স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ। শুদ্ধ সংগীতের প্রসারে তার অবদান অনেক।
বাংলানিউজ: নজরুল জয়ন্তীতে কোথায় কোথায় গাইবেন?
শাহীন সামাদ: প্রতি বছরই নজরুল জয়ন্তী ঘিরে প্রচুর ব্যস্ততা থাকে। এবারও অনেকগুলো জায়গাতে নজরুল জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশ নেবো। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় গেয়েছি। মাছরাঙা, চ্যানেল আই, এসএ টিভি, একুশে ইটিভিসহ আরও কিছু চ্যানেলের অনুষ্ঠানেও থাকছি। নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল মেলাসহ ছায়ানটেও গাইবো।
বাংলানিউজ: রবীন্দ্রসংগীত কিংবা নজরুলসংগীতে ফিউশন হচ্ছে আজকাল। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
শাহীন সামাদ: আমার কাছে ফিউশন ব্যাপারটি ভালোই লাগে। বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেহেতু ফিউশন করা হয়, সেহেতু আমার মনে হয় গানের কথা ও সুর ঠিক রেখে যেভাবেই গান গাওয়া হোক না কেন তাতে কোনো অসুবিধা নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ফিউশনের নামে গানের কথা ও সুর পাল্টে ফেলা হচ্ছে। এই বিষয়টির প্রতি একটু খেয়াল রেখেই বর্তমান প্রজন্মের উচিত গানে ফিউশন করা।
বাংলানিউজ: নজরুল সংগীত নিয়ে একাডেমিক শিক্ষা চালু হওয়ার প্রভাব কতটা পড়েছে আমাদের সংগীতাঙ্গণে বলে আপনি মনে করেন?
শাহীন সামাদ: গানের ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নজরুল কিংবা রবীন্দ্রসংগীত, সব গানেই একাডেমিক শিক্ষাটা জরুরি। আমি যেমন ছায়ানটে শিক্ষা নিয়েছি। ঠিক তেমনি অনেক শিক্ষার্থী এখন ছায়ানটসহ বিভিন্ন একাডেমি থেকে গান বিষয়ক শিক্ষা গ্রহণ করছে। তবে এ সময়ের শিল্পীরা মিডিয়ার সামনে নিজেদেরকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে বেশি। মিডিয়ায় নিজেকে দেখানোর লোভ সংবরণ করতে পারলেই একাডেমিক শিক্ষা আরও সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করি।
বাংলানিউজ: নজরুল সংগীত সংরক্ষণে উদ্যোগ যথেষ্ট বলে মনে করেন?
শাহীন সামাদ: আমাদের দেশে নজরুল ইনস্টিটিউট নজরুলের গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, কবিতাসহ নজরুলের সকল নথিপত্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন সবাই নজরুল ইনস্টিটিউট থেকেই নজরুল বিষয়ক যে কোনও কিছুই সংগ্রহ করতে পারবেন।
বাংলানিউজ: আপনার সময়ের সেরা শিল্পী কারা ছিলেন? কাদের দেখে আপনি বেশি অনুপ্রাণিত হতেন?
শাহীন সামাদ: সেই সময় অনেক গুণী শিল্পী ছিলেন। বিশেষ করে করিম-উল আলম, ফিরোজা বেগম, ফেরদৌসি রহমানসহ আরও অনেকের গান শুনে বেশ অনুপ্রাণিত হতাম। আসলে তাদের গান শুনেই নজরুল সংগীতের প্রতি আমার যে ভালোবাসা আছে, সেটি বুঝতে পেরেছি।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশে বর্তমানে শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা কতোটুকু হচ্ছে বলে আপনার ধারণা?
শাহীন সামাদ: শাস্ত্রীয় সংগীত চর্চা অনেকটাই বেড়েছে আগের তুলনায়। এখন অনেকেই শাস্ত্রীয় সংগীতকে বুঝতে চাইছেন। রাগ সম্পর্কে বোঝা, কখন কোন রাগ কী ভাবে গাইতে হয়– এগুলো তো সহজ ব্যাপার নয়। আগে তো এক থেকে দুই শতাংশ শিল্পী শাস্ত্রীয় সংগীত করতেন। কিন্তু এখন প্রায় বিশ শতাংশ শিল্পী শাস্ত্রীয় সংগীত করছেন। এছাড়া বেঙ্গল ক্ল্যাসিকাল মিউজিক নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সাতদিনের মেলারও আয়োজন করে থাকে বেঙ্গল। এতে শ্রোতার সংখ্যাও বাড়ছে।
বাংলানিউজ: স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীরা কতোটুকু মূল্যায়ন পাচ্ছেন বলে মনে করেন? আপনারা কী সংস্কৃতি অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের সফল বাস্তবায়ন লক্ষণ করছেন?
শাহীন সামাদ: বর্তমান সরকার স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পীদের জন্য অনেক সুবিধা দিয়েছেন। চিকিৎসা ও ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি ব্যবস্থাসহ প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা করে বিশেষ সম্মাননা পাচ্ছি। আর সংস্কৃতি অঙ্গনেও মুক্তিযুদ্ধের সফল বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আমি মনে করি। তবে সফলতা টিকিয়ে রাখার মানসিকতা আমাদের মধ্যে তেমন নেই।
বাংলানিউজ: গানের চর্চা কি এখনও নিয়মিত করা হয়?
শাহীন সামাদ: সে আবার বলতে। গান নিয়েই আমার সব কিছু। তাই গানের রেওয়াজ করাটা সবসময়ই জরুরি। প্রতিদিন নিয়ম করে রেওয়াজ করি। সপ্তাহে একদিন করি তবলার সঙ্গে।
বাংলানিউজ: গান নিয়ে তরুণ প্রজন্মকে কিছু বলার আছে?
শাহীন সামাদ: সবাই যেনো গানের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে শিখে ও বুঝে গান করে। তাড়াহুড়ো না করাই ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৬
জেএম/এসও