১২ এপ্রিল অভিনেত্রী কুসুম সিকদারের জন্মদিন। এই দিনে ‘শঙ্খচিল’ হয়ে তিনি উড়েছেন।
বাংলানিউজ : জন্মদিনে ‘শঙ্খচিল’ কি বাড়তি পাওনা হয়ে গেলো?
কুসুম : তা তো অবশ্যই। এ পর্যন্ত জন্মদিনে আমার পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার এটাই। জন্মদিনের দু’দিন পরেই ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে, এটাও আনন্দের। যারা বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন, বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, তাদের প্রতি আমার দাবি- আপনারা ‘শঙ্খচিল’ দেখতে প্রেক্ষাগৃহে আসুন। এ ছবি সবার ভালো লাগবে এ গ্যারান্টি দিচ্ছি। এরই মধ্যে আমাদের এ ছবিতে বড় প্রাপ্তি যোগ হয়েছে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা বাংলা ছবি হয়েছে ‘শঙ্খচিল’।
বাংলানিউজ : প্রসেনজিতের সঙ্গে আপনার প্রথম কী কথা হয়েছিলো?
কুসুম : দাদা আমাকে দেখেই বলেছিলেন, ‘তোমাকে কিন্তু আমি তুমি করে বলতে পারবো না, তুই করে বলবো!’
[দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কুসুমকে নিয়ে প্রসেনজিৎ বলেছিলেন, ‘শুটিংয়ের আগে একটু তো নার্ভাস ছিলোই। খুব স্বাভাবিক। এটা শুধু কুসুমের বেলায় না, আমার সঙ্গে যারা কলকাতায় কাজ করেন, তারা যখন ভাবেন বুম্বাদার সাথে কাজ করতে হবে বা প্রসেনজিতের সঙ্গে কাজ করতে হবে, কোথাও থাকে একটা নার্ভাসনেস। আমার চেয়ে যারা বয়সে ছোট, তাদেরকে নিয়ে যখন কাজ করি, শিল্পী হিসেবে আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তাদের সঙ্গে তাদের মতো করে মানিয়ে নিতে। কুসুম অসম্ভব ভালো অভিনয় করেছে। কলকাতায় যারা ছবিটা দেখেছেন, তারা খুব প্রশংসা করেছেন কুসুমের। ’]
বাংলানিউজ : যৌথ প্রযোজনার ছবিতে এবারই প্রথম কাজ করলেন...
কুসুম : এ বিষয়ে শুরুতে কয়েকটা কথা বলতে চাই। যদিও আমরা সবসময় বলি কলকাতা আর ঢাকা বা বাংলাদেশ একেবারেই একরকম, একই ভাষা, একই সংস্কৃতি, একই রকম আমাদের চলা-বলা, পোশাক-পরিচ্ছদ, কিন্তু তারপরও দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি, ওখানে যেতে আমার পাসপোর্ট লাগে। ওখানে যেতে আমার ভিসা করতে হয়। সুতরাং ওই বাংলাটা আমার কাছে বিদেশ। এজন্যই কথাগুলো বললাম যে, বিদেশে একটা ইন্ডাস্ট্রিতে, একটা কাজ করেছি যেটা শুধু ভারতীয় বললে ভুল হবে, এটা আন্তর্জাতিক একটা কাজ। তাই মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়াটা বেশ কঠিনই ছিলো আমার জন্য।
বাংলানিউজ : নিজের তৃতীয় ছবি নিয়ে উপলব্ধি কেমন?
কুসুম : আমি অনেক ভাগ্যবতী। কারণ আগের দুটি ছবি ‘গহীনে শব্দ’ ও ‘লাল টিপ’ ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিমিটেডের। এবারেরটিতেও তারা যুক্ত আছেন। ‘গহীনে শব্দ’ প্রয়াত খালিদ মাহমুদ মিঠুরও পরিচালক হিসেবে প্রথম চলচ্চিত্র। এটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলো। এবার আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন একজন পরিচালকের ছবিতে কাজ করলাম। যিনি বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় বুম্বাদা তো আছেনই, তিনি গ্লোবাল স্টার। যেখানেই বাংলা ভাষাভাষি মানুষ বা বাঙালিরা আছেন, সবার কাছেই তিনি অত্যন্ত সমান জনপ্রিয়। এ দুটি কারণে বলবো এটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র।
বাংলানিউজ : ‘শঙ্খচিল’-এর বিষয়বস্তুও তো আন্তর্জাতিক ইস্যু।
কুসুম : ঠিক বলেছেন। পৃথিবীর যে প্রান্তেই যে মানুষটি ‘শঙ্খচিল’ দেখুক না কেনো, সে যে ভাষারই হোক, যে সংস্কৃতিরই হোক, তার জীবনযাপন যেরকমই হোক না কেনো, কোনো না কোনোভাবে ‘শঙ্খচিল’ দেখার পর ‘শঙ্খচিল’-এর গল্প ও পটভূমি তার জীবন বা তার বাবা-মা বা তার আগের প্রজন্মের দাদা, নানা বা বন্ধু, কোনো না কোনো ব্যক্তি জীবনের কোনো গল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ততা খুঁজে পাবে। ‘শঙ্খচিল’ পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, আবেগের দিক দিয়ে ছুঁয়ে যাবে এবং দর্শকরা মুগ্ধ হবে। কাঁটাতার, সীমান্ত- এসব এখন আন্তর্জাতিক সমস্যা। এটাই ছবিটির খুব শক্তিশালী দিক।
বাংলানিউজ : গৌতম ঘোষের নায়িকাদের কাতারে নাম যুক্ত হওয়াটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার। চাপও তো মনে হয়েছে, নাকি?
কুসুম : গৌতম স্যারের সঙ্গে কাজ করেছি ভাবলে ঘোরের মতো মনে হয়। এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় অর্জন। গৌতম ঘোষ এমন একজন পরিচালক যার সঙ্গে আগে রেখা, শাবানা আজমি, শর্মিলা ঠাকুর, টাবুর মতো বলিউডের কিংবদন্তিরা এবং আমাদের চম্পা আপা কাজ করেছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত হলো আমার নামটা। এটা আমার কাঁধে একটা চাপ ছিলো।
কিন্তু এই পুরো কঠিন, শক্ত, চাপের ব্যাপারটাকে একজন মানুষ তুড়ি দিয়ে সেকেন্ডের মধ্যে ভীষণ সহজ, স্বাভাবিক, শিথিল করে দিয়েছেন। তিনি হচ্ছেন বুম্বাদা। এটা তার কৃতিত্ব বলবো না, কৃতিত্ব বললে আসলে অনেক কম বলা হবে। এটা দাদার জাদু! তিনি জাদুকরের মতো দৃশ্যধারণের সময় কাজের পরিস্থিতিটা আমার জন্য ভীষণ স্বাচ্ছন্দ্যময় করে দিয়েছেন। এজন্য দাদার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমরা আনন্দের সঙ্গে শুটিং করেছি। আরও আনন্দ লাগছে এটি দুই বাংলায় একই ভাষাভাষি মানুষের কাছে একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময় : ০৩২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৬
জেএইচ/