কতো চরিত্রেই না অভিনয় করেছেন সোহানা সাবা। নাটকেও, চলচ্চিত্রেও।
কবরীর ‘আয়না’, মোরশেদুল ইসলামের ‘খেলাঘর’ এবং ‘প্রিয়তমেষু’, মুরাদ পারভেজের ‘চন্দ্রগ্রহণ’ এবং ‘বৃহন্নলা’- সব ছবিতেই পাশের বাড়ির মেয়ের মতো বাঙালিয়ানায় হাজির হয়েছেন সোহানা সাবা। টিভি নাটকেও বেশিরভাগ সময় এভাবেই এসেছেন। তাই তাকে পশ্চিমা পোশাকে দেখলে চমকাতে হয়। তিনি চমকেই দিলেন খানিকটা! সাক্ষাৎকারের শুরুটা হলো এ প্রসঙ্গ ধরেই।
বাংলানিউজ : আপনি একজন কস্টিউম ডিজাইনারও। মেয়েদের পশ্চিমা পোশাক পরা বা এর ব্যবহার নিয়ে আপনার মন্তব্যটা কেমন?
সোহানা সাবা : আসলে কে কি পরবে এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। অন্য সবাই পরছে বলে আমাকেও পরতে হবে, না মানালেও পরতে হবে, এটা ঠিক নয়। কারণ ফ্যাশন চলছে বলে অনেকে নিজের সঙ্গে কাপড়টা যুতসই লাগবে কি-না তা না ভেবেই পরে ফেলেন। এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকলে ভালো।
বাংলানিউজ : মেয়েদের শর্টস বা জিন্স-টপস পরাকে বাঁকা চোখে দেখা হতো। এ অবস্থা পাল্টেছে বলে মনে করেন?
সাবা : আমি ছোটবেলা থেকেই একটু পশ্চিমা ধাঁচের কাপড় পরে অভ্যস্ত। আমি আত্মবিশ্বাস নিয়েই পরেছি। আমাদের বাড়ির কারও কাছে এটা কিছু মনে হয়নি। বাইরে যদিও সবাই এমন মানসিকতা রাখতো না। কে কি ভাবলো আর বললো এগুলো এতো ভাবিনি। এ নিয়ে আমার মাথাব্যথাও নেই। তবে এখন তো পুরো ব্যাপারটাই বদলেছে। কেউ শতভাগ বাঙালি, কেউ হয়তো শতভাগ পশ্চিমা, আবার কেউ শতভাগ মধ্যপ্রাচ্যের হয়ে থাকেন।
বাংলানিউজ : একজন অভিনেত্রীর জন্য যুতসই পোশাক নির্বাচন কতোটা জরুরি বলে মনে হয়?
সাবা : একজন অভিনয়শিল্পীকে দু’দিক মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, চরিত্র কি চায়। যা পরছি তা নিজের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছি কি-না। অনেক অভিনয়শিল্পীকে দেখেছি তাদের ফ্যাশন জ্ঞান ভালো না কিংবা চরিত্রের সঙ্গে যায় না এমন কিছু পরছেন। আবার অনেককেই দেখেছি যা মানাচ্ছে না তা জোর করে পরছে। সবকিছুই মাথায় রাখতে হবে অভিনয়শিল্পীকে। সবচেয়ে বড় কথা চোখ-কান খোলা রাখা!
বাংলানিউজ : আমাদের দেশের নাটক কিংবা ছবিতে কি পোশাক পরিকল্পনাকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা এখনও তৈরি হতে পেরেছে?
সাবা : এখানে সিনেমায় কিন্তু সবসময়ই ডিজাইনাররা কাজ করেছেন। তবে তারা হয়তো অতো জেনে কাজ করতেন না। এখনও ডিজাইনারদের নিয়ে কাজ হচ্ছে। ভালো কিছুই হচ্ছে। জরুরি ব্যাপার হলো, কোনো দায়িত্ব পেলে সেটা সততার সঙ্গে করতে পারা। সেটা অভিনয়ই হোক আর ডিজাইনই হোক।
বাংলানিউজ : কারও কথা গায়ে না মেখে কী করে শান্ত থাকতে পারেন?
সাবা : আমি বিশ্বাস করি, একটা বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখলে সবকিছু থেকে দূরে থাকা যায়। সেটা হলো পরশ্রীকাতরতা। যেমন মিটিং-মিছিল হলে গাড়ি ভাঙচুর করা হয় কিন্তু নিজের গাড়ি না থাকার হিংসা থেকে, এটা পরশ্রীকাতরতা। আবার ধরুন একটা মেয়েকে উক্ত্যক্ত করে তার মেজাজটা খারাপ করে দেওয়া একটা মানসিক রোগ, এটাও পরশ্রীকাতরতা। আমার কথা হলো, অন্যকে নিয়ে না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবলেই হয়। আমি আমাকে এতো ভালোবাসি যে, কে কি করলো আর কই গেলো সেটা নিয়ে ভাবি না। আমি ভাবি- নিজে কীভাবে আরও ঠিকঠাক হওয়া যায়।
বাংলানিউজ : সামনে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আপনার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কী?
সাবা : ভালোবাসা তো প্রতিদিনের, সবসময়ের। এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। আমার কাছে ভালোবাসা হলো যার সঙ্গে অঢেল সময় ফুরিয়ে গেলেও সেদিকে খেয়াল থাকে না। যার সান্নিধ্য পেলে নিজেকে স্পেশাল মনে হয় তাকেই আমি ভালোবাসা মনে করি। ভালোবাসার মানুষকে কেউ কখনও ছোট করে দেখায় না, বরং বড় করে দেয়, স্পেশাল করে দেয়। এটাই ভালোবাসার জাদু!
বাংলানিউজ : স্কুল-কলেজে ভালোবাসার প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
সাবা : আমি ওভাবে প্রস্তাব পাইনি। এখানে একটা মজার ব্যাপার আছে। একদিন মোশাররফ ভাই (মোশাররফ করিম) জানতে চাইলেন- মুরাদই (মুরাদ পারভেজ) আমাকে প্রস্তাব দিয়েছিলো কি-না। আমি হ্যাঁ বলার পর মোশাররফ ভাই বললেন, ‘ক্যামনে দিলো? তোরে তো দেখলে ভয় লাগে!’ আসলেই মানুষ আমাকে ভয় পায়। আগে শুনতাম, কানেও আসতো অমুক আমাকে পছন্দ করে, তমুক আমাকে ভালোবাসে। আমাকে ভয়ে কেউ প্রেমের প্রস্তাব দিতো না।
বাংলানিউজ : আপনার প্রিয় রোমান্টিক ছবি কোনটি?
সাবা : ‘রোমান হলিডে’ আমার প্রিয় ছবি। এতো চমৎকার প্রেম যে হতে পারে, এ ছবি না দেখলে বোঝা যায় না! এতো অল্প সময়েই কারও জীবনে যুতসই মানুষ আসতে পারে, মানানসই মানুষটা আবার একটা মেয়েকে এতো ভালোবেসে আপন করে নিতে পারে, তার বিশ্বাসের সম্মান রাখতে পারে- সবই আছে এতে। এতো ভালো অভিনয় আর এতো নিখুঁত সিনেমা হতে পারে ভাবলে অবাক হই!
বাংলানিউজ : সামনে বড় পর্দার ব্যস্ততা কী?
সাবা : কলকাতায় মে মাসে মুক্তি পাবে ‘ষড়রিপু’। তাই এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ওখানে যেতে হবে প্রচারণায় অংশ নেওয়ার জন্য। ঢাকায় শিগগিরই মুরাদ পারভেজের পরিচালনায় ‘দৌড়’ ছবিতে কাজ করবো। তবে এর দৃশ্যধারণ কবে শুরু হবে তা পরিচালক-প্রযোজকই ভালো বলতে পারবেন।
বাংলানিউজ : বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে পড়েছি আপনি নাটকের বাজেট বাড়ানোর ওপর জোর দেন...
সাবা : এটা ভুল উদ্ধৃতি। আমি এটা বলি না, তবুও আমাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়। আমার কথা হলো- চ্যানেলগুলোর মালিককে একসঙ্গে বসতে হবে। কারণ এখন প্রায় কারও ঘরেই বাংলা চ্যানেল চলে না। অথচ এ দেশে আগে এমন কিছু নাটক হয়েছে যা ভাবলে আমাদের গর্ব হয়। আমি একটা অস্থির সময়ে কাজ শুরু করেছিলাম। এখনও সেই চড়াই-উতরাই চলছে শোবিজে।
বাংলানিউজ : নতুন বছর নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
সাবা : আমি কিছুই পরিকল্পনা করে করি না। সব বছরই আমার কাছে নতুন আশার বছর। আমার বিশ্বাস, যা হবে ভালো কিছুই হবে। কারণ ওপরে যিনি বসে আছেন তিনি কাউকে ঠকান না। যার যখন যা কিছু দরকার হয়, তিনি তা দিয়ে দেন। তার ওপর আস্থা রেখে আমিও নিশ্চিন্তে কাজ করে যাই...
* একাই জর্জ ক্লুনিকে পেতাম : সোহানা সাবা
* সাবা যেন ভোরের স্নিগ্ধ হাওয়া
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৬
জেএইচ