ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
‘সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে চায় না’ ছবি- শুভ্রনীল সাগর- বাংলানিউজটোয়েন্টিফাের

লাউয়াছড়া (শ্রীমঙ্গল) থেকে: ‘সিলেট বিভাগে মাত্র ৩৪ জন স্টাফ রয়েছে। তাও আবার অফিস সহকারীসহ।

জীববৈচিত্র্যের এতোবড় অঞ্চলে ৩৪ জনে কী হয়? নামকাওয়াস্তে থাকা আরকি!’

কী বলেন, মাত্র ৩৪ জন!

‘হ্যাঁ, ১২৫০ হেক্টরের লাউয়াছড়ায় মাত্র দু’জন। শুধু টহলই যদি দেয়, আপনিই বলেন- সম্ভব?’

উল্টে প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (বন্যপ্রাণি বিভাগ) মিহির কুমার দো। বন্যপ্রাণী সংশ্লিষ্ট যাবতীয় বিষয় তিনিই দেখেন। দুর্নীতিবাজ সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক ওসমান গনির নয়-ছয় আমলের পর বলা যায়, তার হাত ধরেই এ অঞ্চলে ‘বন্যেরা বনে সুন্দর’ হয়ে উঠছে। এ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মুখে তার সুনামও রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।  

এ সদিচ্ছু কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে পড়েছে লাউয়াছড়া (মৌলভীবাজার) ও সাতছড়ি (হবিগঞ্জ) অঞ্চলটুকু। বাকি অংশ সিলেট বনবিভাগের আওতায়। জানকীছড়া ও বাগমারায় একজন করে স্টাফ রয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জে নেই। বন্যপ্রাণীর দেখভাল তার উপর বর্তালেও লোকবলের অভাবে বাকিটা সিলেট বনবিভাগকেই দেখতে হয়।

বাংলানিউজের ‘বছরজুড়ে দেশ ঘুরে’র চলতি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) মৌলভীবাজারের বষিজোড়ায় বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দফতরে কথা হয় তার সঙ্গে।  

কখনও কখনও প্রশাসনিক জটিলতাও তৈরি হয়। জানালেন, মাস দু’য়েক আগে চিঠি দেয় রেলওয়ে বিভাগ- লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে যে রেললাইন গেছে, তার দু’পাশ দিয়ে ৫০ ফুট করে গাছ-লতা কেটে ফেলতে হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে প্রায় ২৫ হাজার গাছ কাটা পড়বে। এটি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।

প্রসঙ্গ ধরে আরেকটি জরুরি বিষয়েও আলোকপাত করলেন, শুধু গাছকাটা কেন, শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ কানেক্টিং রাস্তাটিও বনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এটি আমি একেবারে বন্ধ নয়তো শুধু দিনে চালু রাখার দাবি রাখি। লাউয়াছড়া বনের অধিকাংশ প্রাণী নিশাচর। তারা রাতে বের হয়ে গাড়ির নিচে চাপা পড়ে। আমি জীববৈচিত্র্য রক্ষার স্বার্থে রেললাইনটিও সরিয়ে নিতে বলেছি। প্রায়ই বন্যপ্রাণী চাকার নিচে পিষ্ট হতে দেখি। ’

রাস্তা ও রেললাইন সরিয়ে নেওয়ার বাস্তবতা কী এখন আছে? ‘কেন থাকবে না। খুলনা-কুষ্টিয়াসহ অনেক জেলাশহরে বাইপাস রাস্তা রয়েছে। মূল শহরে গাড়ি ঢোকার প্রয়োজন পড়ে না। মানুষের জন্য যদি এই ব্যবস্থা করা যায় তাহলে প্রাণীদের জন্য কেন নয়! এখন তো বললেই বলে, ‘আরে থামেন তো। আপনার শুধু একই কথা’। বন্যপ্রাণী নিয়ে কারও কোনো মাথাব্যথা নেই। সবাই বন্যপ্রাণী এনজয় করে কিন্তু তাদের কথা ভাবতে ইচ্ছুক নয়’।

এরপর কথা এগোয় সমস্যা দূরীকরণে হাতে নেওয়া পদক্ষেপ নিয়ে। বর্তমানে কাজ করছে ‘সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটি’ ও ‘কমন পেট্রোলিং গ্রুপ’ নামে দু’টি কমিটি। এতে স্থানীয় বাসিন্দা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিকসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

এর বাইরে তার একটি দাবি ও একটি হতাশা। দাবি- বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য মৌলভীবাজারের মতো জীববৈচিত্র্যময় অঞ্চলগুলো একজন বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে থাকা উচিত। খানিকটা একজনের হাতে, খানিকটা অন্যজনের হাতে থাকলে সামষ্টিকভাবে কাজ করতে অসুবিধা হয়। এটি অন্য জায়গাতেও থাকলে ভালো হয়।

হতাশা- অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রয়েছেন যারা মিটিংয়ে বন্যপ্রাণীর জন্য জীবন দিয়ে ফেলেন কিন্তু কাজের বেলায় এক আনাও নয় বরং উল্টো ক্ষতিকর।

আর হ্যাঁ, একটি প্রত্যাশার জায়গাও বাকি রয়ে গেছে। শোনা যাক তার মুখেই, ‘হালাল হলে খেয়ে ফেলো, হারাম হলে মেরে ফেলো’- এই ধারণা থেকে মানুষের বের হয়ে আসা উচিত। এই ধ্যান-ধারণা থেকে শিয়াল-বনবিড়ালের মতো ব্যাপক পরিমাণে থাকা প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে!



**ওদের ট্রেন, মোদের ট্রেন

বাংলাদেশ সময়: ১০২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
এসএনএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ