ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজকের তারাবিতে ওয়ারিশ ঠকানোর নিন্দা করা হবে

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৬
আজকের তারাবিতে ওয়ারিশ ঠকানোর নিন্দা করা হবে

দেশের লাখ লাখ মসজিদে আজ তারাবির নামাজে কোরআন খতমের মাধ্যমে কোরআনের ধারাবাহিক তেলাওয়াত শেষ হবে। সে হিসেবে আজ অনুষ্ঠিত হবে চলতি রমজানের শেষ খতমে তারাবি।

আজকের তারাবিতে ওয়ারিশ ঠকানোর মতো নিন্দনীয় কাজকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়ে এ থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকার নির্দেশ প্রদান করা হবে।

আজকের তারাবিতে হাফেজ সাহেবরা আল্লাহর ভাষায় পাঠ করবেন, ‘তোমরা ওয়ারিশদের প্রাপ্য অংশ খেয়ে ফেল ... এটা কখনোই সংগত নয়। ’

কেউ মারা গেলে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে কে কতটুকু অংশ পাবে স্বয়ং আল্লাহ তা সুনির্দিষ্ট করে কোরআনে বলে দিয়েছেন। মৃতের সম্পদের এ বণ্টন আমাদের ধর্মের অপরিবর্তনীয় অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহর দেওয়া ফরমান মতে কেউ যদি সম্পদ ভাগ না করে; তবে তার অর্থ হবে সে আল্লাহর কৃত ভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করল। আল্লাহর ভাগের ওপর সে অসন্তুষ্ট। সে তার কাজের দ্বারা আল্লাহকে জালেম দাবি করছে, আল্লাহর ভাগকে ভুল দাবি করছে। তাই মহান আল্লাহ সূরা নিসায় মৃতের পরিত্যক্ত সম্পদ ওয়ারিশদের মধ্যে ভাগ করার পর স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন, ‘এ হলো আল্লাহর সীমানা। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে মানবে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যার তলদেশে থাকবে প্রবাহিত নদী। সেখানে সে থাকবে চিরস্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্য হবে, তার নির্ধারিত সীমা লংঘন করবে তিনি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে। সেখানে তার জন্য থাকবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। ’ -সূরা নিসা: ১৩-১৪

মৃতের সম্পদ বণ্টনে প্রচলিত কয়েকটি ভুল
১.
স্বামীর মারা যাওয়ার পর স্ত্রী যদি বাবার বাড়ি ফিরে যায় অথবা অন্যত্র বিয়ে বসে তাহলে তাকে স্বামীর সম্পদের ভাগ দেওয়া হয় না। অথবা বৃহৎ অংশ থেকে বঞ্চিত করা হয়। এটা বড় জুলুম। আল্লাহ স্ত্রীকে স্বামীর সম্পদ থেকে অংশ দিয়েছেন কোনো শর্ত ছাড়া। তাই সে পরবর্তীতে যা-ই করুক তাকে স্বামীর সম্পদের ভাগ পূর্ণ ভাগ দিতে হবে।

২. পিতার মৃত্যুর পর বোনকে অংশ না দিয়ে বা প্রাপ্য পরিমাণ থেকে সামান্য দিয়ে মাফ চাওয়া হয়। এ মাফ দু’কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। যথা-

ক. মাফ চেয়ে বোনকে পিতার অংশ না দেওয়ার দ্বারা হিন্দু রীতির অনুসরণ করা হয়। হিন্দু রীতিতে বিয়ের পর পিতার সম্পদে মেয়ের কোনো অধিকার থাকে না। আর কোনো মুসলমানের জন্য অন্য ধর্মাবলম্বীদেরঅনুসরণ জায়েজ নেই।

খ. বোনেরা সাধারণত মন থেকে মাফ করে না। বরং সামাজিক সমালোচনার ভয়ে বা ভাইদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে মুখে মুখে মাফ করে দেয়। কারো সম্পদ তার সানন্দনুমতি ব্যতীত অপরের জন্য কখনো হালাল হয় না।

৩. সাধারণত জমি, মূল্যবান গহনা, অর্থ ভাগ করা হয়। কিন্তু ফার্নিচার, ব্যবহারের সামগ্রী, তৈজসপত্র ইত্যাদি ভাগ করা হয় না। এগুলো হয়তো মৃতের নামে দান করা হয় অথবা যার কাছে থাকে সে রেখে দেয় অথবা স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। এমনটিও গর্হিত অন্যায় কাজ। মৃতব্যক্তির মালিকানাধীন সবকিছু ভাগ করতে হবে। যে বস্তু অক্ষত রেখে ভাগ করা যায় না, ভাগ করলে তা থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয় সে বস্তুর মূল্য ধরে কারো কাছে বিক্রি করে সে মূল্য সকল ওয়ারিশদের মাঝে অংশ অনুপাতে ভাগ করতে হবে।

৪. মৃতের সম্পদ থেকে কুলখানি করা হয়, মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়, তিনদিনা, সাতদিনা, চল্লিশদিনা ইত্যাদি করা হয়। মৃতের ঋণ পরিশোধ করার পর তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পদ তার ওয়ারিশদের মাঝে ভাগ করতে হবে। ভাগ পূর্ব অন্য কিছু করার সুযোগ নেই। তদুপরি কুলখানি, চেহলাম, তিনদিনা, সাতদিনা, চল্লিশা ইত্যাদির বিষয়ে ইসলাম সমর্থন দেয় না। ইসলামে এ ধরণের আয়োজনের কোনো অনুমতি নে। তাই তা পরিত্যাজ্য।

৫. অনেক ছেলেরা পিতার সম্পদ নিজেরাই ভাগ করে নেয়। মাকে তার অংশ বুঝিয়ে দেয় না। মনে করে মায়ের সব দায়িত্ব আমরা পালন করব। তাই মাকে আর আলাদা করে অংশ দেওয়ার প্রয়োজন নাই। এটাও ভুল। ছেলে সন্তান অবশ্যই পিতার অবর্তমানে মায়ের দায়িত্ব নেবে। তাই বলে মাকে তার স্বামীর অংশ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। মায়ের অংশ তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

৬. অনেকেই মেয়েকে সম্পদ না দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে জীবিত থাকতেই ছেলেকে পূর্ণ বা আংশিক সম্পদ লিখে দেয়। আবার অনেকেই ছেলেসন্তান না থাকলে ভাই-ভাতিজাকে সম্পদের ভাগ না দেওয়ার উদ্দেশ্যে মেয়ের নামে সম্পদ লিখে দেয়। অনেকেই দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঠকানোর উদ্দেশ্যে প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের  সম্পদ লিখে দেয়। অথবা প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের ঠকানোর উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় স্ত্রীকে সম্পদ লিখে দেয়। এভাবে আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ থেকে কাউকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা কুফরি কাজ। বর্ণিত বিষয়ে প্রত্যেক মুসলমানের সতর্কতা কাম্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৪ ঘন্টা, জুলাই ০২, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।