তার মতে, বারী সিদ্দিকী সংগীতশিল্পী হিসেবে যেমন সফল, ঠিক তেমনি বংশীবাদক হিসেবেও সফল।
দেশবরেণ্য এই গুণী শিল্পীকে শিল্প জগতের প্রকৃত সাধক বলেও আখ্যা দিলেন আপেল।
নিজেকে বারী সিদ্দিকীর প্রিয়ভাজন বড় ভাই উল্লেখ করে আ ফ ম রফিকুল ইসলাম আপেল বাংলানিউজকে বলেন, ‘১৯৮৩ সালে আমিই বারীকে প্রথম নেত্রকোনা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এনেছিলাম। ওই বছরের জুলাই মাসের কোনো একরাতে শহরের সাতপাই কলেজ মাঠে মনের সুখে বাঁশি বাজাচ্ছিলেন বারী। আমি ওই পথে হেঁটে যাওয়ার সময় তার বাঁশির সুর শুনে দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হই। কথা হয় বারীর সঙ্গে এবং তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে আসার আমন্ত্রণ জানাই’।
‘এক সময় শিল্পকলায় এলে সে সময়কার যুবক বারী সিদ্দিকীকে প্রশিক্ষণের জন্য উচ্চাঙ্গ সংগীতশিল্পী গোপাল দত্তের হাতে তুলে দেই’।
‘কিছুদিন ওস্তাদ গোপালের সান্নিধ্যে থাকার পর আমার মাধ্যমেই বংশীবাদক পান্না লাল ঘোষের শিষ্য আমিনুর রহমানের কাছে বাঁশিতে তালিম নেন বারী’- বলেন আপেল।
তিনি বলেন, ‘এভাবেই পর্যায়ক্রমে শিল্প সাধনায় একাগ্রতা ও চেষ্টায় সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন বারী। দেশ-বিদেশ ঘুরে বড় বড় ওস্তাদদের সান্নিধ্যও লাভ করেন। আশির দশকের শেষের দিকে নিজ গুণে গুণান্বিত বারী বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) স্টাফ মিউজিশিয়ান হয়ে যান। সে সময় বাংলা সিনেমার অনেক গানে বাঁশি বাজিয়েছেন তিনি’।
‘যতোদূর মনে পড়ে, নব্বইয়ের দশকেই কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে বারী সিদ্দিকীর পরিচয় হয়। তখন হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করে প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি’।
‘১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে সাতটি গান গেয়েছেন বারী সিদ্দিকী। সে গানগুলো দিয়েই দেশজুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি’।
নেত্রকোনার সন্তান বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর জেলা সদরে জন্মগ্রহণ করেন। গত শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীর নিজের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অচেতন হয়ে যান তিনি। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন>>
** আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি?
ডায়াবেটিসেও আক্রান্ত জনপ্রিয় এই শিল্পীর দু’টি কিডনি অকার্যকর হয়ে পড়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) ভোররাত থেকে স্কয়ার হাসপাতালে এখনও লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন তিনি।
বারী সিদ্দিকীর কণ্ঠে গাওয়া অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘শুয়াচান পাখি’, ‘আমার গায়ে যতো দুঃখ সয়’ ও ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’ ইত্যাদি।
সারা দেশের মতো নেত্রকোনা জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শ্রোতা-ভক্তরাও গুণী এই শিল্পীর দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২০, ২০১৭
এএসআর