ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তির পারাবত!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
হ-য-ব-র-ল বগিতে ভোগান্তির পারাবত!

পারাবত এক্সপ্রেস (ঢাকা টু সিলেট) থেকে: ছোটবেলায় আদর্শলিপিতে এলোমেলো বর্ণমালা থেকে অক্ষর বাছাই করতে গিয়ে কার না বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।  বহুদিন পর ছোটবেলার সেই স্মৃতিই মনে করিয়ে দিলো বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ঢাকা থেকে সিলেটের পথে বারো বগি নিয়ে ছুটে চলা পারাবত ট্রেনটির ইঞ্জিনের পরে প্রথম রয়েছে এক্সট্রা বগি, এরপর যথাক্রমে- ক, জ, ঞ, ট, খ, নাম বিহীন (এক্সট্রা-১), চ, এক্সট্রা-৪, গ, ও ঠ।

এবার বুঝুন ঠ্যালা। যেসব যাত্রী ‘চ’ বগির সামনে দাঁড়িয়ে তারা ‘গ’ খুঁজতে কোনদিক ছুটবেন? সামনে নাকি পিছনে!

সিলেটের পথে বাংলানিউজের একটি টিম সফর করছে এই পারাবত এক্সপ্রেসে। নির্দিষ্ট বগি খুঁজে ট্রেনে উঠতে বেগ পেতে হলো বেশ।

সাধারণত ট্রেনে যাত্রীদের যেনো খুঁজে পাওয়া সহজ হয়, সে জন্যই বর্ণের ক্রমানুসারে বগি সাজানো হয়। যেনো একটি বগি দেখলেই যাত্রীরা বুঝতে পারেন, তার বগি কোন দিকে। সেদিকে পা বাড়াতে পারেন। কিন্তু পারাবতে তার কোনো বালাই নেই।

করিৎকর্মা কর্তা-কর্মীদের এই কর্মের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছালে মালপত্র-বাক্সপেটরা নিয়ে প্রাণপন ছুটতে দেখা গেছে যাত্রীদের। এতে স্টেশনে তৈরি হয় বাড়তি হুড়োহুড়ি।

সাদেক নামে এক রেলসেবক দাবি করলেন, বগি কাটাকাটি করার কারণে এমন এলোমেলো হয়ে গেছে। তা না হলে প্রথমে ক, তারপর ট, ঠ, ঝ, ঞ- এভাবে থাকার কথা।

তবে তার কথা শুনে পাশ থেকে ক্ষেপে উঠলেন ভৈরবগামী যাত্রী রবিউল ইসলাম রবি। বললেন, গত কয়েকমাস ধরেই এমন অবস্থা দেখছি। কী যে যন্ত্রণা হয় বগি খুঁজে নিজেরটাতে উঠতে। মানুষ গিজগিজ করে স্টেশনে।

এরা আসলে মানুষকে কীভাবে কষ্ট দেওয়া যাবে সেই উপায় বের করার চেষ্টা করে। না হলে কেউ কি এভাবে বগি সাজায়?, প্রশ্ন ওই যাত্রীর।  

সে কথায় সায় আরেক যাত্রী হাজী মাসুক মিয়ারও।  তারও ক্ষোভ ওই রেল সেবকের ওপর, ও মিয়া আন্দু মাত মাতো কিল্লাই। আমি ও দু’বছর যাইরাম এই ট্রেনে। টুকাইতে টুকাইতে বগিতে উঠতে হয়।

অবস্থা বেগতিক দেখে রেল কর্মীটি আর কথা বাড়ালেন না।

বিষয়টি সত্যিই বিভ্রান্তিকর। আর এ নিয়ে যাত্রীদের বড় ধরনের ঝামেলাতেই পড়তে হয়। দেখা গেলো, বেশিরভাগ বগির গায়েই চক দিয়ে অক্ষরটি লেখা। তাও অধিকাংশই অস্পষ্ট। একাধিক বগি দেখা গেলো যার গায়ে কিছুই লেখা নেই।

একই বগির দরজায় লেখা ‘ঘ’ আর অদূরে গায়ে লেখা ‘গ’। এরকম অসংখ্য অসঙ্গতিতে ভরপুর।

যাত্রীরা বললেন, স্রেফ ইচ্ছা করলে আর যাত্রীদের প্রতি সহযোগিতা বা সেবামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেই এ সমস্যা এড়ানো যায়।

চক দিয়েই তো লেখা! ঠিক সিরিয়ালে লিখে গেলেই হয়, মন্তব্য আরেক যাত্রীর।

এই রুটে যারা নিয়মিত যাতায়াত করেন তাদের প্রায় সবারই মত, এভাবেই বছরের পর বছর চলছে পারাবত এক্সপ্রেস।

এ নিয়ে সফরসঙ্গী সহকর্মী বাংলানিউজের অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর আসিফ আজিজ তার সম্প্রতি ভারত সফরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছিলেন, সেদেশে কোন বগি স্টেশনের কোন পয়েন্টে দাঁড়াবে এটাও আগে থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়। যেনো যাত্রীদের ট্রেন আসার পর ছুটতে না হয়। এতে সময় বাঁচে রেলওয়ের।

পারাবত এক্সপ্রেসে দেখা গেলো, নানান পদ-পদবীর ২২ জন কর্মী-কর্মকর্তা রয়েছেন। যাত্রীরা যখন এদিক-ওদিক ছুটে ভোগান্তির একশেষ, তখন তাদের দেখা গেলো পুরোই নির্বিকার।

বিষয়টি নিয়ে পারাবত এক্সপ্রেসের পরিচালক নিজামউদ্দিন আহাম্মদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সময় ট্রেন বিকল হয়ে গেলে সময় বাঁচানোর জন্য এমন করা হয়। তখন বগি সিরিয়াল অনুযায়ী সাজাতে গেলে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে।

যাত্রীদের ভোগান্তি হয় স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি, যাত্রীরা জানতে চাইলে বলে দেই।

চক দিয়ে লেখা প্রসঙ্গে বলেন, অক্ষরগুলো টোকাইরা নিয়ে যায়। আর আমাদের বর্ণ সরবরাহ নেই, এ কারণে চক দিয়ে লেখা হয়েছে।

চক দিয়ে বগি সিরিয়াল ঠিক করে কেন লেখা যায় না, এ প্রশ্নে নিজামউদ্দিন বলেন, নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে কিন্তু কর্মীদের গাফিলতির কারণেই হয়তো হয় না!
 
বাংলাদেশ সময় ১১৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
এসআই/এমএমকে/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ