দুই বাংলাতেই কাহিনির মধ্যে আছেন জয়া আহসান! কিছুদিন আগে ছিলেন ওপার বাংলার ছবি ‘রাজকাহিনি’তে। আগামী ৮ এপ্রিল আসছে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি ২’।
বাংলানিউজ : নতুন কী কাজ হাতে নিলেন?
জয়া : কলকাতার ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের প্রযোজনায় নতুন একটি ছবিতে কাজ করবো। নাম ‘ঈগলের চোখ’। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ঈগলের চোখ’ উপন্যাস নিয়ে এটি পরিচালনা করবেন অরিন্দম শীল। এ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম শিবাঙ্গী। এর দৃশ্যধারণ শুরু হবে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি। ‘এবার শবর’ ছবির পর শবর দাশগুপ্ত চরিত্রে আবার অভিনয় করছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। অরিন্দম শীলের পরিচালনায় এর আগে কলকাতায় ‘আবর্ত’ ছবিতে অভিনয় করেছি। তার নতুন ছবি শেষ করে ওপারেই কাজ করবো ‘কণ্ঠ’ নামের একটি চলচ্চিত্রে।
বাংলানিউজ : যৌথ প্রযোজনার ছবি নয়, কলকাতায় আপনাকে ডেকে নিয়ে তারা কাজ করাচ্ছেন। যেমন ভেঙ্কটেশ ফিল্মস আবার আপনাকে ডেকেছে...
জয়া : যৌথ প্রযোজনায় যারা কাজ করছেন, তাদেরকে মোটেই ছোট করে দেখছি না। তবে এটা ঠিক, আমি বাংলাদেশি প্রযোজকের হাত ধরে কলকাতায় কাজ করিনি। একেবারেই কোনোরকম যোগাযোগ ছাড়া তারা নিজ দায়িত্বে আমাকে ডেকে নিয়ে মৌলিক ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন। আমাকে যোগ্য মনে করেছেন বা আমার কাজ পছন্দ করেছেন বলেই হয়তো তারা আমাকে ডাকেন। এটা আমার জন্য অবশ্যই অনেক সম্মানের ব্যাপার।
বাংলানিউজ : আপনি বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশে সফল এবং আলোচিত। দুই বাংলাতে সমানতালে কাজ করছেন। স্বভাবতই দুই দেশের লোকেরাই আপনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কৌতূহলী। তারা জানতে চায় আপনি কোনো রিলেশনশিপে আছেন কি-না। সম্প্রতি কলকাতার আনন্দবাজারের আনন্দ প্লাস পাতাতে এ নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। ওপার বাংলার নির্দিষ্ট একজন পরিচালককে জড়িয়েও আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। কিন্তু আপনি এড়িয়ে গেছেন। এ নিয়ে নানা চর্চা হচ্ছে এপারে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?
জয়া : আমি কিন্তু এড়িয়ে যাইনি। আনন্দ প্লাসের সাক্ষাৎকারটি যে কেউ ভালো করে পড়লেই বুঝতে পারবেন, আমি আসলে কি বলতে চেয়েছি। সত্যি বলতে, যে কোনো সিনেমার পাতাই চটকদার খবর খোঁজে। সেটা এ দেশেও হয়, ওপারেও হয়। এটা তাদের কাজের অংশ। এতে আমি খুব একটা দোষেরও কিছু দেখি না। অনেক সময় চলচ্চিত্র শিল্পীরাও এসব খবর ব্যবহার করে স্পটলাইটে থাকতে চান। একটা অসুস্থ সম্পর্ক আছে দু’তরফেই।
তবে আমি আমার কাজের বাইরে আর কিছুর জন্য খবরে আসতে চাই না। আমি কলকাতায় গিয়েছি আমার কাজের জায়গাটাকে প্রসারিত করার জন্য। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। কাজেই ওখানে কোনো পরিচালক বা অভিনেতাকে জড়িয়ে যদি কোনো গসিপের উদ্রেক হয়, আমি এটাই বলবো- সেটা মিথ্যে। সর্বোপরি মিথ্যে। যাকে ঘিরে আমাকে জড়িয়ে গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, তার সঙ্গে পরিচালক ও শিল্পীর বাইরে আমার অন্য কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। এ ধরনের সম্পর্ক হবেও না এবং ভবিষ্যতে হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। এটা পরিস্কার হওয়া খুব প্রয়োজন।
আর সবার মতোই আমার একটা সামাজিক জীবন আছে। পরিবার আছে। ব্যক্তিগত জীবনও আছে। এসবকে ঘিরে অনেক দায়িত্বও আছে। আমার জীবনে যদি কিছু ঘটে থাকে, মানে যেটাকে আপনারা রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বলছেন, সেটা আমি যথাসময়ে জানাবো, দায়িত্ব নিয়েই জানাবো। সেটা নিয়ে অনাবশ্যক লুকোচুরি খেলার মানসিকতা আমার নেই।
বাংলানিউজ : আপনি বিনোদন আঙিনায় কাজ করছেন একযুগেরও বেশি সময় ধরে। কী মনে হলো এই দীর্ঘ সময়ে?
জয়া : দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করতে গিয়ে এটা বুঝেছি যে, এই পথের অনেকটাই খুব পিচ্ছিল। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন কিংবা আমার কাজের স্ট্র্যাটেজি যদি কেউ ফলো করেন, আমাকে আমার প্রত্যেকটা পদক্ষেপেই যোগ্যতা প্রমাণ করে এ অবস্থানে আসতে হয়েছে। বলতে গেলে যেখানে কোনো পথ ছিলো না, সেখানে আমাকে প্রত্যেকটা সিঁড়ি তৈরি করে করে পথ বানাতে হয়েছে। দেশে ও দেশের বাইরে যেখানেই কাজ করেছি, কোনো বন্ধুতার জায়গা থেকে নয়, কোনো খাতিরের মানুষ হিসেবেও নয়, সব জায়গাতেই নিজের কাজ দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়েছে। তাই দায়িত্বহীন কিছু করার মতো বয়স বা অবস্থা কোনোটাই আমার নেই। আমার জীবনে যারা খুব গুরুত্বপূর্ণ, হাতেগোনা যায় এরকম কয়েকজন মানুষ আছেন। তাদের মতামত আমার কাছে খুবই জরুরি। তারা কষ্ট পান এমন কোনো কিছু করার কথা স্বপ্নেও ভাবি না।
বাংলানিউজ : আপনি নাকি দেশেই থাকেন না! ভারতেই নাকি বেশিরভাগ সময় থাকেন! এরকম কথা ইদানীং অনেকের মুখে শোনা যায়...
জয়া : আমাকে তো দেখছি জোর করে অভিবাসী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে! গত তিন মাস ধরে বাংলাদেশে তিনটা ছবির কাজ শেষ করলাম। তাহলে আমি কোথায় ভারতে থাকলাম? আকরাম খানের পরিচালনায় ‘খাঁচা’, সাফিউদ্দিন সাফির ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি ২’ ও সাইফুল ইসলাম মাননুর ‘পুত্র’ ছবিতে পর পর অভিনয় করেছি। দেশে না থাকলে এসব কাজ আমি করতাম কী করে? আমি কিন্তু ভারতে থাকি না। শুধু কাজের সময়টাতেই ওখানে যাই। তাই এমন কিছু ছড়ানো উচিত নয়, দর্শক যেন না ভাবে, আমি শুধু ভারতবর্ষেই কাজ করছি।
বাংলানিউজ : অনেক সাংবাদিকরাই বলেন, আপনি আনঅ্যাভেইলেবল। আপনাকে না পাওয়ার একটা আক্ষেপ কাজ করে তাদের মধ্যে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
জয়া : আমি কাজ কম করি। খবরে আসবো কীভাবে? তাই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হই কম। তবে আমি কাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছি সেটাও কিন্তু জরুরি। বেশিরভাগ সাংবাদিকই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে প্রশ্ন করেন, সেটা যদি প্রাসঙ্গিক হয় তাহলে ভালো। উপস্থাপনের ভঙ্গিও হতে হয় ইতিবাচক। আমার স্ট্রাগলের কথা নিয়ে কিন্তু কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি হয়তো সব করতে পারিনি, কিন্তু যতোটা পেরেছি ততোটুকুই বলা হোক। শুধু আমি নই, যার যতোটা প্রতিভা আছে ততোটুকু বলা উচিত। আমাদের আগের প্রজন্মে ববিতা আপা, কবরী আপার কাছের বন্ধু ছিলেন সাংবাদিকরাই। তারকাদেরকে সাংবাদিকরা ভুল ধরিয়ে দেবেন, গাইড দেবেন, এটাই তো হওয়া উচিত। সেই সম্পর্কটা যেটা আমরা এ প্রজন্ম পাই না। এখন মন্দ দিকটা এবং কন্ট্রোভার্সি বিষয় খুঁজে বের করা হয় বেশি।
বাংলানিউজ : অনেকে অনুযোগ করে থাকেন, আপনার ফোকাসটা এখন কলকাতাতেই বেশি...
জয়া : নিজের জায়গা ছেড়ে বিদেশ গিয়ে কাজ করতে কার ভালো লাগে বলেন! আমি মনে করি, শিল্পী তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম নিজ দেশেই করেন। কিন্তু আমি যে মানের বা যে ধরনের কাজ করতে চাই, অর্থাৎ আমার আর্টিস্ট সৌল তৃপ্ত হতে পারে, সে ধরনের কাজ এখানে খুব একটা পাচ্ছি না। যে কারণে হয়তো কলকাতা থেকে ডাকছে বলে আমি ওখানে গিয়ে কাজ করছি। আমাকে যদি চীন, জাপান বা অন্য কোনো দেশ থেকেও ডাকা হয়, আমি কাজ করবো। ভারতবর্ষের প্রতি আমার দুর্বলতা আছে বলে সেখানে কাজ করি, সেটা না। এটা ভাববার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে আমাকে অভিনয়শিল্পী হিসেবে ডাকবে, আমি সেখানে গিয়ে কাজ করবো। আমার আর্টিস্ট সৌল তৃপ্ত হওয়াটাই আমার কাছে মুখ্য।
বাংলানিউজ : আপনার ভক্ত, দর্শক ও পাঠকদের প্রতি কী বলবেন?
জয়া : ভক্ত, পাঠক ও দর্শকরা যেন গুজবে বিশ্বাস না করে সবকিছু যাচাই করেন। এ পর্যন্ত টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে আমি যতোটুকুই সার্ভ করেছি, তারা যেন আমার কাজটুকু দেখে ব্যক্তি মানুষটাকে চেনার চেষ্টা করেন। তারাই আমার প্রথম অগ্রাধিকার। যারা আমাকে জয়া আহসান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তারা যেন বিভ্রান্ত না হন, ভুল না বোঝেন। আমার নিজ দেশে কাজ করাকেই আমি প্রথম অগ্রাধিকার দেই। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনি’র মতো বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করেছি। তখন অনেকে আমাকে কটু কথা শুনিয়েছে। তবে সবসময়ই আমি আমার মনের কথা শুনেছি।
আমি চাইবো, আমার মৃত্যুর সময় লোকে যেন আমার কাজটুকুই মনে রাখে। আর এটাও মনে রাখে যে, আমি কোনোদিন আপস না করে আত্মসম্মান রেখে শুধু একজন শিল্পী হিসেবে বাঁচতে চেয়েছি। অন্যরা কি বললো বা ভাবলো সেগুলোকে অনাবশ্যক গুরুত্ব না দিয়েই বেঁচেছি। এটুকুই বলার।
বাংলাদেশ সময় : ১৯১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৬
জেএইচ