ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

আচারেও সেরা সাতকড়া

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
আচারেও সেরা সাতকড়া

সিলেট: সিলেটের সাতকড়া খাওয়ার বাসনা ছিলো খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তার সেই বাসনা পূর্ণ হয়েছে সিলেট সফরে।

সাতকড়া নামেও যেমন, তেমনি তার ঘ্রাণ।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটের মানুষের ভোজন বিলাস হয় সাতকড়ায়। সমৃদ্ধ এ ফসলের সুনাম ছড়িয়েছে দেশে-বিদেশে। সিলেট থেকে বিদেশেও রফতানি হয়ে থাকে এ ফল। শুধু তাই নয়, এখন সাতকড়ার আচার জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে দেশের অন্যান্য জেলাতেও।

সিলেটের মানুষ ‘তিতা’ এ ফল কেন খায়? এমন প্রশ্নের আপনা-আপনি উত্তর পেয়ে যাবে, কেউ যদি ভোজন বিলাসের অনুষঙ্গ করেন সাতকড়ার আচার। তবে সাতকড়ার আচার কীভাবে তৈরি করবেন, তাও জানা থাকা দরকার।

সাতকড়া আচারের প্রস্তুত প্রণালীতে কী কী লাগে বাংলানিউজকে সেই বর্ণনা দিয়েছেন রাশেদা আক্তার। সিলেটের এ নারী  উদ্যোক্তা নিজেই আচার তৈরি করে বিক্রি করেন। শুধু সাতকড়া-ই নয়, তার তৈরি আম, জলপাই, বরই, কাঁঠাল, নাগা মরিচ, মাশরুম, মিক্সড আচার ও চাটনি সিলেটের নামি-দামি দোকানগুলোতে বিক্রি হয়।

জানালেন, সাতকড়ার আচার তৈরিতে লাগে লবণ, মশলা, পাঁচফোড়ন, চিনি, সরিষা তেল ও সিরকা। প্রথমে সাতকড়া ধুয়ে নিন। তারপর সেটি পিস পিস (স্লাইচ) করে কেটে নিতে হবে। কাটা সাতকড়া প্রায় আধা ঘণ্টা রোধে শুকিয়ে নিন। বেশি শুকালে শক্ত হয়ে যাবে। এবার একটি কড়াইতে সিদ্ধ করে নিতে হবে। এরপর একটি পরিচ্ছন্ন পাত্রে সিরকা ঢেলে তেলের মতো গরম করে নিন।  

পাঁচ কেজি সাতকড়ার আচার তৈরিতে ২৫০ গ্রাম সিরকা দিতে হবে। সিকরা গরম হয়ে এলে দিতে হবে পাঁচফোড়ন, রশুন, জিরা, আদা ও পরিমাণ মতো লবণ।

এগুলো কষিয়ে এলে তখন কড়াইয়ে সরিষা তেল দিতে হবে। ৫ কেজি সাতকড়ায় আড়াই কেজি সরিষা তেল লাগবে।  

সাতকড়ার তেতো ভাবটা কমাতে দিতে হবে ১০০ গ্রাম চিনি। কেউ কম চিনি খেতে চাইলে কেজিতে ৫০ গ্রাম অর্থাৎ ৫ কেজিতে ২৫০ গ্রাম চিনি দিতে পারেন। মসলা বিশেষ কালার হয়ে এলে তখন স্লাইচ করা সাতকড়া হাড়িতে ঢেলে দিন। চুলায় প্রায় আধা ঘণ্টা আগুনে তাপ দিতে হবে। মসলা ভালো করে মিশে গেলে নামিয়ে নিন। এবার চুলা থেকে নামিয়ে ঠাণ্ডা করুন।

ব্যস, হয়ে গেলো সাতকড়ার আচার।  

আচার তো তৈরি হলো, এবার জেনে নিন রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতি। একটি জীবাণুমুক্ত কাচের পা্ত্র (বৈয়াম) নিয়ে তাতে সাতকড়ার তৈরি আচার রাখতে হবে।  

এ প্রসঙ্গে রাশেদা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, প্লাস্টিকের বৈয়ামে কখনও আচার রাখবেন না। এতে আদ্রতা শোষণ করে এবং ছত্রাক ধরে আচার নষ্ট হয়ে যায়। অনেক গৃহিণী বৈয়াম থেকে আচার হাত দিয়ে তুলেন। অনেকে আবার বৈয়ামের মুখ খুলে রোদে শুকাতে দেন, এতে আচারে ছত্রাক ধরে নষ্ট হয়ে যায়।

এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, প্লাস্টিকের বৈয়ামগুলোতে দেওয়া আচার রোদে শুকানো হলে জলীয় বাষ্প হওয়া পানি বৈয়ামের ভেতরে থেকে যায়। এ থেকে ছত্রাক সৃষ্টি হয়।  

‘ফলে গৃহিণীরা আচার চার/পাঁচ মাসের বেশি রাখতে পারেন না। আর সঠিক পদ্ধতিতে আচার তৈরি করলে বছর দেড়েক রাখা যাবে,’ বলেন এ নারী উদ্যোক্তা।

পরিবেশন করবেন যেভাবে:

সাতকড়ার আচার পরিবেশন করা যায় দুই ভাবে। মাছ, মাংস ও ডাল রান্নার সময় দুই টুকরো সাতকড়ার আচার তরকারিতে দিলে রান্না তরকারি সুস্বাদ হয়ে উঠবে। নতুবা ভাতের সঙ্গে মাছ, মাংস, ডালের সঙ্গে সাতকড়া যুক্ত করে খেলে এর স্বাদই আলাদা। আর শুধু সাতকড়ার আচার খেলে কিছুটা তেতো ভাব লাগবেই।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৬
এনইউ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ