ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাইব্যুনাল

মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের খবরে বিরক্ত হয়েছিলেন বাবর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের খবরে বিরক্ত হয়েছিলেন বাবর

ঢাকা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের খবরে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। সে সময় র‌্যাবের মহাপরিচালককে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতেও নিষেধ করেছিলেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার যুক্তিতর্ক শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান এ কথা বলেন।

সৈয়দ রেজাউর রহমান মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দশম দিনের মতো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছেন।

এ সময় র‌্যাবের মহাপরিচালক আব্দুল আজিজ সরকারের দেয়া জবানবন্দির আলোকে আদালতে বক্তব্য প্রদান করেন।

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার চলছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন মামলার যুক্তিতর্ক শুনছেন।

বুধবার (১৫ নভেম্বর) একাদশ দিনেও রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উত্থাপন শেষে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উত্থাপন শুরু হবে।

রেজাউর রহমান বলেন, ২০১১ সালের ৮ মার্চ র‌্যাবের মহাপরিচালক আব্দুল আজিজ সরকার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন। পরদিন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছেও একই জবানবন্দি দেন তিনি। আদালতে তার দেওয়া বক্তব্য সমর্থন করেই তিনি সাক্ষ্য দেন।

র‌্যাব মহাপরিচালকের সাক্ষ্য তুলে ধরে রেজাউর রহমান বলেন, ২০০৫ সালের বিভিন্ন সময় বোমা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মুফতি হান্নানকে ওই বছরেরই ১ অক্টোবর মেরুল বাড্ডা থেকে গ্রেফতার করা হয়। মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের খবরটি তিনি তৎকালীন পুলিশের আইজি আব্দুল কাইয়ুম ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে অবহিত করি। মুফতি হান্নানের গ্রেফতারের খবরে বাবর সন্তুষ্ট না হয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলেন।

টিএফআই সেলে মুফতি হান্নান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার কথা স্বীকার করলে তাও বাবরকে জানানো হয়। কিন্তু বাবর এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না দিয়ে বরং এ বিষয়ে আর কোনো পদক্ষেপ নিতে তাকে নিষেধ করেন বলে আদালতে জানান কৌঁসুলি রেজাউর রহমান।

মামলাটি প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে উত্থাপন করা হয়েছে।

৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।

এ মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। ২০১৫ সালের  ২১ নভেম্বর রাতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলার অন্যতম আসামি সাবেক মন্ত্রী জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়। এছাড়া মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল ওরফে বিপুলের ১২ এপ্রিল রাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আট আসামি জামিনে, ১৮ আসামি পলাতক ও ২৩ আসামি হাজতে রয়েছেন।

এ মামলার জামিনে থাকা আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডি’র সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।

অন্যদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে আটক আছেন। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির সাবেক এমপি কাজী শাহ মোফাজ্জেল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৮ জন আসামি পলাতক রয়েছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৭
এমআই/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ট্রাইব্যুনাল এর সর্বশেষ