পড়াশোনা করেছেন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। পরিকল্পনাও ছিলো প্রকৌশলী হবেন।
ভারতের এই রূপবতী প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসেছিলেন মঙ্গলবার (২২ মার্চ) সকালে। ওইদিন রাতে হোটেল র্যাডিসনে বিএমডব্লিউ সেভেন সিরিজের নতুন মডেলের গাড়ি ৭৩০এলআই উদ্বোধন করেন তিনি। তার আগে বিকেলে হোটেলের লবিতে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বলিউডের এই অভিনেত্রী।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশ সম্পর্কে কি শুনেছেন?
উর্বশী রাউতেলা : গত দুই-তিন বছর ধরে বলিউডে কাজ করছি। এ সময়টাতে সেখানকার অনেকেই বাংলাদেশে এসেছিলেন। আমার বন্ধুদেরও অনেকে এসেছিলেন। তাদের মুখে এ দেশের গল্প শুনেছি। এসব গল্প আমার মধ্যে এখানে আসার কৌতূহল তৈরি করেছিলো। তাই এখানে আসতে পেরে আমি সত্যিই খুশি। আমার চোখে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এ দেশটা আমার প্রিয়। বাংলাদেশি খাবার দারুণ সুস্বাদু। আমি সবসময়ই বাংলাদেশে আসতে চেয়েছি। বিএমডব্লিউ আমাকে সে সুযোগটা দেওয়ায় ধন্যবাদ জানাই তাদেরকে।
বাংলানিউজ : আপনি তো বাংলাদেশের ছবিতে অভিনয় করেছেন...
উর্বশী : হ্যাঁ। এটা আমার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কথা। ২০১৩ সালে স্বপন আহমেদ পরিচালিত ‘পরবাসিনী’ ছবির একটি বিশেষ গানে অভিনয় করেছি। এতে আমার সঙ্গে পারফর্ম করেছেন আপনাদের এখানকার অভিনেতা ইমন। কাজ করতে গিয়ে শুনেছি বাংলাদেশের ছবিগুলো সুন্দর। যদিও খুব একটা দেখা হয়নি। তবে ইচ্ছে আছে দেখবো।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশ থেকে কিছু কিনতে চান?
উর্বশী : অবশ্যই। সময় পেলে কেনাকাটা করবো আমার পরিবারের জন্য। কি কিনবো এটা নির্ভর করে কি দেখছি ও কি পাচ্ছি তার ওপর।
বাংলানিউজ : বিএমডব্লিউ গাড়ি কেনার ইচ্ছে আছে?
উর্বশী : কেনো নয়! এখন তো অবশ্যই ইচ্ছে করছে কিনতে। এটা খুব স্টাইলিশ আর দারুণ গাড়ি। তাছাড়া মডেলটি উপস্থাপন করতে যাচ্ছি আমি। গাড়ির ব্র্যান্ডের মধ্যে বিএমডব্লিউ গত ১০০ বছর ধরে রাজত্ব করছে। তারা সৃজনে ও সৃজনশীলতায় বিশ্বাস করে। আমার তো মনে হয়, গাড়ির ক্ষেত্রে বিএমডব্লিউই সেরা।
বাংলানিউজ : আপনিই একমাত্র সুন্দরী যিনি একই টাইটেল দু’বার জিতেছেন। আপনার টার্নিং পয়েন্ট কি এটাই?
উর্বশী : ঠিক বলেছেন। একই টাইটেল দু’বার জেতা আমার জন্য আশীর্বাদ। সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার প্রতিটি মুহূর্ত আমার এগিয়ে চলার সিঁড়ি গড়ে দিয়েছে। মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স ২০১২ ও মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স ২০১৫ জেতার কারণেই মানুষ আমাকে চিনেছে। এ ছাড়া চীনে মিস ট্যুরিজম কুইন অব দ্য ইয়ার ও দক্ষিণ কোরিয়ায় মিস এশিয়ান সুপার মডেল হওয়ার মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলোও আমাকে পরিচিতি এনে দিয়েছে। আমার আন্তর্জাতিক ভিডিও হানি সিংয়ের ‘লাভ ডোজ’ও আমার ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
বাংলানিউজ : বয়স নিয়ে বিতর্ক না হলে তো দু’বার মিস ইন্ডিয়া জেতা হতো না আপনার!
উর্বশী : (হাসি) বিতর্ক সবসময়ই মনোযোগ আকর্ষণ করে। ২০১২ সালে প্রতিযোগিতার জন্য ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৮ বছরে পা দিতে হতো আমাকে। কিন্তু আমার ১৮তম জন্মদিন ছিলো ২৫ ফেব্রুয়ারি। মিস ইউনিভার্সের নিয়মকানুন অনুযায়ী আমার বয়সটা ২৪ দিন কম ছিলো। এটা জানতে পেরে তারা অন্যজনকে টাইটেলটি দিয়েছেন। তবে মুকুট, উত্তরীয় সবই এখনও আমার কাছে আছে। সুস্মিতা সেন অনেক চেষ্টা করেছেন। আঠারোতে পড়বে এমন একটা মেয়ের জন্য এমন একটি মুকুট জয়টা অনেক বড় ব্যাপার ছিলো। পরে আবার এটা জেতার জন্য নাম নিবন্ধন করি। আমার মতে, প্রতিভা থাকলে বয়স কোনো ব্যাপার নয়।
বাংলানিউজ : আপনার তো প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছে ছিলো...
উর্বশী : হ্যাঁ। কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ানোর ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু পরিকল্পনা ছাড়াই অভিনয়ে চলে এলাম। সত্যি বরতে আমি অভিনেত্রী হতে চাইনি। তবে মিস ইউনিভার্স ইন্ডিয়া হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো মনের ভেতর।
বাংলানিউজ : প্রথম কোন ছবির জন্য প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
উর্বশী : ‘ইশাকজাদে’। তখন আমার বয়স ১৭ বছর। মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা ছিলো, ইউনিভার্সিটি অব দিল্লিতেও পড়ছিলাম। ওই সময়টাকে চলচ্চিত্র ক্যারিয়ার শুরুর জন্য যুতসই মনে হয়নি। এ কারণে কাজটা করিনি। পরে সুযোগটি পেয়েছেন পরিণীতি চোপড়া। আসলে কিছু ঘটনা ঘটতে থাকে যেগুলোর ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। পরে সানি দেওলের সঙ্গে ‘সিং সাব দ্য গ্রেট’ (২০১৩) দিয়ে অভিষেক হয়েছে। আমার মনে হয় শুরুটা ভালোই হয়েছে।
বাংলানিউজ : বলিউডে তো পরিবার ছাড়া এগোনো যায় না। আপনি কীভাবে পারছেন?
উর্বশী : আমি কাপুর কিংবা খান নই! আমার বেলায় বিষয়টি ভিন্ন। আমি এখানে বহিরাগত। এমন উদাহরণ আরও আছে। শাহরুখ খানের কথাই বলতে পারি। তিনিও খান! তবে তার কোনো পারিবারিক সহযোগিতা ছিলো না বলিউডে। সব বহিরাগতর জন্য তিনিই সবচেয়ে উজ্জ্বল উদাহরণ।
বাংলানিউজ : নতুনদের জন্য কি বলিউড বন্ধুসুলভ?
উর্বশী : দেখুন, বলিউড হলো অন্য যে কোনো পেশার মতোই। মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসা কিংবা অন্য যে কোনো ক্ষেত্রে চাকরি করলে যেমন হয়, বলিউডও তেমনই। দক্ষতা, পেশাদারিত্ব ও আন্তরিকতা থাকলে বলিউডে সহযোগিতা পাওয়া যায়। তবে যোগাযোগে আপনি কতোটা ভালো তার ওপর নির্ভর করে কাজের বিষয়টি।
বাংলানিউজ : শাহরুখ কি আপনার স্বপ্নের নায়ক?
উর্বশী : হ্যাঁ। তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলে ভালো লাগবে। এ ছাড়া অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, সালমান খান, হৃতিক রোশনের সঙ্গে অভিনয় করতে চাই। এই পাঁচজনই আমার স্বপ্নের নায়ক।
বাংলানিউজ : আপনার সৌন্দর্যের রহস্য কী?
উর্বশী : এটা আমার মা-বাবার আশীর্বাদ। আপনি যদি আমার দাদিকে দেখেন তাহলে মুগ্ধ হবেন। তিনি এখনও অনেক চাঁদমুখো! আমার মুখে মূলত তাদেরই ছায়া। আমি বেড়ে উঠেছি হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ডে। শৈশব থেকে তুষারপাত দেখে বেড়ে উঠেছি। গাছও বরফে ঢাকা থাকতে দেখেছি। পরিবেশের দূষণ নেই এমন প্রাকৃতিক নিসর্গে সময় কেটেছে আমার।
বাংলানিউজ : ‘সনম রে’র অভিজ্ঞতা কেমন ছিলো?
উর্বশী : চমৎকার। আমি খুব উপভোগ করেছি কাজটা। এটি পরিচালনা করেছেন দিব্যা খোসলা কুমার। এর আগে কখনও নারী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করিনি। তাই নতুন অভিজ্ঞতা হলো।
বাংলানিউজ : আপনার আগামী ছবি ‘গ্রেট গ্র্যান্ড মাস্তি’ নিয়ে কিছু বলুন।
উর্বশী : এ ছবিতে আমি তিন অভিনেতার প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয় করছি। তারা হলেন বিবেক ওবেরয়, আফতাব ও রিতেশ দেশমুখ। এটা আমার জন্য অনেক বড় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জিং। ‘মাস্তি’ (২০০৪) ছবিতে অজয় দেবগণ যে চরিত্রে কাজ করেছিলেন, এটা তেমনই। সেজন্যই কাজটা করছি।
বাংলানিউজ : আপনার বয়স মাত্র ২২ বছর। স্বপ্নটা কী?
উর্বশী : যে কাজই করি, তাতে যেন শতভাগ উজাড় করে দিতে পারি। কাজের প্রতি সুবিচার যেন করতে পারি।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশি ভক্তদের জন্য কিছু বলুন।
উর্বশী : আমার সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়েছেন, ফ্যান পেজে আমার প্রচুর বাংলাদেশি ভক্ত আছে। ভালোবাসা ও সমর্থনের জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা আমার ফেসবুক ও টুইটারে যা লেখেন আমি তা পড়ি, প্রশংসা করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৬
জেএইচ