ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

নান্দনিক নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্যে অনন্য যেই মসজিদ

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৩
নান্দনিক নির্মাণশৈলী আর স্থাপত্যে অনন্য যেই মসজিদ

রাজশাহী: সুনিপুণ কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।  যেই মসজিদের সৌন্দর্য আজও সেখানে টেনে নিয়ে যায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ও পর্যটকদের।

এর মুগ্ধতা ছড়িয়েছে পুরো ক্যাম্পাসেই। রাজশাহীতে যে কয়েকটি ইসলামী স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম একটি।

রাবির মূল ফটক দিয়ে ঢুকলেই চোখে পড়বে সুউচ্চ প্রশাসনিক ভবন। এর ডান দিকে সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়বে মুসলিম স্থাপত্যের আদলে নির্মাণ করা সুউচ্চ মিনার। আর এই মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে চতুর্দিকে স্থাপন করা হয়েছে লাইট পোস্ট। নির্মারণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনাও। সব থেকে আকর্ষণীয় দিক হলো সুবিশাল অভ্যন্তরীণ এই মসজিদের জায়গায় নেই কোনো পিলার। মূল কাঠামোর মধ্যবর্তীস্থানে ওপরের দিকে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালাকার গম্বুজ। এটিই হচ্ছে রাবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।

অসাধারণ নির্মাণশৈলী ও নান্দনিকতায় রাজশাহীতে অনন্য এই মসজিদ। যেটি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য-শোভাকে বাড়িয়ে সূচনা করেছে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রায় তিন একর জায়গায় এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর মূল কাঠামোর দৈর্ঘ্য ৫২ গজ ও প্রস্থ ৫২ গজ। তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের নকশা প্রণেতা ‘থারিয়ানির’ নকশার আলোকে এর নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৭৪ সালের মার্চ মাসে। রাবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় তৎকালীন তিন লাখ ৭৪ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই কাজ শেষ করতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় আট লাখ টাকা।

মসজিদের বারান্দা ও বারান্দার বাইরের যে অংশ রয়েছে তা মূল কাঠামোর প্রায় দ্বিগুণ। মূল ভবনের অভ্যন্তরে মুসল্লি ধারণক্ষমতা প্রায় ৫শ। তবে বাইরের ফাঁকা জায়গাসহ এই মসজিদে প্রায় আড়াই হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।

মসজিদের আঙ্গিনাকে মূল ক্যাম্পাস থেকে পৃথক ও পবিত্রতা রক্ষার জন্য চারপাশে আছে দেয়াল। আঙ্গিনাজুড়ে রয়েছে সারিবদ্ধ ঝাউ গাছ। দক্ষিণ পাশে ফোয়ারা, ওজুখানা, অফিস রুম ও শৌচাগার। দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে রয়েছে পেশ ইমামের বাংলো। এছাড়া রয়েছে হরেক রকমের ফলের গাছ ও ঈদগাহ। শ্বেত-শুভ্র ঝাড়বাতিগুলো এতই মনোরম যে নির্মাণের প্রতিটি স্তরের সাথেই তা একবারে মিশে গেছে।

মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতা ইমাম ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মাওলানা জামাল উদ্দিন। এখন পেশ ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন- মাওলানা ফাহিম মাহমুদ।

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মসজিদ পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। প্রতি দুই বছর পরপর এই কমিটি গঠন করা হয়। মসজিদের একজন সিনিয়র পেশ ইমাম ও একজন মুয়াজ্জিন আছেন। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের তত্ত্বাবধায়নের জন্য দুই সহকারী রেজিস্ট্রার ও একজন সেকশন অফিসার রয়েছেন।

মসজিদের ওযুখানার পাশেই রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার। পাঠাগারটি মুসল্লিদের জন্য আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত খোলা থাকে। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষার সময় ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা হয় এই মসজিদ। কোথাও থাকার জায়গা না পেলেও এখানকার মসজিদের বারান্দায় ও ভেতরে অবস্থান নেয় দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভর্তিইচ্ছুরা।

মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা ফাহিম মাহমুদ জানান, রাবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, গোরস্থান মসজিদ, ছেলেদের আবাসিক হলে ১১টি মসজিদ, কাজলা ফটকে একটি ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিসহ ক্যাম্পাসে আরও বেশ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদে দুই ঈদ ও বিশেষ ধর্মীয় দিন বা উৎসবগুলোতে মুসল্লিদের প্রচুর ভিড় হয়। আর রমজান মাসে বাইরে থেকেও প্রচুর মানুষ এখানে নামাজ আদায় করতে আসেন। জুমার দিনেও মসজিদে মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড় হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৩
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।