ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

হাওরের হাঁসে হাসি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
হাওরের হাঁসে হাসি ছবি: আসিফ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সুনামগঞ্জ থেকে: হবিগঞ্জ থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার ভ্রমণ ক্লান্তি কাটতে শুরু করেছে তখন। সুমসৃণ সড়কের দুপাশে জলডোবা গন্ধ।

কচুরিপানা, বাদাবন, নলখাগড়ার উঁকি। এসে গেছি হাওরের দেশ সুনামগঞ্জে। পাহাড়ের মতো বৈচিত্র্যময় জীবনের দেখা মেলে হাওরেও।
 
রাস্তার কোলঘেঁষে তখন দক্ষিণপাশে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ‘দেখার হাওর’। উত্তরে লম্বা আকারে এক চিলতে জলাশয়। একটু দূরে আবার হাওরের হাতছানি। সেই একচিলতে জলায় একঝাঁক হাঁস ডেকে ডেকে যেন হেসে হেসে বেড়াচ্ছে! একদল রয়েছে উপরে। পেছনে মালিক দুই ভাই।
একসঙ্গে এতো হাসের চরে বেড়ানো দেখে লোভ সামলানো গেলো না। গাড়ি থামিয়ে ঝটপট নেমে তোলা হলো বেশ কিছু ছবি। ছবি তুলতে তুলতেই হাজির দুই ভাইয়ের বড়ভাই জাহিদুল।
 
হাওর বা হাওরাঞ্চলে এ দৃশ্য অত্যন্ত স্বাভাবিক। হাঁসপালন এ অঞ্চলের অন্যতম পেশা। হাওর ঘিরে যে পর্যটক বলয় রয়েছে সেখানেও হাঁসের ডিম-মাংসের চাহিদা প্রচুর। হোটেল কিংবা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় হাঁস খেতে চান তারা। কারণ হাওরে চরে বেড়ানো হাঁসের ডিম ও মাংসের স্বাদ সবসময় আলাদা।
 
তখনও সংখ্যা জানি না চরে বেড়ানো হাঁসগুলোর। জাহিদুল এসে জানালেন, পালে হাঁস রয়েছে এক হাজার। একসঙ্গে এতো হাঁস চরানো দেখে একটু অবাক লাগলো। তবে তারা বেশ খুশি। হাসির দিন খুব দূরে নয়। শিগগিরই ডিম দেওয়া শুরু করবে এরা। তবে এরইমধ্যে বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠেছে। সব হাঁস নাকি আবার দেশি। ক্যাম্পবেল নয়।
বয়স ছয় মাস পূর্ণ হলেই ডিম দেওয়া শুরু করবে হাঁসগুলো। আর একবার ডিম দেওয়া শুরু করলে এক হাজার হাঁসের মধ্যে একসঙ্গে প্রতিদিন ডিম অন্তত ৮শ’। বিক্রি হয় ৫ হাজার ৬শ’ টাকায়। মাসে ১ লাখ ৬৮ হাজার। সেই তুলনায় খরচ কম। মাসে খাবার লাগে ২০ হাজার টাকার। এরমধ্যে আবার মাস ছয়েক খাবার দিতে হয় খুবই কম। আর এ সময় এরা খায় বিল-হাওরের খাবার।
 
মোটামুটি পূর্ণবয়স্ক হলেই বাছাই করে মদ্দা হাঁসের একটি বড় চালান বিক্রি করে দেওয়া হয়। জাহিদুল ১শ’ হাঁস বিক্রি করেছেন ১৩ হাজার টাকায়। হাঁস রাখার ব্যবস্থা রাস্তার পাশেই। সরকারি জায়গায় অস্থায়ী ঘর তুলে রাখা হয় তাদের। বিচরণ ক্ষেত্র আশপাশের কয়েক কিলোমিটার। তবে সবসময় চরানো লাগে না, একা একা পথ চিনে ঘরে ফিরতে পারে তারা।
জাহিদুল ছাড়াও জয়কলম গ্রামের আরও দুই ঘরে এত সংখ্যক হাঁস পালে। বছরে এতে লাভ থাকে কয়েক লাখ টাকা। আর বছর শেষে টানা সাত-আট মাস ডিম পাড়া হাঁসগুলো বিক্রি করে কেনা হয় নতুন হাঁস, নতুন আশার আলো নিয়ে।
 
মূলত ডিম-মাংসেই আলাদা হাওরাঞ্চলের হাঁস। এখানেই হাসি হাওরের হাঁসে।

 
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০১৬
এএ

**কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
**তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
**রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
**পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
**চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ