চলচ্চিত্রকার কিংবা চিত্রশিল্পী- এ দুটি পরিচিতির পাশাপাশি ভালো মনের মানুষ ছিলেন খালিদ মাহমুদ মিঠু। নিজের কাজের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন দেশ-বিদেশে।
গুণী মানুষটির মৃত্যুতে শোকাহত সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ। মিঠুর জীবনের দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক ইমন। তৃতীয় ছবিতেও তারই কাজ করার কথা ছিলো। সেটা আর হলো কই! স্বভাবতই শোকে স্তব্ধ ইমন। ‘মিঠু ভাই’কে দেখার অভিজ্ঞতার কথা বাংলানিউজের পাঠককে বলছেন তিনি, প্রিয় মানুষের স্মৃতির প্রতি এটি ইমনের শ্রদ্ধাঞ্জলি-
মনে পড়ছে প্রথম পরিচয়ের কথা। ‘গহীন শব্দ’ ছবিতে নায়ক করার জন্য ইবনে হাসান খান আমার নাম প্রস্তাব করেছিলেন খালিদ মাহমুদ মিঠুর কাছে। এরপর মিঠু ভাই আমাকে ফোন করেন। প্রথমবার দেখা হলো। ভালো লাগলো জ্ঞানী-গুণী মানুষটাকে। ভালোয় ভালোয় ‘গহীনে শব্দ’ শেষ করলাম। বেশ খ্যাতি পেলাম ছবিটিতে কাজ করে। প্রথম ছবিতেই সেরা পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
ভাবিনি তার দ্বিতীয় ছবিতেও সুযোগ পাবো। এবার তিনেই সরাসরি প্রস্তাব দিলেন। ‘জোনাকীর আলো’র নায়ক হলাম। কতোটুকু ভালোবাসলে একজন নির্মাতার পরপর দুটি ছবিতে নায়ক হওয়া যায় বুঝুন!
এখানেই শেষ নয়। এই তো কিছুদিন আগে মিঠু ভাই বললেন, ‘ইমন, তোর জন্য তেমন কিছু করতে পারিনি। আমার তিন নম্বর ছবিতে তুই থাকছিস। আমি তোর জন্য লড়বো। এটাতে তুই জাতীয় পুরস্কার পাবি। ’
শিল্পী ও চলচ্চিত্রকার এই দুটি পরিচয়ের বাইরেও মিঠু ভাই একজন সুন্দর মনের মানুষ ছিলেন। কী কারণে আমাকে তার ভালো লাগতো ঠিক জানি না। তবে প্রায়ই উল্লেখ করতেন, অভিনয়ের প্রতি আমার লেগে থাকা ও চেষ্টা তার ভালো লাগতো।
মিঠু ভাইয়ের মধ্যে নেতিবাচক কোনো মনোভাব দেখিনি। একটু রাগী আর অভিমানী ছিলেন। কাজপাগল মানুষ ছিলেন বলেই এটা ধরতে পারতাম। খুব সকাল সকাল শুটিং শুরু করতে ভালো লাগতো তার। আমার হয়তো একটু দেরি হয়ে গেলো। তখন তিনি মৃদু রাগতস্বরে বলতেন, ‘ইশ, তোর জন্য দেরি হয়ে গেলো!’
মিঠু ভাই, কখনও কারও সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করতেন না। ধরা যাক, আমি একটা শার্ট পড়লাম। তার কাছে জানতে চাইলাম, ‘এটা কেমন মিঠু ভাই?’ উনি হয়তো বুঝছেন যে এটা ভালো নয়। কিন্তু এটাকে তিনি প্রকাশ করতেন অন্যভাবে। যেটা শুনে সন্তুষ্ট না হয়ে পারা যেতো না। মিঠু ভাই বলতেন, ‘ইমন, এটাতে তোকে খুব ভালো মানিয়েছে। কিন্তু ওটাতে তোকে আরও ভালো দেখাবে। ’ তার পরামর্শের ধরনটাই ছিলো এরকম। অভিনয়ের ব্যাপারে বলতেন, আমি যেন অভিনয় না করি। আমি যেন স্বাভাবিক থাকি। আমার স্বাভাবিক ওঠা-বসার মধ্যে বিশেষত্ব দেখতে পেতেন মিঠু ভাই।
মিঠু ভাই মানুষকে সম্মান দিতেন। নিজেও এটা প্রত্যাশা করতেন অন্যদের কাছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনোদিন তাকে অসম্মান করে কথা বলিনি কিংবা তাকে মনোক্ষুণ্ন করিনি।
‘জোনাকীর আলো’ ছবির শুটিংয়ের সময় নিজের আঁকা একটি ছবি উপহার দিয়ে বলেছিলেন, ‘রেখে দে, আমি না থাকলে তাকিয়ে তাকিস’। আজ এই কথা যখনই মনে পড়ে ভীষণ কষ্ট হয়। আমার ঘরের দেয়ালে ঝুলছে সেই ছবি।
মিঠু ভাইয়ের মৃত্যুসংবাদ শুনেছি শুটিংস্পটে। আমি ঠিক জ্ঞান হারাইনি। ৩০ মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম। কেন? মিঠু ভাইয়ের বেলাতেই কেন এমন একটা ঘটনা ঘটলো!
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৯, ২০১৬
এসও/জেএইচ
তারার ফুল
‘রেখে দে, আমি না থাকলে তাকিয়ে থাকিস’
ইমন (অতিথি লেখক) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।