাইল্যান্ডের পর্যটন শিল্প প্রতি সপ্তাহে কতো টাকা অায় করে, তা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মিছিল দেখেই অনুমান করা যায়।
বাংলাদেশ সময় : ১৬৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১৬
এমএন/জেএইচ