বছর না পেরোতেই ঈদের ছবির প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয়বারের মতো জড়িয়ে গেলেন চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। বাবা যাদব পরিচালিত ‘বাদশা-দ্য ডন’ ছবির নায়িকা তিনি।
অল্প দিনের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে দুই বাংলার জনপ্রিয়তাই জুটেছে ফারিয়ার কপালে। ভক্ত বা অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সব মিলিয়ে সময়টা তার অনুকূল।
জাকির হোসেন রাজুর পরিচালনায় ‘প্রেমি ও প্রেমি’ ছবির কাজ করছেন নুসরাত ফারিয়া। কাজের ফাঁকে বাংলানিউজের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন তিনি।
বাংলানিউজ: আপনার প্রথম ছবি ‘আশিকী’ গত কোরবানির ঈদে মুক্তি পেয়েছিলো। এবারের ঈদেও থাকছেন রূপালি পর্দায়। কেমন লাগছে?
নুসরাত ফারিয়া: এটাকে সম্মানের ব্যাপার হিসেবেই দেখছি। কারণ ঈদ উৎসবে দর্শকদের মধ্যে বাড়তি আগ্রহ থাকে ছবি নিয়ে। পরপর দুই ঈদে ছবি মুক্তি পাওয়ার ঘটনা অবশ্যই আনন্দের।
বাংলানিউজ: এ ঈদের ছবিগুলোর নায়িকার তালিকা লম্বা ও বৈচিত্রময়। অপু বিশ্বাস, আঁচল ও তিশার পাশাপাশি আছেন কলকাতার শ্রাবন্তীও।
ফারিয়া: এই যে বিভিন্ন নায়িকার উপস্থিতি, এই দৃশ্যটা বেশ ভালো লাগছে আমার কাছে।
বাংলানিউজ: এক ধরনের প্রতিযোগিতা কিন্তু তৈরি হয়ে গেছে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে নিচ্ছেন?
ফারিয়া: প্রথম ব্যাপার হচ্ছে, আমি এই দৌড়ে ক্ষুদ্র একজন। বাকিরা সবাই খুব অভিজ্ঞ। শাকিব খান, জিৎ, শ্রাবন্তী…প্রধান প্রতিযোগী তারাই। তারা এমন দৌড়ে শামিল হন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। আমার এই দৌড়ের বয়স নয় মাস। এ কারণে বলবো, টেকনিক্যালি আমার জন্য এই প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন। তাদেরকে সবাই চেনে। তাদের প্রচার আর প্রসার বা ব্যাপ্তি অনেক বেশি। সবচেয়ে নতুন মানুষ হলাম আমি। এটা আমার জন্য একদিক দিয়ে ইতিবাচক। সবার নজর থাকবে আমার ওপর। সবকিছুর ভিড়ে সফল হওয়াও একটা চ্যালেঞ্জ। জানি না কতোটা সফল হবো।
বাংলানিউজ: ‘বাদশা-দ্য ডন’-এর জন্য আপনার প্রস্তুতি কেমন ছিলো?
ফারিয়া: এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আমার লুক থেকে শুরু করে ফিগার, পোশাক- সবদিক দিয়েই খোলস ছেড়ে বেরিয়েছি। বলতে পারেন চেনা বলয় ভেঙেছি। তাই ছবিটি নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত।
বাংলানিউজ: ছবিটি আপনার ক্যারিয়ারে কতোটুকু প্রাপ্তি যোগ করতে পারে বলে মনে করেন?
ফারিয়া: সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, ঈদে এ ছবিটাই বেশি ভালো চলবে। আমি আশাবাদী ‘বাদশা-দ্য ডন’ আমার ভাগ্য আরও ঘুরিয়ে দেবে।
বাংলানিউজ: এ ছবিতে আপনার উপস্থিতি কেমন? চরিত্রটি সম্পর্কে জানতে চাইছি।
ফারিয়া: এরই মধ্যে ছবিটির গানগুলোর ভিডিও তো দেখেছেনই। আমার চরিত্রটির নাম শ্রেয়া। যে কোনো পুরুষকে আকৃষ্ট করার মতো সম্মোহিনী ও সাহসী সে। বেশ রাফ অ্যান্ড টাফ। মেয়েদের মনোভাব নিয়ে চলে শ্রেয়া। মেয়েটি পশ্চিমা জীবনযাপনে বিশ্বাসী। এ চরিত্রে কাজ করে বেশ মজা পেয়েছি।
বাংলানিউজ: শুটিংয়ের মজার অভিজ্ঞতা আছে?
ফারিয়া: আমি সারাক্ষণই শ্রেয়া হয়ে থাকতাম। মাঝে মধ্যে পরিচালক বলতেন, সারাক্ষণই চরিত্রের ভেতর থাকতে হয় নাকি। তখন তাকে শ্রেয়ার মতো করে জবাব দিতাম! এ নিয়ে বেশ মজা হতো। সবাই মেনেও নিয়েছিলো, তাই আমাকে চরিত্রের মধ্যেই থাকতে দিতো ইউনিটের সবাই। দৃশ্যধারণ শেষে আবার আগের ফারিয়াকে পান তারা। সেটে হিন্দির ব্যবহার নিয়েও আমার সঙ্গে সবাই মজা করতো। কারণ আমি হিন্দি অনেক শব্দের মানে বুঝতাম না। এই সুযোগে জিৎ আমাকে কিছু বাক্য কপি করতে বলতেন। আমি সেটা কপি করার পর সবাই হাসাহাসি করতো। পরে বুঝতে পেরেছি, আমাকে দিয়ে দুষ্টু দুষ্টু কথা বলিয়ে নিয়েছেন জিৎ।
বাংলানিউজ: জিতের চোখে ফারিয়া কেমন?
ফারিয়া: এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন।
বাংলানিউজ: কাজের বেলায় জিৎ আপনার প্রশংসা করেননি?
ফারিয়া: প্রতিটি দৃশ্যের কাজ করার পর আমরা দু’জনই মনিটরের সামনে এসে দাঁড়াতাম। দৃশ্যটি দেখার পর দু’জন দু’জনের দিকে তাকাতাম। জিৎ প্রায়ই বলতেন, ‘আচ্ছা শট হ্যায়। ’ আমি জানতে চাইতাম সত্যি সত্যি ভালো হয়েছে তো? জিৎ বলতেন, ‘আচ্ছা হ্যায়, আচ্ছা হ্যায়। ’
বাংলানিউজ: কাজ করতে গিয়ে নিশ্চয়ই জিতের কাছে কিছু শিখেছেন?
ফারিয়া: আমার মনে হয়, আমি অভিনয় পারি না। তবে অভিনয়েও বাস্তবের মতো থাকার চেষ্টা করি। জিৎ ঠিকঠাক ‘টোন’-এ অভিনয় করতে সহযোগিতা করেছেন। ব্যক্তি জিৎ বেশ চমৎকার একটা মানুষ। তার ব্যক্তিত্ব আমার ভালো লাগে। একজন মানুষ কেন বড় তারকা হয়, জিৎকে দেখলে বোঝা যায়।
বাংলানিউজ: কলকাতায়ও নিশ্চয়ই ভক্তের পাল্লায় পড়তে হয়? একটা অভিজ্ঞতার শুনতে চাই।
ফারিয়া: কলকাতায় গ্রামগঞ্জের একটি এলাকায় ক্লাইমেক্স দৃশ্যের শুটিং হয়েছে। জিৎ থাকায় ওখানে প্রচন্ড ভিড় জমেছে। এটাই স্বাভাবিক। ওখানে জিৎ যাওয়া মাত্রই ‘জিৎ’, ‘জিৎ’ চিৎকার শুরু হয়ে গেলো। অবাক ব্যাপার হলো, আমি যাওযার পর দেখি আমার নাম ধরেও ওরা চিৎকার করছে। শুধু নুসরাত বা ফারিয়া নয়। ওরা পুরো নাম ধরে চিৎকার করছে- ‘নুসরাত ফারিয়া’, ‘নুসরাত ফারিয়া’। আমার সঙ্গে জিৎ নিজেও অবাক এই কারণে যে, কলকাতার প্রত্যন্ত একটা জায়গায় আমাকে এভাবে চেনার কথা নয়। জিৎ খুনসুটি শুরু করলেন এই বলে- ‘ক্যায়া বাত! বাংলাদেশ কা সুপারস্টার!’ আমি সত্যি অভিভূত। কলকাতায় মাত্র দুটো ছবি মুক্তি পেয়েছে। তাতেই এতো ভালোবাসা পাচ্ছি ওপার থেকেও।
বাংলানিউজ: দুই বাংলাতে নায়ক নির্ভর ছবিই হচ্ছে বেশি। ভবিষ্যতে নায়িকা নির্ভর ছবি করতে চান?
ফারিয়া: সবার ধারণা হিরোরাই বাঁচাবে চলচ্চিত্র। এটা সাধারণ একটা ভাবনা। আমি এখনও অভিনয়ের প্রাথমিক ধাপে আছে। এখনও প্রপার লাইটিংটাও ঠিকঠাক বুঝি না। সত্যি বলতে সবকিছুই বোঝার চেষ্টা করছি। এখনই নায়িকা প্রধান ছবি করতে চাই, আমার জন্য এটা বলাও বেশ স্পর্ধার ব্যাপার। আমার ক্যারিয়ারের খুব ভালো দিক হলো, এক বছরের মধ্যে বড় প্রতিষ্ঠানের প্রথম সারির আর দুই বাংলাতেই জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে কাজ করেছি। সবই যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বড় বাজেটের ছবি। এ কারণে আমার প্রতি অন্যদের প্রত্যাশাও বেশি। সেটা মাথায় রেখেই কাজ করতে চাই।
বাংলানিউজ: একটা ছবি হিট হলে অনেকে সেই ধরনের কাজই করেন। দিনের পর দিন এটা চলতে থাকে।
ফারিয়া: এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেছেন। আমাকে দেখে যেন দর্শকের একঘেঁয়েমি না লাগে এদিক দিয়ে আমি সচেতন। তাই প্রতিটি ছবিতে নতুনত্ব রাখার চেষ্টা করি।
বাংলানিউজ: যৌথ প্রযোজনার বাইরে কলকাতার ছবিতেও নিশ্চয়ই প্রস্তাব পান?
ফারিয়া: প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রতি আমি অনুগত। তারাই আমাকে চলচ্চিত্রে সুযোগ দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী শুধু তাদের সঙ্গে কাজ করাটাই আমার লক্ষ্য। যদিও প্রতিষ্ঠানটি কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে রাখেনি আমার ওপর। তাছাড়া আজিজ ভাই (জাজ মাল্টিমিডিয়ার স্বত্ত্বাধিকারী আব্দুল আজিজ) সবসময় বলেন, ভালো প্রস্তাব পেলে আমি যেন রাজি হই। তবুও আমি নিজে থেকেই অন্য প্রতিষ্ঠানের কাজ করতে চাই না।
বাংলানিউজ: বলিউড অভিনেতা ইমরান হাশমির সঙ্গে ‘গাওয়াহ, দ্য উইটনেস’ ছবিতে আপনার কাজ করার খবর বেরিয়েছিলো...
ফারিয়া: তারা অনেক সময় চায়। ছয় মাস ধরে একটা ছবিতে ব্যস্ত থাকা সম্ভব নয়। এটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার আমার জন্য। ছয় মাসে কিন্তু এখানে দুটি ছবির কাজ শেষ হয়ে যায়।
বাংলানিউজ: তাহলে কি ছবিটি ঘোষণার মধ্যেই আটকে থাকবে?
ফারিয়া: ‘প্রেমি ও প্রেমি’র চিত্রায়ন শেষ হলে বিষয়টি নিয়ে ভাববো। তিন মাসের বিরতি নেওয়ার ইচ্ছে আছে। আরেকটি বিষয় হলো, আমার সম্মানী নিয়েও চূড়ান্ত কথা হয়নি। দেখা যাক কী হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৬
এসও/জেএইচ