প্রত্যেক নর-নারীর ওপর কোরআনে কারিম এতটুকু সহিহ-শুদ্ধ করে পড়া ফরজে আইন যার দ্বারা অর্থ পরিবর্তন হয় না। অর্থ পরিবর্তন হয় এমন ভুল পড়ার দ্বারা নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
হজরত আলী (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা প্রত্যেকেই এমনভাবে কোরআন পড়, যেভাবে তোমাদেরকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। -ফাজায়েলুল কোরআন, ইমাম ক্বাসেম ইবনে সাল্লাম: পৃ: ৩৬১
অর্থাৎ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে যেভাবে কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন এবং পরবর্তী উম্মতকে সাহাবারা যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেই পরম্পরায় যেভাবে শুদ্ধভাবে কোরআন পড়ার রীতি চলে আসছে, সেভাবে কোরআন পড়তে হবে। অর্থাৎ প্রত্যেক হরফ স্বীয় মাখরাজ থেকে সিফাতে লাজেমাসহ উচ্চারণকরতঃ মদ-গুন্নাহ আদায় করে পড়তে হবে।
সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত শিক্ষা করার ফজিলত
হজরত উসমান (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ওই ব্যক্তি, যে কোরআন শিক্ষা গ্রহণ করে ও কোরআন শিক্ষা দেয়। -সুনানে আবু দাঊদ, হাদিস: ১৪৫২
হজরত আয়েশা (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) ইরশাদ করেন, যারা সহিহ-শুদ্ধভাবে কোরআন তেলাওয়াত করে, তারা নেককার সম্মানিত ফেরেশতাগণের সমতুল্য মর্যাদা পাবে এবং যারা কষ্ট সত্ত্বেও কোরআন সহিহ-শুদ্ধভাবে পড়ার চেষ্টা ও মেহনত চালিয়ে যায়; তাদের জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব। -সুনানে আবু দাঊদ, হাদিস: ১৪৫৪
সুন্দর কন্ঠে কোরআন শরিফ পড়া
কোরআন শরিফ সুন্দর কন্ঠে পড়া প্রশংসনীয়। হাদিস শরিফে সুন্দর কন্ঠে পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে। হজরত বারা ইবনে আযেব (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা সুললিত কন্ঠে কোরআন শরিফ পড়, কেননা তা কোরআনের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়। -শোয়াবুল ঈমান, হাদিস: ২১৪১
তবে গানের সুরে কোরআন তেলাওয়াত নয়। এটা বরং কোরআন অবমাননার শামিল হওয়ায় তা বর্জনীয়। এমনকি গানের সুরে পড়তে গিয়ে হরফ কমবেশি হলে বা এক হরফের স্থলে অন্য হরফ আদায় করা হলে লাহনে জলি হবে এবং এতে অর্থ বিগড়ে গেলে নামাজ ভেঙে যাবে। -রদ্দুল মুহতার: ১/৬৩৩
হজরত হুযাইফা (রা.) বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, তোমরা কোরআনকে আরবি সুর ও লাহানে পড়, ফাসেক ও পাপাচারীদের সুরে পড়ো না। শীঘ্রই এমন এক দল বের হবে যারা গান ও বিরহের সুরে কোরআন পড়বে, অথচ তা তাদের গলা অতিক্রম করবে না, তারা খুবই রুগ্নআত্মা হবে। -আল মুজামুল আওসাত, তাবরানি, হাদিস: ৭২২৩
বাংলা উচ্চারণ দেখে কোরআন পড়া নাজায়েয
বর্তমানে অনেক লোককে দেখা যায়, তারা বাংলা উচ্চারণ দেখে কোরআন পাঠ করে থাকেন, অথচ আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় কোরআন পাকের সঠিক উচ্চারণ অসম্ভব, তাই কোরআন পাককে অন্য ভাষায় লেখা বা পড়া উলামায়ে কেরামের ঐক্যমতে নাজায়েয। এতে কোরআনের শব্দ ও অর্থ বিকৃত হয়ে যায়, যা সম্পূর্ণ হারাম। -আল ইতক্বান, পৃ: ৮৩০, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১/৪৩
কোরআন শরিফ না বুঝে পড়লেও সওয়াব হয়
অনেক লোককে দেখা যায়, তারা কোরআন শুদ্ধ করার চেয়েও কোরআনের অর্থ বুঝতে বেশি আগ্রহী, অর্থ বুঝা যদিও একটি জরুরি কাজ, কিন্তু সর্বাগ্রে জরুরি হলো কোরআন তেলাওয়াত সহিহ-শুদ্ধ করা। এটি ফরজে আইন, এর ওপর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার ভিত্তি। আবার অনেকে বলে থাকে, কোরআন শরিফ না বুঝে পড়লে কোনো লাভ নেই, এটি একটি ভিত্তিহীন কথা। কেননা কোরআন শরিফ পড়লেই সওয়াব অর্থ বুঝে হোক বা না বুঝেই হোক।
হজরত উসমান (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পড়বে সে একটি নেকি পাবে, আর প্রতিটি নেকিতে দশ গুণ করে বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে। -সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২৯১০
নামাজে অশুদ্ধ কেরাত পড়া
নামাজের কেরাতে বিপরীত অর্থ হয়ে যায়, এমন ভুল পড়লে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে, চাই তা তিন আয়াত পরিমাণের ভিতর হোক বা পরে হোক সর্বাবস্থায় একই হুকুম। পক্ষান্তরে সাধারণ ভুল যার দ্বারা অর্থ একেবারে বিগড়ে না যায়, নামাজ নষ্ট হবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া: ১/১১৮, ফাতাওয়া কাজিখান: ১/৬৭
তবে সূরা-কেরাত ও নামাজের তাসবিহ ইত্যাদি শুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ছেড়ে দেওয়ার অনুমতি নাই। সূরা-কেরাতও শুদ্ধ করতে থাকবে এবং নামাজও আদায় করতে থাকবে, কিন্তু এ ধরণের লোকেরা শুদ্ধ পাঠকারী ব্যক্তির ইমামতি করবে না। -হিদায়া: ১/৫৮, জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৩৩৯
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
এমএইউ/