ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ও ভা‍লোবাসা নিবিড় হয়

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
ইতিকাফের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ও ভা‍লোবাসা নিবিড় হয়

মহিমান্বিত মাস রমজানে ইতিকাফ এক অনন্য ইবাদত। আর রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সর্বোত্তম মাধ্যম এই ইতিকাফ।

ইতিকাফের লক্ষ্য আছে, বিধান আছে এবং আছে গুরুত্বপূর্ণ দর্শন চেতনাও। ইতিকাফের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে- কোনো জিনিসকে আঁকড়ে ধরা এবং এর সঙ্গে নিজ সত্তা ও আত্মাকে নিবিষ্ট রাখা। আর পারিবারিক অর্থ হচ্ছে- প্রভু আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে বান্দার বসবাস ও অবস্থান। অন্য সময়ও ইতিকাফ জায়েজ, তবে  রমজান মাসের ইতিকাফ উত্তম।

ইতিকাফ এমন এক বৈধ নির্জনতা যেখানে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত, জিকির ও আনুগত্যের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পবিত্র করে এবং ব্যক্তিসত্তাকে একান্তভাবে আল্লাহর প্রকৃত বান্দায় রূপান্তরিত করে। ইতিকাফের সময় বান্দা মসজিদের পবিত্র অঙ্গনে নিজেকে ব্যস্ত রাখে নামাজ, রোজা, কোরআন তেলাওয়াত, ইসলামি জ্ঞানচর্চা ও গবেষণায়। নিজেকে প্রকৃত বান্দা হিসেবে পরিগঠনের লক্ষ্যে মানুষ দুনিয়ার সব কাজ ও ব্যস্ততা থেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দূরে থাকে ইতিকাফের সময়।

আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথে দুনিয়াবী চিন্তা ও কাজ যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেটাই ইতিকাফের একটি গুরুত্বপূর্ণ চেতনা। তবে ইতিকাফ কিন্তু বৈরাগ্যবাদ নয়, বরং নিজেকে প্রকৃত বান্দা হিসেবে তৈরি করে দুনিয়ার জীবনে উন্নত নৈতিকতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের এক অনন্য মাধ্যম।

আমরা জানি, মানুষ আল্লাহর প্রিয় সৃষ্টি এবং এই সৃষ্টির মধ্যে রয়েছে আশরাফুল মাখলুকাত হওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এ পথে প্রধান বাঁধা শয়তান এবং মানুষের অন্তর্গত প্রবৃত্তির তাড়না। এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায়  রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করতে পারে। আল্লাহর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যত গভীর হবে জীবন হবে ততই সফল। ইতিকাফের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লামা হাফেজ ইবনে রজব বলেছেন, ‘ইতিকাফের উদ্দেশ্য হলো, সৃষ্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং স্রষ্টার সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর সঙ্গে পরিচয় যত গভীর হবে, সম্পর্ক ও ভা‍লোবাসা ততো নিবিড় হবে এবং তা বান্দাকে পুরোপুরি আল্লাহর কাছে নিয়ে যাবে। ’

ইতিকাফের এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে বান্দা সচেতন থাকলে এবং অন্তরের গভীরে ইতিকাফের চেতনাকে লালনে সমর্থ হলে সীমিত সময়ের এই ইতিকাফ বান্দার বাকি জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। স্রষ্টার সঙ্গে মানুষের যখন পরিচয় ঘটবে এবং সম্পর্ক গভীর হবে, তখন মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টিকেও ভালোবাসতে সক্ষম হবে। বর্তমান সময়ে আমরা পৃথিবীতে, সমাজে, পরিবারে যে অন্যায়-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন, শঠতা, নিষ্ঠুরতা লক্ষ্য করছি তা দূর করার ক্ষেত্রে ইতিকাফ সমৃদ্ধ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

ইতিকাফের ফজিলত অনেক। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে একদিন ইতিকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও দোজখের মধ্যে তিন খন্দক দূরত্ব সৃষ্টি করেন। ’ রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করে তা দুই হজ ও দুই ওমরার সওয়াবের সমান। ’ ইতিকাফ একটি সুন্নত ইবাদত। কিন্তু ইতিকাফের মান্নত করলে তা পালন করা ওয়াজিব হয়ে যায়। রমজান ছাড়াও যে কোনো সময় মসজিদে ইতিকাফ করা যায়। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার ঘরকে তওয়াফ ও ইতিকাফকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। ’

রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ইন্তিকালের বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন। তার এই উদাহরণ মুসলমানদের ইতিকাফে অনুপ্রাণিত করে থাকে। তবে শুদ্ধভাবে ইতিকাফ করার জন্য কিছু জ্ঞান আমাদের অর্জন করতে হবে। যেমন ইতিকাফের শর্ত কি, ইতিকাফের মুস্তাহাব বিষয়, ইতিকাফে যা জায়েজ, ইতিকাফের মাকরূহ বিষয় এবং নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কেও জেনে নিতে হবে। কারণ ইবাদত সঠিক ও শুদ্ধভাবে সম্পন্ন হলেই তা আল্লাহর কাছে গ্রহণীয় হতে পারে। আর এ জন্য জ্ঞান অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।