ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

তারার ফুল

সুচিত্রা সেন এক আফসোসের নাম!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০১৬
সুচিত্রা সেন এক আফসোসের নাম!

সুচিত্রা সেনের কথা এলেই মনকেমনের মতো আবহ তৈরি হয়! নামটা শুনলেই অতীতকাতরতায় ভোগেন দর্শকরা। সুচিত্রা সেন নামটি যেন কোনো তরুণীর জন্য বরাদ্দ, যে কোনোদিন বুড়িয়ে যায় না! ঠিক রূপকথার মতো।

বাংলা ছবির এই মহানায়িকার জীবনটা স্বপ্নকাতর বাঙালির কাছে ছিলো রূপকথাই। অনিন্দ্যসুন্দর মুখ, মূর্তিমতি লাবণ্য, সৌন্দর্য, আকর্ষণীয় শারীরিক গড়ন ও অতুলনীয় অভিনয়ের সুবাদে তিনি পৌঁছেছিলেন খ্যাতির শিখরে।

সুচিত্রার চুল, চোখ, সাজগোজ ছিলো বাঙালি মেয়েদের কাছে ফ্যাশনের সমার্থক। তখনকার সমাজে পুরুষদের কাছে প্রেমিকার আদল ছিলেন সুচিত্রা। তাকে দেখলেই মনে হতো পাশের বাড়ির কোনো মেয়ে বুঝি!

ওপারের হয়ে বিখ্যাত হলেও সুচিত্রা সেন জন্মেছিলেন এপারে। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের বৃহত্তর পাবনার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানাবাড়িতে তার জন্ম। পর্দা-নাম সুচিত্রা সেন হলেও বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত আর মা ইন্দিরা দেবী মেয়ের নাম রেখেছিলেন রমা দাশগুপ্ত। পাবনা শহরের দিলালপুরের বাড়িতে কেটেছে তার শৈশব-কৈশোর।

পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন সুচিত্রা। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে পরিবারের সঙ্গে তাকে কলকাতায় চলে যেতে হয়। পরের বছর কলকাতার শিল্পপতি আদিনাথ সেন তনয় দিবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘর আলো করেন একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেন। সুচিত্রার দুই নাতনি রাইমা সেন ও রিয়া সেনকে সবাই চেনে।

১৯৫২ সালে ‘সুচিত্রা সেন’ নামে চলচ্চিত্রাঙ্গনে যাত্রা শুরু করেন রমা সেন। বাংলা চলচ্চিত্র সম্ভারে তার অভিনীত ছবির সংখ্যা ৫৩। আর হিন্দিতে ৭। সব মিলিয়ে ৬০। তার অভিনীত প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’ মুক্তি পায়নি। মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’। সুচিত্রার জয়যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৪ সালে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ মুক্তি পাওয়ার পর থেকে। একই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অগ্নিপরীক্ষা’ তাকে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। রূপালি পর্দায় সুচিত্রা সেনের নায়ক হিসেবে অভিনয় করেই সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিলেন উত্তম কুমার। সুচিত্রাই সত্যিকার অর্থে উত্তমকে ম্যাটিনি আইডল করে তুলেছিলেন। এ জুটির ৩০টি বাংলা ছবির মধ্যে সবই বক্স অফিস মাতিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অগ্নিপরীক্ষা’, ‘সবার উপরে’, ‘শাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হলো দেরি’, ‘হারানো সুর’, ‘গৃহদাহ’, ‘প্রিয় বান্ধবী’ ইত্যাদি। বাংলা ছবির ইতিহাসে সুচিত্রা-উত্তমই সবচেয়ে রোমান্টিক জুটি হিসেবে আখ্যা পেয়েছে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাংলা প্রেমের ছবিকে স্বর্ণযুগে পৌঁছে দিয়েছিলো এই চিরসবুজ জুটি।

দর্শকের কাছে সুচিত্রা সেন ছিলেন অধরা স্বপ্নের রানী। এখনও তা-ই আছেন। এভাবেই অমর থেকে যাবেন চিরকাল। প্রায় ৩৬ বছর তিনি ছিলেন লোকচক্ষুর আড়ালে। কলকাতায় একাকী থাকতেন বালিগঞ্জের ফ্ল্যাটে। স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়ে রহস্যময়ী ছিলেন আমৃত্যু। তাই সুচিত্রা সেন নামের সঙ্গে সবসময় লেগে থাকবে কিছু আফসোস! তাকে আবার চলচ্চিত্রে দেখার বাসনা কার না ছিলো! কিংবা হতে পারতো তিনি আবার জনসম্মুখে ফিরে এসেছেন। কিছুই হয়নি। ‘আফসোস’ শব্দটাকে দর্শকের মনে চিরদিনের জন্যই যেন গেঁথে দিয়ে গেলেন তিনি।

অনেকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি ৮২ বছর বয়সে মারা যান সুচিত্রা সেন। আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে চলুন দেখি কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর পাঁচটি গানের ভিডিও।

* ‘হারানো সুর’ ছবিতে গীতা দত্তের গাওয়া ‘তুমি যে আমার’ :

* ‘হসপিটাল’ ছবির ‘এই সুন্দর স্বর্ণালি সন্ধ্যায়’ :

* ‘পথে হলো দেরি’ ছবিতে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘এ শুধু গানের দিন’ :  

* ‘অান্ধি’ ছবির ‘তেরে বিনা জিন্দেগি সে কোই’ :

* ‘অান্ধি’ ছবির ‘তুম অা গ্যায়ে হো’ :

বাংলাদেশ সময় : ১২২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৬, ২০১৬
জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

তারার ফুল এর সর্বশেষ