ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
সবুজের বুকে মোহময় শার্ফিন ছবি: আসিফ আজিজ - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

লাউড়ের গড়, সুনামগঞ্জ থেকে: গুমট বাঁধা আকাশ সাতসকালেই জুড়ে দিয়েছে কান্না। অঝর সে ধারায় নেয়ে সবুজ প্রকৃতি আনন্দে দিশেহারা।

পূর্বে ভারতের মেঘালয় ও বারিক টিলা ঘেঁষে নেমে আসা যাদুকাটা নদীর পাথরপাহাড়ে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্যের কূলহীন কিনারে কাঁটাতার ভেদ করে তখন নাচছে চোখের পাতা। বিভোর দৃষ্টি মেঘের আঁচলে ভেসে আসন গেঁড়েছে সবুজের বুক চিরে নামা শুভ্র ধারায়। আহ্‌! ঝরনা। সত্যি ‘তরলিত চন্দ্রিকা’।

সৌন্দর্য যেখানে পেখম মেলে বসেছে সেটাই ঐতিহাসিক লাউড়ের গড়। আর শাহ আরেফিন বা স্থানীয়দের শার্ফিন বাজার যেন তার রাজধানী! ঠিক ওপারে মেঘের আলয় মেঘালয়। কাঁটাতার সেখানে বাধা নয়, মন টেনে নেওয়ার মধ্যসোপান।

লাউড়ের গড় বাজার থেকে শার্ফিন বাজারে যে সড়কটি চলে গেছে তার ঠিক শেষ মোচড়ে দাঁড়ালে সবুজের বুক চিরে চোখ আটকে রাখে একটি শুভ্র ধারা। সবুজ জাপটে ধরে জপ করছে তাকে। পানির পতনধ্বনি দূর থেকে কান পাতলে শোনা যায় মিহিস্বরে। মেঘেরা সবসময় স্বাধীন। এখানেও তাই। তাই পঞ্চাশ কিংবা একশো মিটার উচ্চতায় গাছ-পাতার ভাঁজে ভাঁজে গেঁথে করছে জয়গান।

শাহ আরেফিনের কবর কাঁটাতারের এপার-ওপার। পাহাড়ের বুক গলে নেমে আসা জলপ্রাতটি পাশেই। পাহাড়ি পাথরের থরে থরে গড়িয়ে আসা এ জলধার শার্ফিন ঝরনা নামেই পরিচিত বেশি। যাদুর মতো মোহময় করে রাখা যাদুকাটার কিনারে দাঁড়িয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব কোণে তাকালে দৃষ্টি ফেরানো দায়। উঁচু পাহাড়কে ভেঙে যেন বেরিয়ে এসেছে সৌন্দর্যের সপ্তপ্রহর। ওপরে কখনও মেঘময় কখনও নীল আকাশ কিংবা সাদা মেঘের লুকোচুরি খেলা।

সে ছায়া খেলা করে যাদুকাটার পানিতে। ওপারের জৈন্তা পাহাড়ের বুক চিরে নামা শার্ফিনের যৌবন ফিরেছে এ বর্ষায়। মেঘ-নদী-সবুজ গাছ আর আকাশের অবধারিত মেলবন্ধন এখানে। ঠিক কত ফুট ওপর থেকে সৌন্দর্য বর্ষণ করছে শার্ফিন তা ঠাওর করা মুশকিল। তবে কলকলানি ছলছলানি দূর সবুজের দেশ থেকেও যে যাদুকাটার মতো মায়া কাটে সে কি তা জানে!
 
জানতে ইচ্ছে হবে বড় এখানে এলে। বৃষ্টিতে উর্বশীর মতো নৃত্যে মাতা এপারের সবুজ-শ্যামলিমায় চোখ মেলে, কাদাজলে মা মাড়িয়ে এবার তার কোলে ডিুব দিলে সে-ও যেন মথিত, মুগ্ধ হয় ভিন্ন আবেশে।
 
সে আবেশি মন জয়ে ছুটতে হবে সুনামগঞ্জে।
 
কীভাবে যাবেন?
লাউড়ের গড়ে যেতে সুরমা ব্রিজ এর ওপর থেকে সিএনজি ভাড়া করে বিশ্বম্ভরপুরের রাস্তা ধরতে হবে। শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার এগুলে কারেন্টের বাজার। সেখান থেকে ডানের পথ ধরে আরও ৭/৮ কিলোমিটার এগুলে বিন্নাকালি বাজার। এর দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে লাউড়ের গড়। সিএনজিতে ভাড়া পড়বে ১২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা। সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক।

তবে বর্ষাকালে তাহিরপুরের সাহেব বাড়ি ঘাট থেকে স্পিড বোট বা ইঞ্জিন নৌকায় লাউড়ের গড় যাওয়া যাবে। স্পিডবোটে খরচ পড়বে ৫/৬ হাজার টাকা। সময় লাগবে দেড় ঘণ্টা। ইঞ্জিন বোটে খরচ এর অর্ধেক। তবে ঘণ্টাচারেক সময় লেগে যাবে।
  বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৬
এএ/

**
কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৪ (শেষ পর্ব)
** ছবিতে হাছন রাজার স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি
** ‘কি ঘর বানাইমু আমি শূন্যের মাঝার’
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-৩
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-২
** হাওরের হাঁসে হাসি​
** কাছাড়িয়া হাওরের পথে পথে-১
** মায়ার বাঁধনে মায়া, সঙ্গী জেমস-মনা
** এবার আসছে গৌরাঙ্গের সাত লেয়ারের জুস
** সবুজের বুক চিরে চেনা নতুন শ্রীমঙ্গল
** নাগা মরিচের আরও ছবি
** সাদা-কালো নাগা মরিচে গিনেস রেকর্ডের ঝাল
** তবু থেকে যায় সাতরঙা চায়ের রহস্য
** রাতদুপুরে সবুজবোড়ার রাস্তা পারাপারের দুঃখ
** পর্যটকবান্ধব নয় সিলেট-শ্রীমঙ্গলের ট্রেন
** চুলা নেই পূর্বাঞ্চলের কোনো ট্রেনের ক্যান্টিনে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ