রাজকুমার বানদুং বনদৌসো রাতু বোকো দুর্গ আক্রমন করেন এবং রাজা বোকোকে হত্যা করেন। এরপর থেকেই তিনিই শাসনভার নেন।
রাজা বোকোর সুন্দরী কন্যা রাজকুমারী রারা যোংগ্রাংয়ের প্রেমে পড়লেন বানদুং। কিন্তু বাবার খুনিকে বিয়ের কোনো ইচ্ছেই নেই যোংগ্রাংয়ের।
রাজ্যের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মাধ্যমে যোংগ্রাংয়ের কাছে বারবার প্রস্তাব পাঠাতে থাকেন বানদুং, বিয়ের জন্যে চাপ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে রাজি হন যোংগ্রাং। তবে দিয়ে বসেন এক অসম্ভব শর্ত। রাজকুমারীকে পেতে হলে এক রাতে এক হাজার মন্দির তৈরি করতে হবে বানদুংকে।
নিবিড় ধ্যানে বসেন বানদুং। আধ্যাত্মিক শক্তি আর কারিগর ছাড়া এ কাজ সম্ভব নয়। দিনের আলো নেভার সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত গড়ে উঠতে থাকলো মন্দির। এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে মাঝ রাতের আগেই এক হাজার মন্দির নির্মাণ হয়ে যাবে। বানদুং যখন এই কঠিন শর্ত বাস্তবায়নের পথে এবং ৯৯৯ টি মন্দির নির্মাণ শেষ, তখনই এক কূটচালের আশ্রয় নিলেন রাজকুমারী যোংগ্রাং। তিনি তার সব ভৃত্যকে জাগিয়ে তুললেন। তাদের নির্দেশ দিলেন গ্রামের নারীদের দিয়ে চাল ছিটিয়ে আসতে এবং মন্দিরের পূর্ব পাশে আগুন জ্বালাতে।
কেন এমন নির্দেশনা! প্রথমে অনেকেই বুঝে উঠতে পারেননি। তবে চাল ছিটানোর কারণে যখন মোরগ-মুরগি ডাকাডাকি শুরু করলো এবং পূর্ব দিক থেকে আগুনের আলো এসে পড়লো বানদুংয়ের আধ্যাত্মিক রাজমিস্ত্রীরা ভাবলেন-এই বুঝি সকাল হয়ে গেছে এবং তারা পালিয়ে গেলো ভূমি গর্ভে।
একটি মন্দিরের জন্যে পূরণ হলো না এক হাজার মন্দির নির্মাণ। অথচ সত্যিকারের সকাল হতে ঢের বাকি।
রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রাজকুমার। এই ছলচাতুরীর প্রতিশোধ নিলেন তিনি রারা যোংগ্রাংকে পাথর বানিয়ে ফেললেন! আর এই মন্দিরটিই হয়ে উঠলো এক হাজারতম মন্দির এবং সবচেয়ে সুন্দর।
প্রচলতি আছে, এক হাজারতম মন্দিরটির কাজ শেষ হয়নি সেটা শয়তানদের সৃষ্টি আর শিভার মন্দিরের উত্তরের মন্দিরটি দুর্গার। যেটাকে স্থানীয়রা এখনও রারা যোংগ্রাং বা কুমারি স্লেন্ডার নামে ডাকেন।
স্থানীয় সংস্কৃতিতেও মিশে রয়েছে এই মন্দিরের প্রেক্ষাপট আর বিভিন্ন গল্প। ইন্দোনেশীয় সঙ্গী দামার বললেন, যদি কাউকে ভারি কাজ দেওয়া হয় যেটা হয়তো অল্প সময়ে করা সম্ভব নয়। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি তো রাজকুমার বানদুং নই। ’
এই মন্দিরে ঢোকার টিকেট বিদেশিদের জন্য ২ হাজার টাকা। আর স্থানীয়দের জন্যে ৩২০ টাকা। এবারও পথ বাতলালেন দামার। তিনি আমাকে বললেন, ‘তোমার কোনো কথা বলার দরকার নেই। শুধু মাথার টুপিটা দিয়ে চোখ আড়াল করে মোবাইল ফোনে ব্রাউজ করতে থাকো। ’
পড়ে জানতে চাইলাম, আমাকে এখানে দেখেতো বিদেশি মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই। চোখ ঢাকতে বললে কেন? দামার বললেন, তোমার চোখের পাতা অনেক ঘন। ইন্দোনেশীয়দের এমনটা কম হয়। আর এরা অনেক সময় চোখ দেখলে বুঝতে পারে কিছু একটা ভুল হচ্ছে!আমি আরও দ্রুত গতিতে মোবাইল ঘাটাতে শুরু করলাম। কারণ ভয় এখন আরও বেড়ে গেছে, গেট পার হওয়ার পরও খালি মনে হচ্ছে পেছন থেকে বুঝি গার্ডরা এসে কলার টেনে ধরবে!
নয়’শ শতাব্দীর এই হিন্দু মন্দির একেবারে কেন্দ্রীয় জাভায়। এই মন্দির ত্রিমূর্তিকে বহন করে। সৃষ্টির দেবতা ব্রা, রক্ষাকারী ভিষ্ণু এবং ধ্বংসকারী শিভা।
যুগজাকার্তা শহর থেকে এগারও কিলোমিটার উত্তর পূর্বে ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ এই মন্দির সেন্ট্রাল জাভা এবং যুগজাকার্তা প্রদেশের সীমা রেখায় পড়েছে।
এটা ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় মন্দির এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মন্দিরগুলোর একটি। এর মাঝখানের ৪৭ মিটার উঁচু মন্দিরটি অন্য মন্দিরগুলো দ্বারা ঘেরা।
এখানকার পাহাড়ের পাথর ছাই রংয়ের। তাই ভারতীয় উপমহাদেশের মতো এখানে লাল পাথর বা ইটের মন্দির দেখা যায় না। বরং ছাই রংয়ের বড় পাথরের উপর বেশ কষ্ট করেই টেরোকাটা করা হয়েছে। মন্দিরের টেরাকাটায় অনেক বেশি পশু পাখির স্থাপনা বসানো। দেখতে দেখতে কখন যেন সময় চলে যেতে লাগলো। এখানে লোকাল গাইড পাওয়া যায়। দেখা গেলো পর্তুগীজ ভাষায় একজন গাইড পর্যটকদের বুঝিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৭
এমএন/এমএ