ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

চিনে খান খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
চিনে খান খুলনার বিখ্যাত চুইঝাল চুইঝাল। ছবি: আসিফ আজিজ - বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চুইঝাল ছাড়া দিন চলে না খুলনাবাসীর। খাবারের মেন্যুতে কোনো না কোনো ভাবে চুই থাকা চাই। আমাদের দেশে ঝাল স্বাদের মশলাজাতীয় এ খাবারটির উৎপত্তি বাগেরহাটে বলে মনে করা হয়।

খুলনা থেকে: চুইঝাল ছাড়া দিন চলে না খুলনাবাসীর। খাবারের মেন্যুতে কোনো না কোনোভাবে চুই থাকা চাই।

আমাদের দেশে ঝাল স্বাদের মশলাজাতীয় এ খাবারটির উৎপত্তি বাগেরহাটে বলে মনে করা হয়। তবে খুলনা অঞ্চলে এটি জনপ্রিয়তা লাভ করেছ বেশি। ক্রমে এর গুণ ও সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

তবে সব চুই কিন্তু এক নয়। এরও জাত রয়েছে। সে অনুযায়ী নির্ভর করে এর দাম, স্বাদ, গন্ধ। ভারত থেকেও কিছু চুই আসে। কিন্তু কোনটা আসল খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের চুই, তা বোঝার কয়েকটি উপায় বাতলে দিলেন খুলনার ফুলতলা বাজারের তরুণ চুই বিক্রেতা সৈয়দ সোহাগ।
ফুলতলা বাজারের তরুণ চুই বিক্রেতা সৈয়দ সোহাগ
ফুলতলা বাজারে তার সঙ্গে দেখা। নিজে সম্প্রতি তার চাচার বাগান থেকে তিন হাজার টাকায় গাছ কিনে টুকরো টুকরো করে কেটে সাজিয়ে বসেছেন বিক্রি করতে। ওজন হয়েছে ১১ কেজি। বিক্রির অবশিষ্ট নেই বেশি। আপাতত রংপুর কিংবা পাহাড়ি চুই নেই তার কাছে। যদিও এই দুই জায়গার চুই দিয়েই মিটছে চাহিদা।
 
কীভাবে রান্না করা হয়, কোনগুলোর স্বাদ বেশি- এসব প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, বাজারে আপনি যে চুই দেখবেন তা কিন্তু সব এ অঞ্চলের নয়। এদিকে সেভাবে বাণিজ্যিক চাষ হয় না। যার যার বাড়িতে যা কিছু লাগায় তা অনেকদিন হলে বিক্রি করে দেয়। এমন ঘটে বেশি। দেশের মধ্যে বেশি চাষ হয় রংপুর, সিলেট ও চট্টগ্রামের পাহাড়ে। তবে স্বাদ বেশি খুলনা-বাগেরহাটের চুইঝালের।
 
বাংলানিউজে রিপোর্ট হবে শুনে তিনি বলেন, তাহলে চলেন আপনাদের সব ধরনের চুই চিনিয়ে দেই। তাহলে কেউ আর কম দামেরটা বেশি দামে কিনে ঠকবেন না।
 
বলেই একটু এগিয়ে নিয়ে গেলেন মো. সাদ হোসেনের দোকানে। দু’টি মোটা আকারের চুই ডাল হাতে নিয়ে দেখিয়ে দেন পার্থক্য।
খুলনা অঞ্চলের মাঝারি আকৃতির চুই
যে চুইয়ের শরীরে বেশি শিকড় থাকবে সেটি খুলনা-বাগেরহাট অঞ্চলের। শিকড়গুলো হবে আবার একটু চিকন। রান্না হবে খুব কম সময়ে আর সহজে গলে যাবে। স্বাদ ও ঝাঁঝ হবে লোভনীয়। গোড়ার যে অংশটুকু মাটির নিচে থাকে এর স্বাদ আবার বেশি। নরমও হয় দ্রুত। সরু, মাঝারি ও মোটা- সবগুলোতেই শিকড় বেশি থাকবে। এক গিরা থেকে আরেক গিরার ফাঁকও হবে ছোট। দাম মোটামুটি ভালো মানের কেজিপ্রতি ছয় থেকে ১২শ টাকা।
এক গিরা থেকে আরেক গিরার মাঝের ফাঁক বেশি রংপুর অঞ্চলের  চুই
রংপুরের চুইয়ে বাজার ভরা। রংপুর থেকে যে চুই আসে তাতে শিকড় থাকে কম। আবার শিকড়গুলো একটু মোটা হয় বেশি। তুলনামূলক শক্ত ও স্বাদ-গন্ধ কম হয়। দাম কেজিপ্রতি ৩শ-৪শ টাকা হলেই পাওয়া যায়।
পাহাড়ের শিকড়হীন মোটা চুই
আরেক ধরনের চুই আসে পাহাড় থেকে। পাহাড়ি চুইয়ের শিকড় থাকে না বললেই চলে। লম্বা ও অনেক মোটা হলেও তুলনামূলক শক্ত। সিদ্ধ হতে দেরি হয়। নরম না হলে খেতে মজাও লাগে না। দাম দেড় থেকে ২শ টাকা কেজি।
 
ব্যবসায়ী সাদও একমত সোহাগের সঙ্গে। তারা দু’জনই বলেন, চুই যদি কেউ না চেনে তাহলে ঠকার সম্ভাবনা থাকে। ২শ টাকার চুই অনেক সময় ৮শ টাকা দিয়ে কেনেন ক্রেতারা। কিন্তু এ বিষয়গুলো যদি কেনার আগে কেউ মাথায় রাখেন তাহলে কেউ ঠকবেন না। একইসঙ্গে স্বাদও পাবেন যেমন চান।
বিভিন্ন আকার-দামের চুই নিয়ে বসে আছেন ব্যবসায়ী
খুলনার প্রায় সব বাজার-ফুটপাতে চুই বিক্রি হয়। বাইরে থেকে পর্যটকরা এসেও খোঁজেন বিখ্যাত চুই। তবে সবাই মাংসের সঙ্গে চুই দিয়ে রান্না করা হয় বলেই জানেন। কিন্তু এ ধারণা ভুল। তরকারি, সবজির সঙ্গেও খাওয়া হয়। আর এর রয়েছে দারুণ কার্যকরী সব ওষুধি গুণ। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পরবর্তী প্রতিবেদনে। তাতে থাকছে চুইয়ের বিপণন, সংরক্ষণ, চাষ পদ্ধতি নিয়ে নানান তথ্য।
 
সহযোগিতায়

বাংলাদেশ সময়: ০৩২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এএ/এইচএ/এসএনএস

আরও পড়ুন

** ষাটগম্বুজ মসজিদে কত গম্বুজ!
**ট্যাংরা-পারসের ছটফটানি বাগেরহাট বাজারে (ভিডিও)​
**‘উলুঘ খানের’ ঘোড়া দীঘি টানছে পর্যটক (ভিডিও)​
** বাগেরহাটের মিনি কুয়েত!
** পরিযায়ী পাখি যাচ্ছে পর্যটক-ব্যবসায়ীর পেটে

** সুন্দরে এতো হিংসে কেন!

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ