ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানের পেছনে রয়েছে সুগভীর দর্শন। ইসলামের কোনো বিধানই অযৌক্তিক ও অনর্থক নয়।
সম্পদে আল্লাহর একক মালিকানা প্রতিষ্ঠা: দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহতায়ালার। আসমান-জমিন, গাছপালা, তরুলতা, পাহাড়-সাগর, নদনদী, বনজঙ্গল, পশু-প্রাণী, জলভাগ, স্থলভাগ, টাকাপয়সা, রাজত্ব, কর্তৃত্ব, ব্যবসা-বাণিজ্য- এককথায় গোটা দুনিয়ার সবকিছুর একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহতায়ালা। কেননা তিনিই সব সৃষ্টি করেছেন। যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, তারই সবকিছু। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আসমান ও জমিনের মধ্যে যা কিছু আছে, সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর। ’ -সূরা বাকারা: ২৮৪
মানুষকে আল্লাহতায়ালা সাময়িক সময়ের জন্য রাজত্ব কিংবা সম্পদের মালিক করেন, কিন্তু সে কখনোই এগুলোর স্থায়ী মালিক হতে পারে না। সে এগুলোর আমানতদার, বহনকারী হয় মাত্র। বর্তমানে আমরা যে সম্পদের অধিকারী হয়েছি, এগুলোর কেউ না কেউ অতীত কালে মালিক ছিল। একসময় আমরা মারা গেলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এগুলোর মালিক হবে। জাকাতের বিধানের মাধ্যমে পুরোপুরি স্পষ্ট হয়, সম্পদে আল্লাহর একক মালিকানা।
সম্পদ ব্যয়ের নীতিমালা: দুনিয়ার সব অর্থসম্পদ আল্লাহর হলেও তিনি এই সম্পদকে আবার কিয়ামত অবধি বিভিন্ন জনকে ভোগ ও বণ্টনের জন্য প্রদান করে থাকেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বান্দা আল্লাহর নির্দেশিত পথে এই মাল ব্যয় করে কিনা তা যাচাই করা। মানুষ যেহেতু আজন্ম সম্পদপ্রিয়, তাই আল্লাহতায়ালা একটি সীমারেখা টেনে দিয়েছেন যে, এই পরিমাণ সম্পদ হলে তুমি ধনী হিসেবে পরিগণিত হবে। আবার ধনী হলে ধনের নির্দিষ্ট অংশ তোমাকে আল্লাহর নির্দেশিত পথে ব্যয় করতে হবে, যাতে বিনা বাধায় তুমি সম্পদের মালিক হতে হতে সারা দুনিয়ার সম্পদ গ্রাস করার লোভ না কর। জাকাত আবশ্যকীয় করার এটাও একটি দার্শনিক ভিত্তি।
ধনী-গরিবের পার্থক্য: আল্লাহ যদি সবাইকে সমান যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করতেন, তাহলে এই সমাজব্যবস্থা ভেঙে পড়ত। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দুনিয়ার সবাই যদি রাজা হতো তাহলে কে তাদের খাবার প্রস্তুত করে দিত? কে তাদের চাকর হতো? সবাই রাজা হওয়ার কারণে কেউ কারও ফরমায়েশ শুনতে চাইত না। এ কারণে সভ্যতার এই উন্নতি ও বিকাশ ঘটত না। হাজার হাজার কর্মসংস্থান ও কর্ম সৃষ্টি হতো না। মানুষগুলো সব নিষ্কর্মা হয়ে অকালে অনাহারে মারা যেত। আল্লাহতায়ালা ধনী-গরিব সৃষ্টি করে একে অপরের ওপর দায়িত্ব বাতলিয়ে দিলেন।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: অর্থনীতিতে একটি কথা আছে, সম্পদের যত ব্যবহার বাড়বে, সম্পদ তত বাড়বে। আর সম্পদ যদি ঘরে অলস পড়ে থাকে, তাহলে তা মূল্যহীন হয়ে পড়বে। জাকাত মানুষকে ধন-সম্পদ ব্যবসায় খাটাতে উৎসাহ জোগায়। কেননা সে যখন বোঝে, আমি যদি আমার সম্পদকে ব্যবসায় না খাটাই, তাহলে প্রত্যেক বছর মালের জাকাত দিতে দিতে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। অতএব আমাকে মাল ব্যবসায় খাটাতে হবে। সেখানে যে প্রবৃদ্ধি ঘটবে সেখান থেকে আমি প্রতিবছর জাকাত প্রদান করব।
দারিদ্র্য বিমোচন: সমাজের বিশাল অংশকে দারিদ্র্যের মধ্যে নিমজ্জিত রেখে দেশের সমৃদ্ধি সম্ভব নয়। জাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে সমাজ থেকে দরিদ্রতাকে উচ্ছেদ করা। সচ্ছলদের মধ্যে জাকাত বণ্টনের কোনো সুযোগ নেই। জাকাত বণ্টনের যে খাতগুলো কোরআন-হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সে অনুযায়ী বণ্টন করতে পারলে সমাজ থেকে অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে। সবার মধ্যে সচ্ছলতা ফিরে আসবে।
ইসলামের প্রত্যেকটি বিধানের পেছনে এভাবে অসংখ্য হিকমাত রয়েছে, যার উদ্দেশ্যই হচ্ছে, আল্লাহর জমিনে মানুষগুলো যাতে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করতে পারে। যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না, থাকবে শুধু অনাবিল শান্তি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৬ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১৬
এমএইউ/