ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক গন্তব্য করতে চাই’ (পর্ব-১)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬
‘কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক গন্তব্য করতে চাই’ (পর্ব-১) আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ

মারমেইড বিচ ও ইকো রিসোর্ট ঘুরে: এটি এক স্বপ্নবাজ কিশোরের গল্প। সে বেড়ে ওঠে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাহাড়ি পরিবেশে।

পড়াশোনায় উড়ু উড়ু মন। মাথাভর্তি কেবল থিয়েটার, খেলাধুলা আর ঘোরাঘুরির নেশা। চোদ্দ-পনের বছর বয়স থেকেই পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়তো দেশ-দেশান্তরে। এই নেশাই তাকে পৌঁছে দেয় জীবনের অন্য এক সিঁড়িতে।

মেঘে মেঘে কিশোর তরুণ হয়ে ওঠে। একদিন মুম্বাই চলে যান অভিনয় শিখতে। সেখান থেকে ভারতের গোয়া সমুদ্র সৈকত। সেখানে কাজ করেছেন বিচ রেস্টুরেন্টে। শিখেছেন, কীভাবে মানুষকে সেবা করতে হয়। অনেক অভিজ্ঞতা নিয়ে একসময় দেশে ফেরেন। সার্ফিং করবেন বলে চলে আসেন কক্সবাজার। সময়টা ২০০০ সাল। নতুন শতাব্দীর শুরু। আক্ষরিক অর্থেই দেশের জন্য এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেন সেদিনের সেই কিশোর। নাম, আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। মারমেইড ইকো ট্যুরিজম লিমিটেডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তখন সোহাগ আসেন আরেক নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থপতি জিয়াউদ্দিন খান পাবলোর সংস্পর্শে। উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি তার অন্য দুই পরিচয়। তার ছোঁয়াতেই বদলে যায় সোহাগের জীবন।

শোনা যাক তার মুখেই, আমার পরিকল্পনা ছিলো, কক্সবাজারে স্থায়ীভাবে থেকে সার্ফিং করার। তখন আমার বয়স অল্প। এখানে হোটেলে থাকার টাকা নেই। তখন আমি পাবলো ভাইকে বললাম, আমি এখানে স্থায়ীভাবে থেকে যেতে চাই। এজন্য একটি ‘বিচ শ্যাক’ করবো। গোয়াতে আমি এর ধারণা পাই। বিচ শ্যাক হচ্ছে, রোদ ঠেকাতে বিচের উপরেই একটি ছাউনি। এর নিচে একপাশে রেস্টুরেন্ট, অন্যপাশে বসার জায়গা। ছোট আয়োজন। গোয়াতে তরুণরা এটি করে থাকেন আন্তর্জাতিকভাবেও যেখানে বিচ রয়েছে সেখানে এটা খুব কমন। আমি খুবই ছোট বাজেট দিয়ে শুরু করলাম। আমার মূল উদ্দেশ্য, বিচে থাকা, খাওয়া, সার্ফিং করা, গান শোনা- এই। ‘এখানে পাবলো ভাইয়ের সম্পর্কে দু’-একটি কথা বলি। উনি লন্ডনে পড়াশোনা করেছেন। থিসিস করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের নগর পরিকল্পনার উপর- ১শ বছর পরে এর অবস্থা কেমন দাঁড়াবে। সেইসঙ্গে এটাকে কীভাবে উন্নয়ন করলে আমরা সর্বোচ্চ উপভোগ করতে পারবো। আমার পরিকল্পনা নিয়ে ওনার কাছে গেলাম। উনি সবসময় গ্রামীণ মানুষ ও স্থাপত্য নিয়ে কথা বলতেন। চারপাশে যা কিছু রয়েছে সেগুলোকেই ব্যবহার করার ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। আমি তাকে গুরু হিসেবে মানি। এই যে এতোকিছু, এর চিন্তাধারার অধিকাংশই আমি পেয়েছি তার কাছ থেকে। উনিই আমাকে এভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন। ’ বলে চলেন সোহাগ, মূল ডিজাইনটা ওনার কাছ থেকে নিয়েছি। উনি এ‍ঁকে দিয়েছেন, আমি বানিয়ে ফেলেছি। ‘মারমেইড ক্যাফে’ নাম দিয়ে ২০০৪ সালে এর যাত্রা শুরু হলো। নামটি জন মিশেলের একটি গান থেকে নেওয়া। প্রায় দেড়লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু। জায়গা খোঁজা শুরু হলো। শেষে মাসিক চার হাজার টাকায় স্থানীয় এক মালিকের কাছ থেকে জমি ভাড়া নেওয়া হলো। বর্তমান সুগন্ধা বিচে হোটেল সি প্যালেসের ঠিক সামনের বিচে ছিলো তৎকালীন মারমেইড ক্যাফে। ছনের ছাউনির নিচে ২০ থেকে ২৫ জনের বসার ব্যবস্থা, একদিকে রেস্টুরেন্ট। বছর ঘুরতেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। বিদেশিরা ঘুরে গিয়ে পজেটিভ রিভিউ দেওয়া শুরু করলো। এর কারণ, আমাদের আন্তরিক সেবা। পাবলো ভাই আসতেন মাঝেমধ্যে। নিজেও সঙ্গীত পছন্দ করতেন। এসে দেখলেন, বাহ বেশ তো চলছে!‘মানুষ বিচে সুইমিং করে এসে বসতো, খাবার খেতো। দেশ-বিদেশে সুনাম ছড়িয়ে পড়লো। তখন পরিচয় হলো এক বাংলাদেশি শেফের সঙ্গে। তিনি দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানিতে বড় বড় হোটেলে কাজ করেছেন। পাকাপাকিভাবে দেশে চলে আসেন। তখন আমি তাকে মারমেইড ক্যাফেতে কাজ করার প্রস্তাব দেই। সঙ্গে একটি শর্তও জুড়ে দেই যে, আপনাকে কিছু মানুষ তৈরি করে দিতে হবে। তা সে যতো অশিক্ষিতই হোক। উনি রাজি হলেন। উনি এসে ইন্টারন্যাশনাল সি ফুড রান্না করা শুরু করলেন। সেসময় বাংলাদেশে সি ফুড রেস্টুরেন্ট অনেক ছিলো, কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল সি ফুড আমরাই শুরু করি। এটিই আমাদের জনপ্রিয় করে তোলে।  

পরের পর্বে সমাপ্ত...

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০১৬
এসএনএস

** কক্সবাজারকে ‘আর্ট ডেস্টিনেশন’ করতে মারমেইডের কর্মযজ্ঞ
** শতভাগ ‘অরগ্যানিক ফুড’ পাতে দিতে একনিষ্ঠ মারমেইড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ