ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
ধসে যাচ্ছে রাঙামাটি শহরের পর্যটন ছবি: আসিফ আজিজ-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রাঙামাটি থেকে: পাহাড়ের অন্য দুই জেলা বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে পর্যটক যখন ক্রমাগত বাড়ছে, তখন কমছে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটিতে। অথচ একসময় পাহাড়ে পর্যটন মানেই মানুষ বুঝতো রাঙামাটিকে।

হালে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করা সাজেক ভ্যালির অবস্থান রাঙামাটিতে হলেও যোগাযোগ সুবিধার কারণে আদতে তা হয়ে উঠেছে খাগড়াছড়ির সম্পদ। আর শহরকেন্দ্রিক যে পর্যটন টিকে ছিলো তা-ও হারিয়ে যেতে বসেছে নানান অব্যবস্থাপনা আর বিধি-নিষেধের ঘেরাটোপে।
 
রাঙামাটি শহরে এসে ঝুলন্ত সেতুর পর সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা ছিলো রাজবন বৌদ্ধবিহার কমপ্লেক্স। পর্যটন স্পট নয়, ধর্মীয় উপসনালয় হিসেবেই এর দর্শনার্থী ছিলো বেশি। এর স্থাপত্যশৈলী সত্যি মুগ্ধ করার মতো। ধর্মভিত্তিক লোক সমাগাম পর্যটনের ঠিক বাইরে নয়। ভারত তার বড় প্রমাণ। বছরখানেক হলো জনপ্রিয় এ বিহারে পর্যটকদের প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ। রয়েছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। বিহার সংলগ্ন চাকমা রাজবাড়িটিও দুর্ঘটনায় পুড়ে যাওয়ায় শহরের কাছাকাছি থাকা এ দু’টি স্পটে মানুষ না জেনে গিয়ে শুধু হতাশ হয়েই ফেরে।
 
এতো কড়াকড়ির কারণ হিসেবে বিহারের ফটকের সামনে বড় করে টাঙিয়ে রাখা হয়েছে একটি ব্যানার। সেখানে বিজ্ঞপ্তি আকারে লেখা হয়েছে নিয়ম-কানুন।
 
এই নিষেধাজ্ঞার পর এর প্রভাব পড়েছে শহর ও এর আশপাশের উপজেলার বৌদ্ধবিহারগুলোতে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী উপাসক ছাড়া অন্য কেউ বিহারে গেলেই কেমন যেন আড় চোখে তাকানো দেখতে হয়, জবাব দিতে হয় অনেক প্রশ্নের। ফটকের রক্ষী ও আশপাশের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো এ নিষেধাজ্ঞা সহজে উঠছে না।
 
এতে পর্যটকরা যেমন হতাশ, তেমন হতাশ আশপাশের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা থেকে রাঙামাটি ‍ঘুরতে আসা পর্যটক নিজামুর রহমান বলেন, ঝুলন্ত ব্রিজ ডুবে আছে। বিহারে ঢুকতে দেয় না, রাজবাড়ি পুড়ে গেছে, তাহলে আমরা যাবো কই। শুধু লেকে ঘুরে আশ মেটে না।

বিহারে দেখার আছে শুধু স্বর্গের সিঁড়ি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের স্বর্গে যাওয়ার সাত ধাপ। তবে সিঁড়ি থাকলেও সেখানে ওঠা নিষেধ। এই সিঁড়ির পাশ দিয়ে যে রাস্তাটি নেমে গেছে সেটি মিশেছে লেকের জলে। রাস্তার প্রান্তের ঘাট থেকে মিনিট পাঁচেকে নৌকাযোগে রাজবাড়ি ঘাট। উঠে একটু হাঁটলেই ছিলো চাকমা রাজার বাড়ি।
 
বছর চারেক আগে একটি দুর্ঘটনায় পুরো বাড়িটি পুড়ে যায়। এখন সেখানে নির্মিত হয়েছে কাঠের একটি বাড়ি। শুধু মরচেপড়া একটি গেট, চাকমা ভাষায় লেখা ফলক, জীর্ণ পাঁচিল ঘেঁষা ন্যাড়া আমলকির গাছ ছাড়া দেখার কিছু নেই। মাঠের পাশে পুরনো স্থাপনা বলতে একটি কামান আর ছোট একটি কারাগার। মাঠের পাশের আগের অভ্যাসবশত কয়েকটি আদিবাসী দোকান থাকলেও ক্রেতা নেই। দর্শনার্থী না থাকলে ক্রেতা থাকবেই বা কি করে!
 
এছাড়া শহরে কোনো বিনোদন কেন্দ্রও ওগড়ে ওঠেনি। অথচ বান্দরবানে শহরে থেকে আশপাশে ঘুরে দেখার জন্য বেসরকারি ছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র। এতে পর্যটক শুধু আগমন নয়, ধরেও রাখছে বান্দরবান।
 
এসব স্পটে সড়কপথ ছাড়াও বোটে করে লেক দিয়ে ভ্রমণ করা যায়। কিন্তু বোটম্যান আলমগীর বললেন, আমাদের রোজগার এখন কমে গেছে। আমরা স্পট অথবা ঘণ্টা চুক্তিতে টাকা নেই। কিন্তু রাজবন বিহারে ঢোকা নিষেধ আর রাজার বাড়ি তো নেই। এতে আমাদের আয় কমে গেছে।
 
এমন কি ঝুলন্ত সেতু সংলগ্ন পার্কটিও পড়ে রয়েছে চরম অবেহেলায়। নতুন কোনো রাইড নেই। যেগুলো ছিলো সেগুলোও নষ্ট, ভাঙা। গরু, ছাগল চরে পার্কে। আর কখনো  যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এটা করা হয় না সেটিও স্পষ্ট।
 
পার্কের একপাশে রয়েছে ছোট একটি আদিবাসী অস্থায়ী মার্কেট। এছাড়া পার্কে বসে বিভিন্ন খাবার বিক্রিও করেন কেউ কেউ। একইসঙ্গে বোটম্যান ও এসব বিক্রেতার জোর দাবি পার্কটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারলে সবাই ভালো থাকবে।

** রাঙামাটিতে বোটভাড়া নিয়ে ঠকবেন না যদি…
**বিকেলটা কাটুক হেরিটেজ পার্কে
**দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বুদ্ধমূর্তির দেশে
**পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সব খাবার ‘সিস্টেমে’
**বাঁশের ভেতর মুরগি, পদের নাম ব্যাম্বো চিকেন
**পাহাড়ের সবুজ মাল্টায় দেশজুড়ে বিপ্লব

 
বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১৬
এএ/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ