ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

রাজবাড়ী নয় যেন আস্তাকুঁড়ে

এম জে ফেরদৌস, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৪ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
রাজবাড়ী নয় যেন আস্তাকুঁড়ে ছবি: শুভ্রনীল সাগর, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মণিপুরী রাজবাড়ী ঘুরে শ্রীমঙ্গল থেকে: রাজবাড়ী বলতেই সাধারণত চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিশাল আকৃতির পুরনো স্থাপনা, বড়-বড় ঘর-বারান্দা, প্রশস্ত দেয়ালে সুনিপুণ কারুকাজ, পুরাতন ভারী আসবাব, প্রতাপশালী রাজ‍া-রাজড়াদের ব্যবহৃত মূল্যবান বস্তুসামগ্রীর সমাহার। একইরকম প্রত্যাশা নিয়েই গিয়েছিলাম সিলেটে মণিপুরী রাজবাড়ী পরিদর্শনে।

ভীষণ হতাশ হতে হলো এককালের প্রভাবশালী রাজা গম্ভীর সিংহের স্মৃতিধন্য রাজবাড়ীটি দেখে।

সিলেটের মির্জাজাঙ্গালে মণিপুরী রাজবাড়ী বলতে অবশিষ্ট আছে কেবলই এক ধ্বংসাবশেষ। শ্যাওলা, লতা-গুল্ম, মস-ফার্নে ঢাকা পড়েছে সেই ধ্বংসস্তূপ। সম্পূর্ণ রাজবাড়ীটি ঠিক কতটুকু জায়গা জুড়ে ছিল, কী ছিল তার অবয়ব, কেমন ছিল তার স্থাপত্যশৈলী কিছুই বোঝার উপায় নেই ধ্বংসাবশেষ দেখে।

প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নির্দশন রাজা গম্ভীর সিংহের রাজবাড়ি বিলীন হতে চলেছে প্রায়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রকৃত ভবন হারিয়ে তার স্বকীযয়তা। রাজবাড়ীর প্রধান ফটক, সীমানা দেয়াল, সিঁড়ি ও বালাখানার ধ্বংসাবশেষই বর্তমান মণিপুরী রাজবাড়ীর স্মৃতি সম্বল।
 


বর্তমানে মণিপুরী ঠাকুর ও ব্রাহ্মণ পরিবারের লোকজন বংশ পরম্পরায় বসবাস করছেন এই রাজবাড়ীতে। পূর্বসূরি রাজার রেখে যাওয়া নানা বস্তুকে স্মৃতি হিসেবে ধারণ করে আছে পরিবারগুলো। মণিপুরী সম্প্রদায়ের গভীর শ্রদ্ধা-ভক্তির এই স্থান পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় সেখানে বসবাসরত চন্দ্রকলা শর্মার সঙ্গে।

তিনি জানান, রাজবাড়ী বলতে সামান্য একটু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। মণিপুরীদের উদ্যোগে সিলেটে একটি স্থায়ী মণিপুরী জাদুঘর স্থাপনের প্রচেষ্টা চলছে। যেখানে মণিপুরী সম্প্রদায়ের কৃষ্টি, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং মণিপুরী রাজাদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে বলেও জানান চন্দ্রকলা শর্মা।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গালে রাজবাড়ীটি স্থাপিত হয়। তৎকালীন মণিপুরী রাজ্যের তিন সহোদর রাজা চৌর্জিৎ সিংহ, মার্জিত সিংহ ও গম্ভীর সিংহ রাজবাড়ী তৈরি করে এখানে বসবাস করেন। পরে চৌর্জিৎ সিংহ ও মার্জিত সিংহ কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকায় বসতি স্থাপন করলেও রাজা গম্ভীর সিংহ থেকে যান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাডীতে।

১৮২৬ সালে ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় তৎকালীন বার্মার সঙ্গে যুদ্ধ করে মণিপুর রাজ্য পুনরুদ্ধারের আগ পর্যন্ত রাজা গম্ভীর সিংহ সপরিবারে এখানেই অবস্থান করেন।

মণিপুরী সম্প্রদায়ের ইতিহাস, আবেগ ও অনুভূতির অন্যতম স্থান মির্জাজাঙ্গালের রাজবাড়ীর সংস্কারে যথাযথ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রাজার নির্মিত প্রাসাদের তিন চতুর্থাংশের কোনো অস্তিত্বই নেই। উপরন্তু রাজবাড়ীর সামনে অপরিকল্পিতভাবে মন্দির নির্মাণ করে রাজবাড়ীর পুরাকীর্তি ঢেকে রাখা হয়েছে।

মণিপুরী সংস্কৃতি সিলেটের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যেরই অংশ। দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষার্থে ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ীর সংস্কার ও পুরাকীর্তির সংরক্ষণে খুব শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

মণিপুরী রাজবাড়ী পরিদর্শনে যেভাবে যাবেন:
 সিলেট শহরের যে কোনো স্থান থেকেই সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় মির্জাজাঙ্গালের মণিপুরী রাজবাড়ীতে। যে কোনো রিকশা বা অটোরিকশা চালক চিনিয়ে দেবে মণিপুরী রাজা গম্ভীর সিংহের ঐতিহাসিক রাজ বাড়িটি।

আরও পড়ুন...

*** সবুজ পাতা হয়ে যায় কালো কালো চা

** লোভাছড়ায় বাড়তি পাওনা ঝুলন্ত ব্রিজ
** রাতের ক্বিন ব্রিজে ‘ঝাল কম, ঝাল বেশি’
**উত্তাল হাকালুকির ঢেউয়ে ঢেউয়ে
**ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় স্মৃতির ধূলো
**টিলার ওপর দৃষ্টিনন্দন ফ্রুটস ভ্যালি
**পোস্টার-ব্যানারে ঢাকা এম এ রব চত্বরের নামফলক
** শীতল বনের খোঁজে বোকা বনে যাওয়া
**দিনের যাত্রী আসনই রাতের বিছানা

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৯ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এমজেএফ/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ