ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ট্রাইব্যুনাল

নবীগঞ্জের ৩জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৮
নবীগঞ্জের ৩জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশ

ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় গজানাইপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল খায়ের গোলাপ মিয়াসহ (৬৬) তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

বৃহস্পতিবার (০৮ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন বিষয়ে বক্তব্য দেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান।


  
এ মামলার অন্য দুই আসামি হলেন, মো. জামাল উদ্দিন আহম্মদ ওরফে মো. জামাল উদ্দিন (৬৫) ও শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ (৭০)। তিন আসামির মধ্যে গোলাপ মিয়াকে গত বছরের ১২ এপ্রিল এবং ২৩ নভেম্বর বিএনপি সমর্থক জামাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। জামায়াত সমর্থক গিয়াস উদ্দিন লন্ডনে পলাতক।
  
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এ মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।  

এর মধ্যে ১৭ জনকে হত্যা, ৬ নারীকে ধর্ষণ, ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ৩০ জনকে অপহরণ-নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। পাঁচটি অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ এ মামলার মোট সাক্ষী ২৩ জন।
 
প্রথম অভিযোগে বলা হয়েছে,  মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ৯ নভেম্বর ভোর ৫টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ ২০/২৫ জন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জ থানার মামদপুর হিন্দুপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিন বাবু রায়কে হত্যা করেন।  

এদিন আসামিরা গৌরী রানীসহ মোট ১০জন লোককে আটক ও অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। এর মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী চারজনকে হত্যা করা হয়। এ অভিযানে দুই নারীকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানি আর্মিরা। রাজাকাররা লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে।
 
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর ভোর ৫টায় আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের কান্দিরগাও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দরছ মিয়াকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করে দিনারপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেন। তারা দরছ মিয়ার বসতঘর পুড়িয়ে দেন।
 
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১০ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মিকে সঙ্গে নিয়ে নবীগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামে হিন্দুপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নিরাই নমশুদ্রসহ হিন্দু ধর্মাবলম্বী তিনজনকে অপহরণ করে আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করেন।
 
চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর ভোর ৫টার দিকে আসামি শেখ গিয়াস উদ্দীন আহমদ অন্যান্য রাজাকার ও কয়েকজন পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের বনগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে জহুর উদ্দিন, জনূ উল্লাহ ও দেওয়ান মামুন চৌধুরীকে অপহরণ আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে।  

পরে অর্থের বিনিময়ে জহুর উদ্দিন ও দেওয়ান মামুন চৌধুরী মুক্তি পেলেও জনূ উল্লাহকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ গুলি করে হত্যা করে। এ অভিযানের সময় জহুর উদ্দিনের মা ও এক বোন পাকিস্তানি আর্মিদের ধর্ষণের শিকার হন।
 
পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে আসামি আবুল খায়ের গোলাপ মিয়া ও মো. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ একদল পাকিস্তানি আর্মি নিয়ে নবীগঞ্জের লোগাঁও গ্রামে অভিযান চালিয়ে দুই নারীকে ধর্ষণ করে এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮,২০১৮
ইএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ট্রাইব্যুনাল এর সর্বশেষ