ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৬
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো ছবি: দেলোয়ার হোসেন বাদল, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা থেকে ফিরে: ভারী ভারী বয়লারগুলো পড়ে আছে নির্বিকার শব্দহীন, বিশাল আকৃতির মেশিনগুলো অকেজো, সার বহনকারী ওয়াগনগুলো নিশ্চল পাথরের মতো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে। যুগের পর ‍যুগ কর্মযজ্ঞে মেতে থাকা প্রতিষ্ঠানটি যেন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত।

কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদেরও নেই কর্মব্যস্ততা। দেশের সর্বপ্রথম সার উৎপাদনকারী কারখানাটির চিত্র এখন এরকমই।

সার উৎপাদনে এককালে দেশের প্রধানতম এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেছে। কারখানাটির চেয়ার-টেবিল, মেশিন ও ফাইলপত্রে এখন স্মৃতির ধূলো।

১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠার পর ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা উঠে আসে পাঠ্যপুস্তকের পাতায়। কিছুদিন আগেও যেসব শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তকে পড়েছে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার কথা, তারা বড় হয়ে কখনও ফেঞ্চুগঞ্জে এলে এ নামে খুঁজে পাবে না কোনো প্রতিষ্ঠান। আর এখনকার কোনো শিশু হয়তো কোনোদিনই আর শুনবে না ফেঞ্চুগঞ্জ নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম।

কারখানাটির গড় উৎপাদন ক্ষমতা ছিল প্রায় ৩শ টন। যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি পুরনো হয়ে কারখানার উৎপাদন ৭০ টনে এসে দাঁড়ায়। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে কারখানাটির প্রধান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ট্রান্সফর্মার বিকল হয়ে পড়লে কারখানার উৎপাদন একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। বিকল হওয়া ট্রান্সফর্মার মেরামতের জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হলেও মেরামত হয়ে সেটি আর ফিরে আসেনি বলে জানা যায়।

ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার মহা ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কামরুজ্জামান জানান, কারখানাটি চালু থাকা অবস্থায় প্রতি টন ইউরিয়া উৎপাদনে প্রায় ৩৫/৪০ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হতো সরকারকে। পুরনো যন্ত্রপাতি আর মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তির কারণেই ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় এই বাড়তি খরচ হতো। অব্যাহত লোকসানের ফলেই এটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে।
এই কারখানার পাশেই নতুন প্রযুক্তিতে শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি চালু হওয়ার পথে। নতুন ফ্যাক্টরির সঙ্গে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা একীভূত হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক শ্রমিক ও কর্মকর্তা নতুন কারখানায় বদলি হয়েছেন। অবশিষ্টরাও সেখানে শিগগিরই বদলি হবেন বলেও জানান তিনি।

নতুন কারখানার সঙ্গে একীভূত করে শাহজালাল নাম রাখা হচ্ছে কেন? ফেঞ্চুগঞ্জ নামটি বাদ যাচ্ছে কেন? এ প্রশ্নের জবাবে মহাব্যবস্থাপক জানান, সিলেটের সঙ্গে শাহজালাল (র.) নাম একাত্মভাবে জড়িত। তার সম্মানেই এই নামকরণ করছে সরকার।
 
ঐতিহাসিক এই প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের নিরাপত্তা শ্রমিক ইরশাদ বলেন, মানুষেরও যেমন আয়ু ফুরায় কারখানারও আয়ু ফুরিয়েছে, তাই সরকার বন্ধ করে দিচ্ছে!
 
ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার নিরাপত্তা কর্মী বাদল ও দেলোয়ারও একই মতামত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, মানুষ যেমন সারাজীবন চাকরি-বাকরি করে না। তেমনি একটা কারখানাও সারাজীবন চলে না। একদিন না একদিন তাকে থেমে যেতে হয়।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টাম জুলাই ১৮, ২০১৬
এমজেএফ/

**টিলার ওপর দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি
**পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা এম এ রব চত্বরের নামফলক
** শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়া
**দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ