ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

রাবার ড্যামে চেঙ্গী নদীপাড়ের কৃষকদের সুদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
রাবার ড্যামে চেঙ্গী নদীপাড়ের কৃষকদের সুদিন ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পানছড়ি, খাগড়াছড়ি ঘুরে এসে: চেঙ্গী যখন বর্ষায় রুদ্র রূপ ধারণ করে, তখন নদীপাড়ের কৃষকদের মুখোমুখি হতে হয় নানা দুর্ভোগের। আবার শুষ্ক মৌসুমে চেঙ্গীর বুক জুড়ে বালুচর জাগলে খরতাপে দগ্ধ হতে হয় খরাক্রান্ত নদীপাড়ের কৃষকদের।

ভরা যৌবন কি মরা প্রৌড়, চেঙ্গীর চেহারা যাই হোক তার দু’কূলের কৃষির উপর নির্ভরশীলদের জীবন ছিল সেই একই ছকে বাধা, যন্ত্রণাক্লিষ্ট।

কিন্তু এখন দিন পাল্টেছে খাগড়াছড়ির প্রধান নদী চেঙ্গীর দুই পাড়ের লাখো বাসিন্দার। ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ও খাগড়াছড়ি শহরকে প্রায় বেষ্টন করে রাখা চেঙ্গীই এখন হয়ে উঠেছে কূলবর্তী কৃষকদের কাছে সাক্ষাৎ আর্শীবাদস্বরূপ।

২৭ টণ ওজনের ২টি মাত্র রাবারের ড্যাম দিয়ে তৈরি বাঁধ বদলে দিয়েছে চেঙ্গী নদীর পানছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার দুই পাড়ের মা্নুষদের জীবন ও জীবিকা। এখন এসব এলাকার কৃষিজীবীরা চেঙ্গী পানি ব্যবহার করে বদলে দিয়েছেন এলাকার কৃষিকে।

উপজেলার শান্তিপুর এলাকায় ব্রিজের সামান্য উত্তরদিকে বসানো হয়েছে রাবার ড্যাম। এর মাধ্যমে নদীর উত্তর পাশে পানি আটকে জলাধার তৈরি করে পানি ধরে রাখা হয়। পরে ওই পানি সেচের মাধ্যমে ব্যবহার করেন নদী তীরবর্তী ও আশপাশের গ্রামের মানুষেরা। এতে ড্যাম তৈরির তিন বছরের মাথাতেই এ অ্ঞ্চলে কৃষিজমি চাষের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ১২০০ হেক্টর। এসব জমির প্রধান ফসল বোরো ধান। তবে এ জলাধারের পানিতে সবরকম সবজি ও শাক চাষ হয়। এতে করে ড্যাম থেকে অন্তত উজানের আটটি ইউনিয়নের মানুষ সুফল ভোগ করছেন।

এ ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনার জন্য ’চেঙ্গী নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি’ করা হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে। তারাই এ ড্যাম পরিচালনা করেন। এজন্য ড্যামের পাশেই নদীপাড়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি কার্যালয়।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) পার্বত্য অঞ্চলের একমাত্র রাবার ড্যামটি দেখতে যাওয়া শান্তিপুরে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেলো।

জেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত ২০১১ সালে এ এলাকার কৃষির উন্নয়নে শান্তিপুর ব্রিজের নিচে চেঙ্গী নদীতে রাবার ড্যামের কাজ শুরু হয়। প্রায় ১০ কোটি ব্যয়ে নির্মিত এ ড্যাম অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে ২০১৩ সালের ১১ নভেম্বরে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পূর্ব থেকে পশ্চিম ববাবর স্থাপিত ড্যামের দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার।

এছাড়া ড্যামের স্থিতিশীলতা ও ভাঙন থেকে রক্ষায় ইট ‍ও কংক্রিটের ব্লক তৈরি করা হয়েছে।

ড্যাম দেখতে গিয়ে শান্তিপুর ব্রিজ পার হতেই এক মুদি দোকানে পাওয়া গেলো স্থানীয় যু্বক তুষার চাকমাকে। তিনি জানালেন, এ ড্যাম দিয়ে তাদের বদলে যাওযার দিন শুরু হয়েছে।

তিনি জানান, বর্ষা মৌসুমে ড্যাম তুলে দিয়ে ১০ ফুট পরিমাণ উচু করেন।

অবশিষ্ট পানি ড্যাম অতিক্রম করে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। এতে বিপুল পরিমাণ পানি আটকে থাকে। পরে বোরো ধান ও সবজির আবাদে ওই পানি সেচ দেন তারা। তবে শুষ্ক মৌসুমে ড্যাম নামিয়ে দেওয়া হয়। এ ড্যামে এলাকার মানুষের কৃষিতে উন্নতি দেখে সন্তুষ্ট ৭২ বছরের বৃদ্ধা সুমতি চাকমা। ওই দোকানে বসে থাকা বৃদ্ধা নিজেই জানালেন সে কথা।

এদিকে, ড্যামের কারণে একপাশে জলাধার ও অন্যপাশে স্বাভাবিক নদী দেখতে আসেন প্রচুর মানুষ। সে সময় বেশ জমে ওঠে এ জায়গা। এ সময় ড্যামের গা দিয়ে দ্রুতবেগে পানি অতিক্রমের দৃশ্য মনোমুদ্ধকরন বলে জানালেন স্থানীয়ে এক তরুণ।

পানছড়ি শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ড্যাম দেখতে আসা মানুষজন চাইলে ঢু মারতে পারেন শান্তিপুরের অরণ্য কুটিরে। ‍যেখানে রয়েছে এশিয়ার সবচেয় বড় বুদ্ধ মূর্তি। এর উচ্চতা ৪৮ ফুট।

** খাগড়াছড়ির প্রবারণা উৎসবে…
** 'জিরাফ গলার' ঝুলন্ত সেতুর আকর্ষণও কম নয়
** রেল স্টেশনে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ