ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পর্যটন

কত ফারাক এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
কত ফারাক এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের! সাজানো বিয়ে বাড়ি, ছবি: আসিফ আজিজ

সিলেট থেকে ফিরে: আশির দশকের বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই পাড়াজুড়ে বিভিন্ন বাড়ি থেকে চেয়ার-টেবিল সংগ্রহ।  তাতে নানান জাতের, নানা রঙের, নানা ঢঙের চেয়ারের জড়ো হতো। কখনও কখনও স্কুলের বেঞ্চও ব্যবহার করা হতো। অপেক্ষাকৃত নিম্নবিত্ত পরিবারে মসজিদের চট, বিভিন্ন বাড়ি থেকে বিছানা কিংবা খেজুর পাতার চাটাই সংগ্রহ করে উঠানে পেতে দেওয়া হতো। আবার কখনও কখনও খড় বিছিয়ে দেওয়া হতো বসার জন্য।

একইভাবে প্লেট-গ্লাসও বিভিন্ন বাড়ি থেকে ধার করে আনা হতো। অনুষ্ঠান শেষে ফিরিয়ে দেওয়া হতো।

ক্ষেত্র বিশেষে (বিশেষ করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে) কলাপাতা ও কলা গাছের খোলা বহুল প্রচলিত ছিল। হাড়ি-পাতিল আসতো বিভিন্ন বাড়ি থেকে। ব্যবহৃত হতো ধান সিদ্ধ করার বড় ডেকচি।

আর প্যান্ডেল তৈরি করা হতো চট, বিছানার চাদর ও শাড়ি জোড়া দিয়ে। কোথাও কোথাও কলাপাতা কিংবা বস্তা ঝুলিয়ে দিতেও দেখা যেতো। গেট তৈরি করা হতো কলাগাছ ও বাঁশের চাটাই দিয়ে। সেই সংস্কৃতি এখন সুদূর অতীত।

এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও ঢুকে গেছে ডেকোরেটর। বিয়ে-শাদি হলেই ডাক পড়ে ডেকোরেটরের। তারা এসে প্যান্ডেল সাজিয়ে দিচ্ছে, প্লেট-গ্লাস, হাড়ি-পাতিল থেকে শুরু করে চেয়ার টেবিল পর্যন্ত সরবরাহ করছে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে ডেকোরেটরেও। আগে কাঠের চেয়ার ব্যবহার করা হতো, এখন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের চেয়ার-টেবিল।

নিম্নবিত্ত পরিবারের অনুষ্ঠানেও ডাক পড়ে ডেকোরেটরের। এই চিত্র মোটামোটি দেশের বেশিরভাগ এলাকার।   আর রাজধানীর ফ্ল্যাট বাড়িতে যেহেতু জায়গা সংকুলান হয় না, সে কারণে কমিউনিউটি সেন্টারের দারস্থ হন বাসিন্দারা। একই ধরনের চিত্র বন্দরনগরী চট্টগ্রামেও। বাড়ির সীমানা, ছবি: আসিফ আজিজতবে সিলেট বিভাগের চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। গ্রামের মেঠো পথের ধারে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামেও দেখা মিলবে কমিউনিটি সেন্টারের। কোনো কোনো কমিউনিটি সেন্টারের পাশে তো হেলিপ্যাডও রয়েছে। এ অঞ্চলে বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ভাড়া করা এসব কমিউনিটি সেন্টারে। আর্থিক সামর্থ্যের সঙ্গে মিল রেখে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করা হয়। একই গ্রামে বর-কনের বাড়ি, কিন্তু দশ কিলোমিটার দূরে কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে। এখন অনেকটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে বিয়ের আয়োজন।

কেউ কেউ বিয়েতে বিশাল গাড়ি বহর, আবার কেউ হেলিকপ্টার নিয়ে যাচ্ছেন কনে তুলে আনতে। অনুষ্ঠান আয়োজনেও যেমন ভিন্নতা রয়েছে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তেমনি বসতবাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে পুরো বৈপরীত্য রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সিলেটের সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চলের।

উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে আরেকটি বাড়ি দেখা যাবে। পুরো গ্রাম প্রায় চেইনের মতো সংযুক্ত। কিন্তু প‍ূর্বাঞ্চল তথা সিলেট-কুমিল্লায় একটি বাড়ি থেকে আরেকটি বাড়ির দূরত্ব বেশ। বাড়িগুলোর চারদিকে রয়েছে গাছ-গাছালি। বিশেষ করে সিলেটে বেশিরভাগ বাড়িতে পুকুরের দেখা মিলবে। কোনো কোনো ‍বাড়ির সামনে-পেছনে দুইদিকেই পুকুর রয়েছে। সামনের পুকুর পুরুষরা আর পেছনের পুকুর নারীরা ব্যবহার করেন।
 
সিলেট অঞ্চলে আরেকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হচ্ছে, রাস্তার কোলঘেঁষে সীমানা প্রাচীর দেওয়া। দেখা যাবে ভেতরে কোনো অবকাঠামো নেই, কিন্তু রাস্তা ঘেঁষে সীমানা প্রাচীর দেওয়া। আবার অনেক বাড়ি রয়েছে, যেখানে গেটের কোনো বালাই নেই, নেই অন্য তিনদিকে প্রাচীর, অথচ রাস্তা ঘেঁষে প্রাচীর ঠিকই রয়েছে।

সম্প্রতি মৌলভীবাজার সফরে একটি বিষয় খুবই অবাক করেছে। বড়লেখা থানার হাকালুকি গ্রামে অনেক বাড়িতে গেট নেই, অন্য তিন দিকেও ফাঁকা কিন্তু রাস্তার দিকে ঠিকই প্রাচীর দেওয়া। অনেক ক্ষেত্রে রাস্তার সঠিক মাপও রক্ষা করা হয়নি।

এখানে উত্তরাঞ্চলে বৈপরীত্য দেখা যাবে। উত্তরাঞ্চলে বাড়ির সামনে কিছুটা জায়গা ছেড়ে প্রাচীর দেওয়া হয়, যা  খুলি হিসেবে পরিচিত। অবসরে আড্ডা কিংবা গবাদি পশু রাখার কাজে ব্যবহৃত হয় জায়গাটি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৭
এসআই/আরআর/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।