রুম্মান রশীদ খান একাধারে উপস্থাপক, নাট্যকার, চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার। মাছরাঙা টেলিভিশনের সহকারী ব্যবস্থাপক (ক্রিয়েটিভ ইনচার্জ) হিসেবেও কর্মরত আছেন।
বাংলানিউজ : আপনি তো একসময় সাংবাদিকতা করেছেন। এ মুহূর্তে পুরনো পরিচয়ে ফিরে গেলে রুম্মান রশীদ খানকে কি প্রশ্ন করতেন?
রুম্মান রশীদ খান : (হেসে) তার কাছে জানতে চাইতাম, এ মুহূর্তের প্রেশার কতো?
বাংলানিউজ : সত্যিই কি প্রেশার বেড়ে হাই? কেনো?
রুম্মান : আমার যে কোনো কাজ, তা সে ঘরোয়া অনুষ্ঠান হোক কিংবা টিভি অনুষ্ঠান, উপস্থাপনা, নাটক কিংবা চলচ্চিত্র- আমি শতভাগ ডুবে যাই। এটি আমার মুদ্রাদোষ। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ মুক্তি পাচ্ছে শুক্রবার (৮ এপ্রিল)। এ ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ লিখেছি আমি। এতোদিনের এতো শ্রম, মেধা, অপেক্ষা সবকিছুর অবসান ঘটবে আর কয়েক ঘণ্টা পর। টেনশন হবে না?
বাংলানিউজ : সমালোচকদের মন্দ কথাকে ভয় পান?
রুম্মান : ভয় না, কষ্ট পেয়েছিলাম ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ মুক্তির পর। কারণ আমাদের দেশে গঠনমূলক সমালোচনা খুব কম-ই হয়। গতবার যেমন ছবিটি মুক্তির পর যমুনা ব্লকবাস্টারে ছবিটি আমন্ত্রিত অতিথির সঙ্গে দেখলাম, সেখানে একজন সাংবাদিকও ছিলেন। তিনি ছবি দেখা শেষে আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। উৎসাহ দিয়ে জানালেন, অনেকদিন পর কোনো ছবি দেখে তার মন ছুঁয়ে গেছে। পিঠ চাপড়ে বলেন, ‘তোমাকে দিয়েই হবে!’ অথচ পরদিন পত্রিকা ও ফেসবুকে দেখি একই মানুষ ছবিটি নিয়ে তুলোধুনো করে একাকার। আমি কখনও আশা করি না, একটি কাজ সবশ্রেণীর দর্শকের মন জয় করতে পারবে। বিশ্বের সর্বকালের সেরা ছবিগুলো নিয়েও বিতর্ক আছে। ‘রোমান হলিডে’, ‘টাইটানিক’ থেকে সাম্প্রতিক ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ও আমার অনেক কাছের মানুষের ভালো লাগেনি। না-ই লাগতে পারে। তবে প্রকাশ্যে এক কথা বলে, পত্রিকার পাতায় অন্য কথা লেখাটা কি বীরত্বের কাজ? অমুক নায়িকা আমার ফোন ধরেন না, ব্যস মন্দ কথা লিখে দিলাম, অমুক নায়ক আমাকে ইন্টারভিউ দেন না, ব্যস তাকে শেষ করে দিলাম, অমুক পরিচালক আমাকে গান লিখতে দিলেন না, তার পরিচালনাই বন্ধ করে দিলাম-এভাবে সমালোচনা হয় না। আমি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ মুক্তির আগেই জানি, কোন কোন পত্রিকা শুধু নেতিবাচক কথাই লিখবে। নেতিবাচক লেখা যেতেই পারে। কোনো ছবিই ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। তবে বাংলা ছবি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মন্দটা কমিয়ে প্রতিটি ছবির ভালোটাই সবার ফোকাস করা উচিত বেশি। প্রয়াত শহীদুল ইসলাম খোকন, মতিন রহমান, ছটকু আহমেদসহ আরও অনেকেই গঠনমূলক সমালোচনা লিখতে পারেন। ভারতে যেমন অনিল কাপুর, সালমান খান, আমির খান, সোনম কাপুর, সোনাক্ষী সিনহা কোনো সমালোচনা পড়েন না, ঠিক করেছি এবার শুধু চলচ্চিত্রের গুণীজনদের সমালোচনা ছাড়া ফেসবুক অথবা পত্রিকায় কোনো সমালোচনা পড়বো না। ভালো-মন্দ সব সরাসরি শুনবো।
বাংলানিউজ : অন্য আরেকটি ছবির সঙ্গে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ মুক্তি পাচ্ছে। এ নিয়ে ভীত নন?
রুম্মান : ভীত হয়েছিলাম ২০১৩ সালে। যখন কোরবানির ঈদে তিনটি ছবির সঙ্গে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ মুক্তি পেয়েছিলো। চার ছবির মধ্যে প্রথম সপ্তাহে সবচেয়ে কম (২৮টি) সিনেমা হল পেয়েছিলো আমার লেখা প্রথম ছবি। তবে দর্শক কিন্তু ‘ফুল অ্যান্ড ফাইনাল’, ‘প্রেমিক নাম্বার ওয়ান’ কিংবা ‘কী প্রেম দেখাইলা’র নাম মনে রাখেনি। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ একটা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। তিনটি ছবির সঙ্গে যেহেতু কম সিনেমা হল নিয়ে লড়াই করে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নেওয়া গেছে, একটি ছবির সঙ্গেও লড়াই করে আমরা জিতবো আশা রাখি।
বাংলানিউজ : কেনো মনে হচ্ছে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’-এর জয় হবে? কী আছে এ ছবিতে?
রুম্মান : কারণ আমাদের ছবিটি চার্লি চ্যাপলিনের ‘সিটি লাইটস’-এর বাংলা সংস্করণ নয়। সম্পূর্ণ মৌলিক ছবি। ক্রিকেটের আবহে প্রেম কাহিনি বলার চেষ্টা উপমহাদেশের কোনো ছবিতে দেখিনি। আর বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে কোনো ছবি তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে দর্শক নতুনত্বের স্বাদ পাবে। শাকিব খান অসংখ্য ছবিতে কাজ করলেও ক্রিকেটারের ভূমিকায় পর্দায় আসেননি আগে। জয়া আহসানের মতে, সাপ, ব্যাঙ, বেজি ছাড়া তিনি সব ধরনের চরিত্রই করেছেন নাটকে। চলচ্চিত্রেও বিচিত্র ধারার চরিত্রে কাজ করলেও টপ মডেল চরিত্রে, গ্ল্যামারাস জয়াকে আমরা খুব একটা দেখিনি আগে। শাকিব খানের সঙ্গে আরেক জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইমন এবং মৌসুমী হামিদকেও আগে দেখিনি। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ ছবিতে এর সবই আছে। ওমর সানির মতো জনপ্রিয় চিত্রনায়ক তার প্রায় ২৪ বছরের ক্যারিয়ার পেরিয়ে এবারই প্রথম জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচের চরিত্রে অভিনয় করলেন। শহীদুল আলম সাচ্চু তো আছেনই। তবে ছবির বড় চমক কণ্ঠতারকা আসিফ আকবর, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন ও সংবাদ ব্যক্তিত্ব জ.ই.মামুনের উপস্থিতি। যারা ক্রিকেট ভক্ত, তারা তো ছবিটি দেখতে আসবেনই, যারা বাংলা ছবির নিয়মিত দর্শক, তাদের জন্য এটি হবে বাড়তি পাওনা। শুধু বিনোদন নয়, ছবিটিতে কিছু ম্যাসেজও দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
বাংলানিউজ : অনেকেই বলেন, এখন ছবির বাজার মন্দা। সেই মন্দার ঘূর্ণিপাকে যদি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ও যুক্ত হয়ে যায়, সেটিকে আপনি কী বলবেন?
রুম্মান : দুর্ভাগ্য। এ ছাড়া আর কি বলবো? আমি অন্তত কাহিনি লিখার পর ৪০বার চিত্রনাট্য কাঁটাছেঁড়া করেছি। প্রতিটি সংলাপ লেখার আগে ও পরে ভেবেছি। আমরা চাইলেই দক্ষিণ ভারত কিংবা কোরিয়ার কোনো ছবির ডিভিডি এনে সেটির বাংলা সংস্করণ করে মোটামুটি বাজেটে ঝামেলামুক্ত কোনো কাজ করতে পারতাম। তবে আমরা সে পথে যেতে চাইনি। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ দেখার পর ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ নিয়ে সবার প্রত্যাশার পারদ যেভাবে আকাশ ছুঁয়েছে, সেটিকে মাথায় রেখে রেফারেন্স ছাড়া কোনো গল্প নির্বাচন করতে চেয়েছি। বিপুল অর্থ ব্যয় করে ফতুল্লা স্টেডিয়াম ও প্রথমবারের মতো ভারতের হায়দরাবাদের রামুজি ফিল্ম সিটিতে শুটিং- সব ধকলই পরিচালক সাফিউদ্দিন সাফি থেকে ছবির পুরো ইউনিট হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলো শুধু একটি ভালো ছবির খাতিরে। তারপরও যদি ছবিটি ব্যবসা না করে, বুঝে নিতে হবে চলচ্চিত্র নির্মাণের অংক আমাদের আবার নতুন করে কষতে হবে।
বাংলানিউজ : বাংলাদেশে সিক্যুয়েলের ট্রেন্ড খুব একটা নেই। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ করার পরিকল্পনাটি আসলে কার?
রুম্মান : সত্যি কথা বলতে, এরকম ভাবনা ছবি মুক্তির আগে আমাদের ইউনিটের কারওরই ছিলো না। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ মুক্তির পর ভক্ত-দর্শকরাই আমাদের দিনের পর দিন অনুরোধ করতে থাকেন, এ ছবির দ্বিতীয় পর্ব দেখতে চান। মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ ভাই-ও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেন, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ নির্মাণ করুন। আমি নিশ্চিত ছবিটি দর্শক গ্রহণ করবেই। সবার অনুরোধেই আমরা ভাবি। পরবর্তীতে গল্প লিখতে গিয়ে আমার মনে হয়, আগের গল্পটিকে স্পর্শ করা উচিত হবে না। জারা-জয়ের প্রেম কাহিনি ওখানেই শেষ। এবার নতুন প্রেম কাহিনি বলতে হবে। এভাবেই জন্ম নেয় মিতু-আসাদের প্রেম কাহিনি। তার মানে, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’ সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’। সিক্যুয়েল নয়। আগের ছবিতে ববিতা-সোহেল রানা যেমন করে একটি সিনেমার গল্প বলেছেন, এ ছবিতেও একইভাবে ক্রিকেট বিশ্লেষক, তারকা গায়করা একটি গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। অর্থাৎ ধরণ-ধারণ সব একই, তবে প্রেক্ষাপট ভিন্ন, চরিত্র-ও ভিন্ন।
বাংলানিউজ : সাফিউদ্দিন সাফির পরিচালনায় আপনি সন্তুষ্ট?
রুম্মান : প্রশ্নটি হওয়া দরকার, তিনি আমার কাজে সন্তুষ্ট কি-না। তিনি অনেক অভিজ্ঞ একজন নির্মাতা, তার কাজ মূল্যায়ন করার ধৃষ্টতা আমার নেই। অনেকেই বলেন, যারা মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ করেন তারা স্মার্ট মেকিং বোঝেন না। কিন্তু যারা ছোটপর্দা থেকে আসেন, তাদের অনেকেই কিন্তু স্মার্ট মেকিং বোঝার পরও গল্পটা ভালোভাবে বলতে পারেন না। সাফি ভাইরা যে কোনো গল্প (সেটি ভালো হোক কি মন্দ) দর্শকদের বলতে পারেন। আমার মতে, এ ছবিটি তাকে বড় ধরনের কোনো স্বীকৃতি এনে দিতে পারে।
বাংলানিউজ : ক্রিকেটার চরিত্রে শাকিব খানকে নেওয়ার ভাবনাটি কার?
রুম্মান : এটি সম্পূর্ণ পরিচালক সাফিউদ্দিন সাফির ভাবনা। তিনিই লেখার শুরুতে আমাকে বলেছিলেন, গল্প পছন্দ হলে শাকিব খান এবং জয়া আহসান এবারের ছবিতেও থাকবেন। তবে শাকিব খানকে এমন চরিত্রে অভিনয় করাতে চাই, যে চরিত্রে দর্শক তাকে আগে দেখেনি। সাফি ভাই-ই পরবর্তীতে বের করেন ক্রিকেটার চরিত্রে শাকিব খানকে নেওয়া গেলে গল্প জমে যাবে। শুরুতে আমার সংশয় থাকলেও পরবর্তীতে গল্পের ডালপালা মেলতে মেলতে নিজেই ডুবে যাই মিতু-আসাদের প্রেম কাহিনির ভেতরে।
বাংলানিউজ : মিতু তো আপনার স্ত্রীর নাম...
রুম্মান : আমার প্রায় সব নাটক-চলচ্চিত্রেই মিতুর উপস্থিতি থাকে। ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’তে মিতু চরিত্রে অভিনয় করেন মিমো, এবার করেছেন জয়া আহসান। অবশ্য মিতু শুধু চরিত্রের নামই হয়েছে বললে ভুল হবে, এ ছবিতে শাকিব খান এবং জয়া আহসানের অনেক দৃশ্যও আমার এবং মিতুর বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নেওয়া। আমার সব কাজেই আমার স্ত্রীর প্রচ্ছন্ন ছায়া থাকে বরাবর।
বাংলানিউজ : শাকিব খানের সঙ্গে জয়া আহসান- এই যে দুই মেরুর দুই জনপ্রিয় তারকাকে এক করা-এই ভাবনাটি কার মাথা থেকে এলো? তাছাড়া আপনার মতো তরুণ চিত্রনাট্যকার কীভাবে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’র সঙ্গে যুক্ত হলেন?
রুম্মান : এর উত্তর জানার জন্য ফিরে যেতে হবে ২০১২ সালে। ফ্রেন্ডজ মুভিজ ইন্টারন্যশনাল নতুন প্রযোজনা সংস্থা। তারা ছবি নির্মাণ করবেন। এই সংস্থার সিইও হিসেবে যুক্ত হলেন স্বনামধন্য গীতিকার কবির বকুল। তার সঙ্গেই কর্মস্থলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে শুনতাম, এ রকম একটি ছবি হতে যাচ্ছে। একসময় বকুল ভাই-ই আমাকে ছবিটি লেখার প্রস্তাব দেন। কাস্টিং হিসেবে প্রাথমিকভাবে ভাবনায় রাখা হয় শাকিব খান-অপু বিশ্বাসকে। সে মুহূর্তে বলেছিলাম, শাকিব খান-অপু বিশ্বাসকে তো অসংখ্য ছবিতে দেখছি। অপুর পরিবর্তে এ ছবিতে এমন কাউকে কাস্ট করা প্রয়োজন, যাকে দর্শক আগে কখনও শাকিব খানের সঙ্গে দেখেনি। আর অপুকে যদি নিতেই হয়, তাহলে অপু আগে করেনি এমন কোনো চরিত্রে তাকে নিতে হবে। তখন আমিই জয়া আহসানের নাম প্রস্তাব করি। পরবর্তীতে বকুল ভাই জয়াকে প্রস্তাব দেন। তিনি শর্ত দেন, গল্প পছন্দ হলে তিনি কাজ করবেন। বেশ কয়েকটি গল্প তিনি বাতিল করেন। কিছু গল্প সাফি ভাইও বাতিল করেন। ষষ্ঠ গল্পটি সাফি ভাই এবং জয়া দু’জনেরই মনোঃপুত হয়। আমি ১০টি নাম দেই ছবির। তার মধ্য থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয় ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’।
বাংলানিউজ : ইমন আপনার প্রথম নাটকের নায়ক। তিনি আপনার বাল্যবন্ধু। সেজন্যই কি ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ ছবিতে তাকে নেওয়া?
রুম্মান : যদি তা হতো, তাহলে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’র প্রথম কিস্তিতেও তাকে প্রস্তাব করা হতো। তাছাড়া ছবির কাস্টিং নির্বাচন করেন পরিচালক। আমি লেখক মানুষ, বড়জোড় সাজেশন দিতে পারি। ইমন, মৌসুমী হামিদ, ওমর সানি, সাদেক বাচ্চু, আসিফ আকবর- এই ভাবনাগুলো আমার ছিলো। পরবর্তীতে সাফি ভাই এবং ফ্রেন্ডজ মুভিজও উপযোগী মনে করেছেন, তাই তাদেরকে দিয়ে অভিনয় করিয়েছেন। ইমন এ ছবির ডার্ক হর্স। ছবিটিতে অভিনয় করার সময় জয়া আহসান এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এ ছবিতে তার সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ইমনের রায়ান খান চরিত্র। পুরুষ হলে জয়া এ চরিত্রেই অভিনয় করতে চাইতেন।
বাংলানিউজ : আর মৌসুমী হামিদকে বেছে নেওয়ার কারণ?
রুম্মান : এ ছবিতে পলি চরিত্রে একজন উচ্ছ¡ল, প্রাণবন্ত, ক্রিকেট পাগল তরুণী নায়িকাকে আমরা খুঁজেছিলাম। সত্যি বলতে এমন কোনো নায়িকা নেই, যার সঙ্গে সাফি ভাই কথা বলেননি। তবে সবারই শেষ কথা ছিলো, জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করার সাহস নেই। পাত্তা পাবো না। মৌসুমী হামিদ এ ক্ষেত্রে সাহসী। তিনি জয়া আহসানের মতো মেধাবী অভিনেত্রীর সঙ্গে কাজ করে নিজেকে প্রমাণ করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, এ ছবিতে কাজ করতে গিয়ে জয়া আহসানের কাছ থেকে অনেক টিপস-ও নিয়েছেন। সুতরাং শেষ পর্যন্ত জয় কিন্তু মৌসুমীরই হলো!
বাংলানিউজ : আপনিও তো ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ ছবিতে অভিনয় করেছেন। ট্রেলারে দেখেছি। এতোদিন খবরটি গোপন রাখলেন কেন?
রুম্মান : কারণ আমি অভিনেতা নই। অনেকটা অনুরোধেই ঢেঁকি গিলেছি। ২০১৪ সালের শেষদিকে আমার অভিনীত দৃশ্যগুলোর শুটিং হয়েছিলো। একজন অভিনেতা শিডিউল ফাঁসিয়ে দিয়েছিলেন। তখন বাধ্য হয়েই পরিচালক আমাকে অনুরোধ করেন। চরিত্রটি একজন টিভি রিপোর্টারের। যেহেতু ছোটপর্দায় উপস্থাপনা করছি, সেজন্যই হয়তো পরিচালক আমাকে এ চরিত্রে অভিনয়ের উপযোগী ভাবেন। স্বনামে অভিনয় করেছি বলে মনেই হয়নি অভিনয় করছি। যদিও স্কুল-কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ‘স্বপ্ন’ নামে একটি দলের হয়ে মহিলা সমিতি, নাটমন্ডল, জাতীয় নাট্যশালা, পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে অনেক মঞ্চনাটকে অভিনয় করেছি, তবে ভিজুয়্যাল মিডিয়ায় বেশকিছু প্রস্তাব পেয়েও কাজ করার দুঃসাহস হয়নি কখনও। কারণ যে কোনো একটি কাজেই সফল হতে চেয়েছি। লেখালেখিটাই তো ঠিকভাবে শিখতে পারিনি, এটিকে আত্মস্থ করতে চাই জীবনভর।
বাংলানিউজ : চিত্রনাট্যকার হিসেবে কাউকে আদর্শ মানেন?
রুম্মান : আদর্শ ঠিক না, তবে সবার কাজ দেখি। সবার ভালোটা নিংড়ে নিতে চাই। যে আব্দুল্লাহ জহির বাবুকে অনেকে নকল ছবির চিত্রনাট্যকার বলেন, তার ভেতরেও অসংখ্য ভালোর স্ফূরণ দেখি। তার ভালোটা আত্মস্থ করতে চাই। ২৫০টির মতো ছবি লেখা কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়। এ ক্ষেত্রে দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কাজও অনুসরণ করি। ছটকু আহমেদ আমার অনেক পছন্দের একজন মানুষ। তার উপদেশ বরাবরই নিয়ে থাকি। তাদের নখের যোগ্য যেদিন হতে পারবো, নিজেকে ধন্য মনে করবো।
বাংলানিউজ : নকল ছবি লেখার প্রস্তাব এলে করবেন?
রুম্মান : পেটের দায়ে না পড়লে কাট-কপি-পেস্ট কখনও লিখতে চাই না। তবে কোনো ভালোলাগা কাজের ছাপ সচেতনভাবে কিংবা অবচেতন মনে পড়তেই পারে। ‘বাজিরাও মাস্তানি’ নির্মাণের সময় সঞ্জয়লীলা বানসালির মনোজগতে ছিলো দীলিপ কুমার-মধুবালার ‘মুঘল-এ-আজম’। তিনি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ‘বাজিরাও মাস্তানি’ই নির্মাণ করেছেন, ‘মুঘল-এ-আজম’ বানাননি। এরকম অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ করার প্রস্তাব এলে অবশ্যই করবো।
বাংলানিউজ : ধরুন, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি ২’ ব্লকবাস্টার হিট হয়ে গেলো। এরপর কি চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবেন?
রুম্মান : হিট হলেও চলচ্চিত্রে নিয়মিত হতে চাই। হিট না হলেও নিয়মিত হতে চাই। চলচ্চিত্রকে ঘিরেই আমার সব স্বপ্ন। যখনই কোনো গল্প মাথায় আসে, কম্পিউটারে টুকে রাখি। এভাবে ২০টি গল্প লিখে রেখেছি। যদিও বছরে ১০-২০টি ছবি লেখার স্বপ্ন নেই। ১-২টি ছবি লিখবো, যাতে জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে অন্তত পাঁচটি ছবি নিয়ে গর্ব করতে পারি। সে চলচ্চিত্রগুলোর মাঝে যাতে বেঁচে থাকতে পারি। একজন লেখকের এর চেয়ে বেশি আর কিইবা চাইবার আছে?
বাংলাদেশ সময় : ২৩৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১৬
জেএইচ