১৯৮৯ সালের ৭ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মাকসুদা আকতার প্রিয়তি। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খেয়েছিলেন প্রিয়তি।
প্রিয়তি বিশ্বখ্যাত হয়েছেন মিস ইউনিভার্সাল রিয়্যালিটি, মিস আয়ারল্যান্ড এবং মিস আর্থ খেতাবের মাধ্যমে। এছাড়াও আয়ারল্যান্ডের শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন আইরিশ গ্ল্যামারের দৃষ্টিতে বর্ষসেরা মডেল নির্বাচিত হয়েছেন তিনি এবং আইরিশ বডি পেইন্টিং চ্যাম্পিয়নশিপে বিজয়ী জার্মানির বিয়াঙ্কার সঙ্গে কাজ করেছেন এই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আইরিশ সুন্দরী। এর মূলভাব ছিলো- দ্য কুইন অব অটাম।
ইতিমধ্যে তিনি যোগ হয়েছেন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের বিচারক হিসেবে। এছাড়াও ‘কুইন অব সাউথ এশিয়া’র অতিথি বিচারক ছিলেন প্রিয়তি। দেশে এসে ব্যস্ততার মাঝেও একদিন সময় দিয়েছেন বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’কে।
বাংলানিউজ: কেমন আছেন?
মাকসুদা আকতার প্রিয়তি: জ্বি, ভালো আছি।
বাংলানিউজ: আপনাকে সবাই প্রিয়তি নামেই তো সম্বোধন করে?
প্রিয়তি: জ্বি, তবে আইরিশরা ‘মাকসুদা’ বলে ডাকে, কারণ পাসপোর্টের প্রথম নাম ‘মাকসুদা’।
বাংলানিউজ: ‘মিস আয়ারল্যান্ড’-এ নাম লেখালেন কীভাবে এবং এর প্রতি আগ্রহইবা কেনো জন্মালো আপনার ভেতর?
প্রিয়তি: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে আগ্রহ হলেও প্রথমে ভেবেছিলাম আমার স্কিন কালারের জন্য সিলেক্ট হবো না। পরে ভাবলাম ট্রাই করতে দোষ কি। তাদের অফিসে যোগাযোগ করে জানতে পারি অংশগ্রহণ করতে পোর্টফলিও জমা দিতে হবে। আমি ছোটবেলা থেকেই টুকটাক মডেলিং করি। তাই নিজের টাকা দিয়ে ফটোশ্যুট করে পোর্টফলিও জমা দিয়ে দিই। মূলত আগ্রহটা ছোটবেলা থেকেই ছিলো, তাই সুযোগটি হাতছাড়া করিনি।
বাংলানিউজ: অভিনয়ের ক্ষেত্রে চরিত্রকে যেভাবে গুরুত্ব দেন
প্রিয়তি: চরিত্র ছোট বা বড়, মূল অথবা পার্শ্ববর্তী চরিত্র যাই হোক না কেন, বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যে জিনিসটি খেয়াল করি, তা হলো চরিত্রটি মানুষের ভেতর জায়গা করতে পারলো কিনা। চরিত্রটি মানুষ মনে রাখবে কিনা, চরিত্রটি কোনো বার্তা দেয় কিনা, চরিত্রটিতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা অথবা চরিত্রটি আমি ফুটিয়ে তুলতে পারবো কিনা। এসব বিষয় চিন্তা করে আমি চরিত্র বাছাই করি।
বাংলানিউজ: অভিনয়ে নিজেকে যেভাবে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা আছে
প্রিয়তি: অভিনয়কে আসলে পেশা হিসেবে না, শুধুই ভালোবাসা থেকে করা। সেক্ষেত্রে আমি সময় নিয়ে অভিনয় শিখছি, কারণ অভিজ্ঞতা যতো বাড়বে অভিনয়টা ঠিক সেভাবেই পাকা হতে থাকবে। তাছাড়া আমার যেহেতু অভিনয়ের জন্য অনেকগুলো ক্ষেত্র খোলা আছে, তাই এই রাস্তায় ধীরে ধীরে হাঁটছি। সেটি হতে পারে শেষ বয়সেও, এমন না তাড়াহুড়ো করে নায়িকা হতে হবে। আমি সবকিছু গুঁছিয়ে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
বাংলানিউজ: আপনি পোল ড্যান্স শিখেছেন। পোল ড্যান্স শিখতে গিয়ে আপনি কী কী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?
প্রিয়তি: আইরিশ পোল ড্যান্স একাডেমি থেকে টানা দুই বছর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ওই দুই বছর প্রশিক্ষণের পর ব্যাথ্যায় কেঁদেছি প্রতিরাত, আমার বাদামী বর্ণের শরীরে ঠোসা পড়ে যেতো কালো কালো অথবা গাঢ় লাল। তারপরও প্রতিদিনের অগ্রগতিতে ছিলো আনন্দ। বন্ধুরা বলতো, ‘মাকসুদা নিজেকে এতো ব্যাথা দিয়ে কেন শিখছ এই নাচ?’ আমি বলতাম, ‘যা সবাই শিখতে চায় না সেটির প্রতিই আমার আগ্রহ বেশী। আমার আগে বাংলাদেশি কোনো মেয়ে বা ছেলে বাংলাদেশে বা দেশের বাইরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কেউ ‘পোল ড্যান্স আর্টিস্ট’ হয়েছেন বা 'পোল ড্যান্স শিখেছেন? আমার মনে হয় না।
বাংলানিউজ: মিডিয়াতে কাজ করতে পেশাদারিত্ব কেমন হওয়া উচিৎ?
প্রিয়তি: পেশাদারিত্বের দিক থেকে বাংলাদেশের মিডিয়া জগৎ অনেক পিছিয়ে আছে। এগিয়ে যাবার জন্য অনেক কঠোর হতে হবে পেশাদারিত্বের জায়গায়। আমি জানি না কিভাবে মানুষ এইভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং কাজ শেষও হচ্ছে। হতে পারে সবাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কিন্তু আমি এই পুরো পদ্ধতির সঙ্গে নিজেকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাই, বলতে পারেন একেবারে ছিটকে পড়ে যাই।
বাংলানিউজ: অভিনয় জগতে আপনি কী অবদান রাখতে চান?
প্রিয়তি: অবদানের কথা এখনি আমার বলা মানায় না বা বলতে পারেন সময় হয়নি। আমি এখনও অভিনয়ের ক্লাস করছি, মাঝে মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছি, ফলাফল ভালো হলে তো সবাই জানবেই। তখন মনে হয় সময় আসবে বলার। আপাতত শিখতে থাকি এবং দর্শকরা ফলাফলের আশায় থাকুক...(হা...হা...হা)।
বাংলানিউজ: চলার পথে আপনার যারা অনুপ্রেরণা
প্রিয়তি: এখনো যে শক্ত মনোভাব নিয়ে বেঁচে আছি তা আমার মা ‘মরহুম মোসেন আরা’র অনুপ্রেরণা। আমার মায়ের কাছে আমি জীবন যুদ্ধ কী, সেটি শিখেছি। তিনি আমাকে পৃথিবীতে সমস্যা মোকাবিলা করার সাহস দিয়েছেন। আমার মা আমার জীবন যুদ্ধের শ্রেষ্ঠ নারী। মা আমার আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। যদি নীতি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বলি, তাহলে আমার বাবা মরহুম আব্দুর রশিদ এবং চাচা মরহুম সামসুর রহমান।
বাংলানিউজ: ভবিষ্যতে বাংলাদেশে নিজেকে কোথায় দেখেন?
প্রিয়তি: অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের সামাজিক কর্মী হিসেবে আমি কাজ করছি এবং একটি সংস্থারর সঙ্গেও যুক্ত আছি। আয়ারল্যান্ডে থাকলেও দেশকে, দেশের মানুষকে সবসময় মনে পড়ে। দেশ ও দেশের মানুষের জন্য তাই কিছু করতে চাই। ভবিষ্যতে চিন্তা আছে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার। দেশের প্রয়োজনে আমি আয়ারল্যান্ড ছেড়ে বাংলাদেশে ফিরে আসতেও প্রস্তুত।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশকে কেমন মিস করেন?
প্রিয়তি: কিভাবে এর বর্ণনা দেয়া যায় তা আমার জানা নেই। এটি বোঝানোর ক্ষমতাও নেই আমার। শুধু এটুকুই বলতে পারি, বাংলাদেশে এলেই হৃদয় ফিরে পাই। আয়ারল্যান্ডে নিজেকে রোবট মনে হয়।
বাংলানিউজ: ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রিয়তি: বাংলানিউজকেও ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
আরসি/বিএসকে/এসএইচ