অক্ষয় কুমার বনাম হৃতিক রোশন। ‘রুস্তম’ বনাম ‘মহেঞ্জোদারো’।
সালমান খান, রণবীর সিং, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, অর্জুন কাপুর, সোনম কাপুর, সোনাক্ষী সিনহা, করণ জোহরসহ বেশ কয়েকজন তারকা ‘রুস্তম’-এর প্রচারণা করেছেন। তারা বিশেষ বিশেষ ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তাদের সঙ্গে এবার যোগ দিলেন হৃতিক! চমকানোর মতোই ব্যাপার। নিজের ছবির প্রচারণার সময় খেলোয়াড়ি সুলভ মনোভাব দেখিয়ে ‘রুস্তম’কে সহযোগিতার মাধ্যমে বড় মনের পরিচয় দিলেন ‘ব্যাং ব্যাং’ তারকা। তিনি উল্লেখ করেছেন, অক্ষয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বের খাতিরে ‘রুস্তম’-এর প্রচারণা করছেন।
গত ৮ আগস্ট হৃতিক টুইটারে লিখেছেন, ‘‘আর চার দিন পর আসছে ‘মহেঞ্জোদারো’। একই সঙ্গে আসছে ‘রুস্তম’। বন্ধুত্ব থাকলে দেখাতে হয়। ’’ তার কাছ থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব কবুল করে অক্ষয় সরস টুইটে লিখেছেন, ‘ওরে পাগল এবার থাম, আর কতো কাঁদাবি! পপকর্ন নিয়ে তৈরি থাকুন, বিনোদনের সপ্তাহ সামনে। ’
গত জুনে প্রকাশের পর টিনু সুরেশ দেশাই পরিচালিত ‘রুস্তম’ ছবির ট্রেলারেরও প্রশংসা করেন হৃতিক। তিনি লিখেছিলেন, ‘অভিনন্দন অক্ষয় কুমার। ট্রেলার ভালো লেগেছে। আপনার ছবি বাছাইয়ের প্রশংসা করতেই হয়। আমি নিশ্চিত মিসেস অক্ষয়ও একমত হবেন। শুভকামনা জানাই। ’
এই সহাবস্থান দেখে অক্ষয়-পত্নী টুইংকেল খান্না সাড়া দিয়ে জানান, দুটি ছবির পক্ষেই আছেন তিনি। একসময়ের এই অভিনেত্রী এখন লেখিকা। তিনি বলেন, ‘হৃতিক চায় দুটি ছবিই ভালো চলুক। তাহলে আমরা একসঙ্গে আনন্দ করতে পারবো। ’
টুইট বিনিময়ের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভুলে ভ্রাতৃত্বের জয়গানই গাইলেন অক্ষয় ও হৃতিক। বলিউডে সাধারণত বড় বাজেটের দুটি ছবি মুখোমুখি হলে একটার নায়ক অন্যটির পক্ষে কথা বলেন না। ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তারা।
চলতি বছরে ‘এয়ারলিফট’ ও ‘হাউসফুল থ্রি’র পর ‘রুস্তম’ হতে যাচ্ছে অক্ষয়ের তৃতীয় ছবি। এটি ব্যবসাসফল হলে হ্যাটট্রিক করবেন তিনি। আগের দুটিও বক্স অফিসে রমরমিয়ে ব্যবসা করেছে। তবে ‘মহেঞ্জোদারো’র মাধ্যমে হৃতিককে রূপালি পর্দায় পাওয়া যাবে এক বছরেরও বেশি সময় পর। তার সবশেষ ছবি ‘ব্যাং ব্যাং’ মুক্তি পায় ২০১৪ সালে। দীর্ঘদিন পর তার পর্দায় ফেরাটা দর্শকদের মধ্যে বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাস্তিকতা ও বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে ঘিরে ‘রুস্তম’ তৈরি হয়েছে নানাবতি মামলার সত্যি ঘটনা অবলম্বনে। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা কে.এম. নানাবতির বিরুদ্ধে স্ত্রীর প্রেমিক প্রেম আহুজাকে খুনের অভিযোগ ওঠে। এই মামলা ভারতের বিচার ব্যবস্থাকে বদলে দিয়েছিলো। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছেন ইলিয়েনা ডি’ক্রুজ, এশা গুপ্তা ও অর্জন বাজওয়া। ‘রুস্তম’ প্রযোজনা করেছেন অক্ষয়ের ‘স্পেশাল ছাব্বিশ’ ও ‘বেবি’ ছবির পরিচালক নীরাজ পান্ডে।
‘রুস্তম’ ছবিতে অক্ষয় অভিনয় করেছেন নৌবাহিনীর কর্মকর্তার ভূমিকায়। লোকটা পার্সি। পার্সি চরিত্রে মানিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে অক্ষয় জানান, তার অনেক পার্সি বন্ধু আছে। স্কুলেই তার সেরা বন্ধু ছিলেন এক পার্সি ছেলে। খিলাড়ি তারকার ম্যানেজারও পার্সি। ম্যানেজারের বাবার গোফে অনুপ্রাণিত হয়েই তিনি নিজের গোফ সাজিয়েছেন। আদালতের একটি দৃশ্যের জন্য ওজন কমিয়েছেন অক্ষয়।
বাস্তবেও নৌবাহিনীর কর্মকর্তা হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন অক্ষয়। তার বাবা ছিলেন সেনাবাহিনীতে। কিন্তু তার ওই ইচ্ছা পূর্ণ হয়নি। পর্দায় নৌবাহিনীর কর্মকর্তার চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে কোনো বই পড়েননি, আলাদাভাবে কিছু শেখেনওনি অক্ষয়। ভারতীয় নৌবাহিনীর নিয়মকানুনও জানতে চাননি। কোনো কর্মকর্তার সঙ্গেও দেখা করেননি। হাঁটা, স্যালুট দেওয়া, ইউনিফর্ম ও ব্যাজ পরা দেখিয়ে দিতে এক নৌ-কর্মকর্তা সেটে ছিলেন। অক্ষয় বলেছেন, ‘ইউনিফর্মটা পরলে আপনাআপনি দায়িত্ববোধ চলে আসে। এটা আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুভূতি দেবে। ’
অক্ষয় এর আগে ‘হলিডে: অ্যা সোলজার ইজ নেভার অফ ডিউটি’তে সেনাবাহিনীর পোশাক গায়ে জড়িয়েছেন। এ ছাড়া ‘বেবি’তে সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দা প্রতিনিধি, ‘আন্দাজ’-এ ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা আর পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে ‘আন: মেন অ্যাট ওয়ার্ক’, ‘খাকি’, ‘মোহরা’, ‘ম্যায় খিলাড়ি তু আনাড়ি’ ও ‘খিলাড়ি ৭৮৬’ ছবিতে কাজ করেন তিনি।
‘রুস্তম’-এর বিষয়বস্তু বিয়ে বাঁচাবে ও বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেন অক্ষয়। তিনি মনে করেন ছবিটি মানুষকে ভাবাবে, যৌক্তিক করবে। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে দুইবার ভাবতে বাধ্য করবে এই গল্প। তার কথায়, ‘সাধারণত হিন্দি ছবিতে ছেলেরা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। পরে তার স্ত্রী ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে স্বামীকে মেনে নিয়ে সুখী জীবন কাটায়। কিন্তু এ ছবিতে স্ত্রীই পরকীয়ায় জড়িয়ে পরে স্বামীর কাছে ক্ষমা চায়। স্বামী সিদ্ধান্ত নেন তিনি মাফ করবেন কি-না। এটাই এ ছবির আকর্ষণ। কেউই বলতে পারবেন না তাদের জীবনে এমনটা হয়নি। ’
অন্যদিকে সিন্ধু সভ্যতার পটভূমিকায় প্রেমগাথা নিয়ে তৈরি ‘মহেঞ্জোদারো’তে নীল চাষীর ভূমিকায় দেখা যাবে ৪২ বছর বয়সী হৃতিককে। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয়ী আশুতোষ গোয়াড়িকর পরিচালিত ‘মহেঞ্জোদারো’ হলো প্রাক ঐতিহাসিক যুগের সিন্ধু সভ্যতার প্রেক্ষাপটে সাহসী প্রেমের মহাকাব্য। এ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পথচলা শুরু করছেন দক্ষিণী নায়িকা পূজা হেজ। এ ছাড়াও আছেন কবির বেদি, অরুণোদয় সিং ও মনীষ চৌধুরী।
৪৫ দিনে শেষ হয়েছে ‘রুস্তম’ ছবির কাজ, যেখানে হৃতিকের ‘মহেঞ্জোদারো’র সময় লেগেছে ১০১ দিন। ১০০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত ‘মহেঞ্জোদারো’ মুক্তি দেওয়া হবে আড়াই হাজার প্রেক্ষাগৃহে। অন্যদিকে ৫০ কোটি রুপি বাজেটের ‘রুস্তম’ মুক্তি পাবে দুই হাজার প্রেক্ষাগৃহে।
অল্প সিনেমা হল দিয়ে ভালো গল্প আর অভিনয়শিল্পীদের দক্ষতায় ভালো ব্যবসা করা ছবির উদাহরণ বলিউডে অসংখ্য। গত বছরেই তো শাহরুখ খানের ‘দিলওয়ালে’ বেশিসংখ্যক সিনেমা হল পেয়েও সঞ্জয়লীলা বানসালির ‘বাজিরাও মাস্তানি’র কাছে ব্যবসায়িক ভাবে হেরেছে। এবার তেমনই বড়সড় লড়াইয়ে কে জিতবেন সেই উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়েছেন অক্ষয় ও হৃতিক দু’জনই!
* ‘রুস্তম’ ছবির ট্রেলার :
* ‘মহেঞ্জোদারো’ ছবির ট্রেলার :
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
বিএসকে/জেএইচ