ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

অব্যবস্থাপনায় জৌলুশ হারাচ্ছে শুভলং ঝর্ণা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
অব্যবস্থাপনায় জৌলুশ হারাচ্ছে শুভলং ঝর্ণা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শুভলং ঝর্ণা ঘুরে  রাঙ্গামাটি থেকে: এক সময় শাঁ শাঁ জলধারায় ধারায় পর্যটকদের নজর কাড়ত বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্ণা। বিশাল উঁচু পাহাড় থেকে জলধারা এসে মিশে যেত কাপ্তাই হ্রদে।

আর এই জলধারা দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা আসত আগ্রভারে।
 
শুভলং ঝর্ণার জলধারা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০০৫ সালে তৎকালিন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান ঝর্ণাটির উদ্বোধন করেন। এরপর পর থেকে দেশি পর্যটকরা আসতে থাকে এই ঝর্ণা দেখতে।
 
উদ্বোধনের ১১ বছরের মাথায় ঝর্ণাটি রুগ্ন দশা পরিণত হয়েছে। সাথে হারিয়েছে তার জৌলুশ । পাহাড় থেকে এখন আর সেই জলধারা শাঁ শাঁ শব্দ শোনা যায় না। কাছে গেলেও দেখা যায় না জলধারা। পাহাড় বেঁয়ে যে একটু পানি আসছে তা পাহাড়ে গাঁ ভিজতেই মিটিয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন যৌবন হারাচ্ছে ঝর্ণাটি।
 
শুভলং ঝর্ণার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ঝর্ণার পাশেই একটি ছোট আকারের ঝুলন্ত ব্রিজ করা হয়েছিল। সেটিও এখন জরা জীর্ণ অবস্থা। এছাড়া ঝর্ণার পাশেই যে দুটি ওয়াশ রুম ছিল সেগুলো এখন ব্যবহার অযোগ্য।
 
একসময় পর্যটকরা শুভলং ঝর্ণার পাশেই নির্মিত ঘরে বসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করত। সেই ঘরটি ময়লা আবর্জনায় ভরপুর। ঝর্ণার কাছে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি করা হয়েছিল। সেই সিড়ি দিয়ে এখন মলমূত্র ত্যাগ করা হয়। এছাড়া ঝুলন্ত ব্রিজের কাছেই শুভলং ঝর্ণার ইজারাদার আঁখ-কলার দোকান বসিয়েছেন। যার ফলে পর্যটকরা আঁখের ছোবরা, কলার খোসা পানিতে ফেলে পুরো এলাকা আবর্জনায় পরিণত করেছে।
 
ঝর্ণার নীচের পানিতে কচুরির পানায় ভরে গেছে। এত সব অবব্যস্থাপনা নিমজ্জিত শুভলং ঝর্ণা। এই ঝর্ণাটি রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
 
সাড়ে ৪ লাখ টাকায় ঝর্ণাটি ইজারা নিয়েছেন নিরঞ্জন চাকমা (জয়)। তিনি জানান, এই ঝর্ণাটির শুরু থেকেই আমি ইজারাদার হিসেবে রয়েছি। প্রথমে এর ডাক ছিল মাত্র ৪০ হাজার টাকা। তখন প্রবেশ মূল্য ছিল ২ টাকা। সেই টিকিট এখন ১৫ টাকা। তারপরেও পর্যটক বিমুখ হচ্ছেন শুভলং ঝর্ণা থেকে। ‌’
 
তিনি বলেন, সরকার এই ঝর্ণাটি রক্ষণাবেক্ষণে নজর দিলেই এখান থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব।  
 
তবে ঝর্ণাটিকে সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে এক ধরণের প্রতিযোগিতার চিহ্ন দেখা যায়। একটি মাত্র ঝর্ণায় ৪-৫ জন নেতা তাদের নাম ফলক স্থাপন করেছেন। এদের কেউ সিঁড়ি তৈরি কাজের উদ্বোধন করেছেন, কেউ ঝুলন্ত শিঁড়ি। আবার কেউ জলঝিরি নামফলক স্থাপন করে গেছেন।
 
এতসব নাম ফলক থাকার পরেও অবহেলিত শুভলং ঝর্ণা। ইজারাদার নিরঞ্জন চাকমা জানান, ঝর্ণাটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি উদ্যেগ দরকার। তা না হলে অচিরেই এই ঝর্ণাটি মৃত হয়ে যাবে। অথচ এই ঝর্ণা ঘিরে পাহাড়ী বাঙালী বেশি কিছু পরিবারের জীবন ধারণ চলছে। পর্যটকদের আনা-নেওয়ায় টাকা পাচ্ছেন  নৌকার মাঝি। আর ইজারাদার পাচ্ছেন টিকিটের মূল্য।
 
কিভাবে যাবেন শুভলং ঝর্ণায়। রাঙ্গমাটি শহর থেকে ১০০ টাকায় সিএনজি ভাড়া করে রিজার্ভ বাজার ঘাটে গিয়ে দরদাম করে ট্রলার অথবা স্পিড বোট ভাড়া করে চলে যেতে পারেন শুভলং ঝর্ণায়। ট্রলারে সময় লাগবে প্রায় দেড়  ঘণ্টা। আর স্পিড বোটে ১০-১৫  মিনিটের মধ্যেই আপনাকে নিয়ে যাবে শুভলং  ঝর্ণায়।

**  সৌন্দর্য্যের লীলাভূ‌মি সাজেক যাবেন যেভাবে
** এক পাহা‌ড়ে জীবন যা‌দের

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৬
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ